এ কেমন গণতন্ত্র?
গত সপ্তাহে একটি লেখায় আমি লিখেছিলাম, বিএনপির পাতা ফাঁদে সরকার পা দিয়েছে। সেই ফাঁদ বিএনপি আরো নিপুণভাবে পাতছে। আর সরকার ক্রমশই তাতে জড়িয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি ছিল সন্ত্রাসী সংগঠন। তখন তারা পেট্রল বোমা সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ মেরেছে। সরকারও তাদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছে। কিন্তু এবার বিএনপি কৌশল পাল্টে ফেলেছে। তারা এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূটি পালন করছে। কিন্তু তাতেও বাধ সাধছে পুলিশ।
বিএনপি সমাবেশ করতে চেয়েছিল, অনুমতি পায়নি। কালো পতাকা মিছিল করতে চেয়েছিল, অনুমতি পায়নি। শেষ পর্যন্ত কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা নিয়ে দাড়াতে চেয়েছিল। তাও পুলিশ তাদের দাড়াতে দেয়নি। রঙিন পানি ছিটিয়ে, লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করেছে। আটক করেছে অনেককে।
পত্র-পত্রিকায় বা টিভিতে পুলিশী নির্যাতনের যে ছবি ছাপা হয়েছে, তা দুঃখজনক। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এই ছবিগুলোর কাউন্টার হিসেবে বিএনপি সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশী নির্যাতনের ছবি দিচ্ছেন। মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, সোহেল তাজরা রাজপথে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
কিন্তু একটা খারাপ কাজ কখনোই আরেকটা খারাপ কাজের যুক্তি হতে পারে না। বিএনপি তখন খারাপ করেছিল বলেই তো মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। তো এখন বিএনপির খারাপ কাজগুলো আওয়ামী লীগকে অনুসরণ করতে হবে কেন?
পুলিশ বলছে, রাস্তা আটকে যান চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছিল বলে, তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন প্রেসক্লাবের সামনে কত সংগঠন মানববন্ধন করে। তখন কোনো অসুবিধা হয় না। খালি বিএনপি নামলেই অসুবিধা! এটা অন্যায়, অগণতান্ত্রিক। বিএনপির প্রধান নেত্রী কারাগারে। তারা তো প্রতিবাদ জানাবেই। সবাইকে অবাক করে বিএনপি মানববন্ধন, অনশন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এমনকি নিজেদের কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা নিয়ে দাড়াতেও দিচ্ছে না।
শনিবারের কর্মসূচিতে পুলিশ বিনা উস্কানিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, বিএনপির সামর্থ্য নেই বলেই তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছে। এটা কিন্তু এক ধরনের উস্কানি। যেন সক্ষমতা দেখাতে বিএনপি রাজপথে সহিংস আচরণ করে। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের উস্কানিতেও পা দেয়নি বিএনপি। বরং তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ধারা অব্যাহত রেখেছে।
একটা কথা মনে রাখা দরকার, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি ছিল আক্রমণকারী, সন্ত্রাসী। কিন্তু এখন তারা নিরীহ আক্রান্ত। এভাবে বিএনপি নিজেদের ভাবমূর্তি বদলে মানুষের সহানুভূতি পেতে চাইছে। আর সেই চাওয়া পূরণে সরকার দারুণ সহায়তা করছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেও পুলিশের মার খেলে তাদের প্রতি মানুষ একটু সহানুভূতিশীল হতেই পারে।
বিএনপি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যা করেছে, তা অবশ্যই গণতান্ত্রিক নয়। আমরা তার নিন্দা করেছি। সেই অপরাধে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, বিচার হচ্ছে। কিন্তু এখন যখন তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইছে, তখনও তাদের সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দিতে হবে কেন?
বিএনপি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার অধিকার তাদের রয়েছে। আর যখন দলের শীর্ষ নেত্রী কারাগারে, তখন তারা তো রাজপথে নামবেই, প্রতিবাদ করবে, বিক্ষোভ করবে। যতক্ষণ তারা আইন না ভাঙবে, নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ করবে; ততক্ষণ তাদের বাধা দেয়ার অধিকার নেই পুলিশের।
ওবায়দুল কাদের একবার বলবেন, বিএনপির সক্ষমতা নেই। আবার তারা কালো পতাকা নিয়ে অফিসের সামনে দাঁড়ালেও পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে তুলে দেবেন। এ কেমন কথা, এ কেমন গণতন্ত্র? তারচেয়ে ভালো ওবায়দুল কাদেরই বলে দিন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি কী কী কর্মসূচি পালন করতে পারবে। মানববন্ধন, অনশন, গণস্বাক্ষর, কালো পতাকা প্রদর্শনের চেয়েও শান্তিপূর্ণ আর কী কর্মসূচি আছে?
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
এইচআর/জেআইএম