আর্নল্ড পামারের গল্প
বসন্তের ছুটি শুরু হয়েছে অরলান্ডোতে। শীতের ছোঁয়া শেষ হয়নি এখনো। সকালে শীতের আমেজ দিয়েই দিনের শুরু।
আমি অরল্যান্ডোর যে শহরতলীতে থাকি তার নাম ‘বে হিল’। এ এলাকার চারপাশে লেকের ছড়াছড়ি। এর মাঝেই বিখ্যাত ‘বে হিল গলফ কোর্স’। খানিকটা পাহাড়ি অসমতল এলাকাতে চিরসবুজ পাইন- ওক- সাইপ্রাসের ছড়াছড়ি। তার পাশঘেঁষে লেকগুলো।
ছবি : নাবিহা ও সিলভী
আকাশের নীলকে বুকে ধারণ করে রাখে তারা। সাইপ্রাসের সবচে উঁচু ডালে অস্প্রি ঈগল বসে থাকে নির্ভয়ে। আমি গলফের পাগল নই। তারপরও বসবাসের জন্য ‘বে হিল’ বেছে নিয়েছি কেবল অসামান্য প্রকৃতিকে উপভোগ করবার জন্য। এমনটি করেছিলেন আর্নল্ড পামার প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে।
আর্নল্ড পামার হলেন গলফের রাজপুত্র, রাজা সবই। জন্মেছিলেন ফিলাদেলফিয়ার ছোট একটি শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা সে শহরের গলফ কোর্সে কাজ করতেন। সে থেকেই তাঁর গলফে হাতেখড়ি। সে সময় গলফ ছিল কেবল বিত্তবানদের খেলা।
ছবি : নাবিহা ও সিলভী
পামার সাহেব তাঁর অসাধারণ মেধা, পরিশীলিত ব্যবহার, মানবিক গুণ দিয়ে জিতে নেন সব মানুষের মন, দেশ বিদেশের বড় বড় সব টুর্নামেন্টের ট্রফি। হয়ে যান একজন জীবন্ত কিংবদন্তী। তিনি অরলান্ডোকে বেছে নেন তাঁর প্রিয় শহর হিসেবে। ‘বে হিলে’ তৈরি করেন তাঁর সেরা গলফ কোর্স। সে কোর্সের চারদিকে তৈরি চমৎকার সব বাড়ি। তার একটিকে তিনি বেছে নেন। আরও অনেক বরেণ্য খেলোয়াড় তার সান্নিধ্য পাবার জন্য এখানে তাদের বাড়ি তৈরি করে নেন। পৃথিবীর প্রায় সব কটি উপমহাদেশে তিনি তৈরি করেছেন অনেক গলফ কোর্স।
ছবি : নাবিহা ও সিলভী
খেলাটিকে জনপ্রিয় করেছেন। মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্তের মানুষরাও আজ এখানে গলফ খেলতে পারে। তাঁর প্রায় পঞ্চাশ বছরের স্ত্রী, উইনি যখন দুরারোগ্য কান্সারে মারা গেলেন তখন তিনি অনুভব করলেন যে অরলান্ডোতে মহিলাদের জন্য, শিশুদের জন্য আলাদা হাসপাতাল দরকার।
তিনি তখন তৈরি করলেন 'উইনি পামার মহিলা হাসপাতাল' আর ' আর্নল্ড ও উইনি পামার শিশু হাসপাতাল'। তিনি তৈরি করলেন ' আর্নল্ড আর্মি', যাদের কাজ হোল এ ধরনের ভাল কাজে তাঁকে সাহায্য করা। সারা জীবন তিনি কাটিয়েছেন এসব অসাধারণ কাজ করে। দু বছর আগে তিনি চলে গেছেন পরলোকে।
ছবি : নাবিহা ও সিলভী
গত তিরিশ বছর ধরে অরলান্ডোর একটি প্রধান আকর্ষণ হোল ' আর্নল্ড পামার পি জি এ টুর্নামেন্ট'। সারা দুনিয়ার সেরা গলফ খেলোয়াড়রা আসে এখানে। আমাদের শহরতলি যেন এক সপ্তার জন্য হয়ে যায় সারা পৃথিবীর গলফ প্রেমীদের রাজধানী। আজ টুরনামেন্টের শেষ দিন। টাইগার উড জিততে পারলেন না এবার।
ছবি : নাবিহা ও সিলভী
মাকেলরয় আগিয়ে আছে এ প্রতিযোগিতাতে। চারদিকে ' আর্নল্ড আর্মি' দের বিশাল তৎপরতা মানবতার সেবায় সবাইকে সাথে নেবার। চার বছর আগে আমার ছেলে মেয়েকে আমাদের প্রতিবেশী আর্নল্ড পামারকে দেখাবার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। অসাধারণ তাঁর ব্যবহার। যাবার সময় পকেট থেকে 'আর্নল্ড আর্মির' কার্ডটা বের করে বললেন, " ডাক্তার, আমাদের সাথে চলে আসো।' আমি সে সন্মান মাথা পেতে নিলাম। এখনো উৎসাহের সাথে সে কাজটা করে যাচ্ছি।
লেখক : পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিভাগীয় প্রধান, ফ্লোরিডা হাসপাতাল, ফ্যাকাল্টি, কলেজ অব মেডিসিন, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি।
এইচআর/পিআর