ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ১০:০৭ এএম, ০৫ মার্চ ২০১৮

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর সন্ত্রাসী হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক তথ্য প্রকাশ, হামলার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের হামলার ঘটনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। দুঃখজনক হচ্ছে, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির মানুষের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর প্রতিকার হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

শনিবার শাবিতে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা করে ফয়জুর রহমান (২৪) নামের এক দৃর্বৃত্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররার তাকে আটক করে। পরে তাকে পুলিশে দেয়া হয়। জাফর ইকবালকে রাতেই ঢাকায় আনা হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। এখন তিনি শঙ্কামুক্ত।

হামলার ঘটনায় ধিক্কার উঠেছে চারদিকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর যারা হামলা চালালো তারা কারা, এরা ধর্মান্ধ। এদের খুঁজে বের করতে হবে। ওরা মনে করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারলেই বেহেস্ত নিশ্চিত। আসলে তারা বেহেস্তে যাবে না, তাদের জায়গা দোজখে। এটা নিশ্চিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধর্মান্ধরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ যারা করে তারা দেশের মঙ্গল করতে পারে না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এ সময় আহ্বানও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ যারা করে তারা শিক্ষা দেয় যে, মানুষকে খুন করতে পারলেই তারা বেহেস্তে যাবে। এ ধরনের কথা ইসলাম সমর্থন করে না। আমাদের ইসলাম ধর্মে হত্যা মহাপাপ। কাজেই তারা কখনই বেহেস্তে যেতে পারবে না। তাদের জায়গা হবে দোযখে।

দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন সভা সমাবেশে আপনাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক সম্পর্কে সচেতন করার জন্য। আশা করি, প্রতিটি বাবা-মা তাদের সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। এই ধর্মান্ধরা কারো ভালো করতে পারে না। এরা শুধু জানে ধ্বংস করতে। সুতরাং এদের থেকে সাবধান হতে হবে।

এর আগে ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায় দিতে গিয়ে আদালত পর্যবেক্ষণে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক বয়ান দিতে ইমামদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

আদালত বলেন, ‘এ কাজের জন্য প্রাইমারি শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবেশ, রাজনীতি, ধর্মীয় আচার-ব্যবহার, স্বাধীনতার ইতিহাস যথাযথভাবে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। এ নিয়ে সবাইকে এবং সরকারকেও ভাবতে হবে।’ ইমামদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ‘ইমামদের কাজ হচ্ছে মুসল্লিদের নামাজ পড়ানো এবং ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া। এমন কোনো বয়ান দেবেন না, যা দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।’ আদালত বলেন, ‘যদি কেউ ইসলাম এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) অথবা যেকোন ধর্ম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই।’

ছোট ছোট পরিবারের সমষ্টিই রাষ্ট্র। পরিবারে যদি সঠিক শিক্ষা না পায় সন্তানরা তাহলে সমাজ রাষ্ট্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ কারণে সমাজ গঠনে পরিবারের দায়িত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় সন্তান কোথায় যায় কার সাথে মিশে এটি খেয়াল রাখতে হবে। কোনো ভুল আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত বা বিপথগামী হচ্ছে কিনা সেটিও দেখতে হবে। কেবল নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকলে চলবে না। সন্তান ও নিজেদের ভবিষ্যতকে নিষ্কন্টক রাখতে সবদিকেই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

পারে, আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় এ ব্যাপারে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী চরমপন্থার উত্থানের এ সময়ে আমাদের দেশও আক্রান্ত। এ ব্যাপারে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদ যেন কোনো অবস্থায়ই সমাজকে গ্রাস করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেই ক্ষতি কিন্তু সবার। জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীদের একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তার করতে হবে। এর নেপথ্য কুশীলবদেরও খুঁজে বের করতে হবে। দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। পাশাপাশি অন্ধকারের অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। মনে রাখতে হবে ধর্মান্ধ, গোড়ামি শিক্ষা, শান্তি প্রগতির অন্তরায়।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন