অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে একসময় অবহেলার চোখে দেখা হত। নেতিবাচক নানা মন্তব্যও জুটতো বাংলাদেশের ললাটে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এসে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হল বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে এখন যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়ার ঘোষণা আসে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিনের প্রাক্কালে। ১৬ মার্চ শুক্রবার জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিপিডি) এই ঘোষণা সংক্রান্ত চিঠি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের কাছে হস্তান্তর করে।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিতে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটির যেকোনো দু'টি অর্জন করতে পারলেই স্বীকৃতি মেলে। কিন্তু বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই পর্যাপ্ত মানদণ্ড অর্জন করে বিশাল এ স্বীকৃতি অর্জন করে নিয়েছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাউন্সিলের মানদণ্ডে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২শ ৩০ ডলার। বাংলাদেশের সেখানে রয়েছে ১২শ ৭১ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে প্রয়োজন ৬৬ বা এর বেশি। বাংলাদেশ সেখানে অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। এছাড়া অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে হতে হবে ৩২ বা এর কম। সেখানে বাংলাদেশের আছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
স্বীকৃতির শর্ত হিসেবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর মধ্যে দুবার করা হবে মূল্যায়ন। একটি ২০২১ সালে ও অন্যটি ২০২৪ সালে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত কাঙ্খিত বিষয়।
স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত- জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে এই তিনটি কাতারে বিভক্ত করা হয়। বাংলাদেশ এত দিন ছিল স্বল্পোন্নত দেশ। সেখান থেকে এবারই প্রথম উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা অর্জন করলো। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকের (ইভিআই) মতো বিষয়গুলোকে এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে সব সূচকেই বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করেছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এখন পরীক্ষামূলকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে রাখা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্জনের ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক এ স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের এমন স্বীকৃতি বাংলাদেশের আগামীর পথ চলাকে আরও সুগম করবে বলে বিশ্বাস বিশ্লেষকদের। যে কোনো মূল্যে এই অর্জন ও অগ্রগতিকে ধরে রাখতে হবে।
এইচআর/জেআইএম