জিম্মীদশা কাটবে কবে?
নগর পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়া আদায় নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব ও ‘কাউন্টার বাস’ সার্ভিস কোন নীতি মেনে চলছে না। দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীরা জিম্মী অবস্থায়। নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা উপায়হীন হয়ে জ্বালাতন সয়ে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ বাস এবং অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবের উপর যার পর নাই বিরক্ত।
যানবাহনের চালক ও মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা যেন দিন দিন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিএনজি চালিত অটোরিক্শা, ট্যাক্সিক্যাবের দৌরাত্ম্যের কোনো শেষ নেই। অটোরিক্শা চালকরা যাত্রীদের জিম্মী করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত প্রায় ১ কোটি টাকা। মিটারে নয় মনগড়া চলাচলেই তারা অভ্যস্ত। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।
জরুরি মুহূর্তে অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাব যাত্রীদের দিকে ফিরেও তাকায় না। তাকালেও ভাড়া চেয়ে বসে দ্বিগুণ-তিনগুণ। মিটারের কোন বালাই নেই। মৌখিক চুক্তি মোতাবেক চালকরা অস্বাভাবিক হারে ভাড়া আদায় করছে। এসব কারণে অতিষ্ঠ হয়ে এখন যাত্রীরা ‘উবার’ , ‘পাঠাওয়ে’র মত অ্যাপসনির্ভর সার্ভিসের দিকে ঝুঁকছে। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে যে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়-এই সত্যটি উপলব্ধি করতে হবে।
অন্যদিকে বাস কাউন্টারে নিয়মিত চলছে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের নানান ফন্দি। সরকারিভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তা মানছে না। পুরনো নীতিমালা দিয়ে চলছে পরিবহন। এই নীতিমালা অসম্পূর্ণ। এটিকে যুগোপযোগী করা জরুরি। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা জরুরি। যদিও কবে নাগাদ নীতিমালা সংশোধন করা হবে সেটা অনিশ্চিত। তাছাড়া নীতিমালার প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিয়ে আরেকটি সংশয় থেকেই যায়। কারণ ভাড়া আদায় নিয়ে যথেচ্ছচার বন্ধ করা জরুরি হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে রাজধানীতে লোকাল বাসের পাশাপাশি চলছে বিভিন্ন ধরনের ‘কাউন্টার' সার্ভিস’। আর এই সার্ভিসের নামে একই রুটে একই দূরত্বে আদায় করা হচ্ছে একেক রকমের ভাড়া। অন্যদিকে এ ছাড়া সিটিং সার্ভিস লেখা থাকলেও বেশিরভাগ সার্ভিসে দাঁড় করিয়েও যাত্রী নেয়া হয়। বাড়তি ভাড়া আদায়, একেক রকম ভাড়া আদায় এবং দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেয়ার বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না পরিবহন কর্তৃপক্ষ। দু’একটি রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু হলেও সেবার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, কোন বাস সার্ভিসই সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় করে না। নানা অজুহাতে মালিক শ্রমিকরা সরকারের আইনকে অমান্য করে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এছাড়া গণপরিবহনের তীব্র সংকট নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ অবস্থায় নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে সিএনজি অটোরিক্শা, টেক্সিক্যাব যাতে মিটারে চলে সে ব্যবস্থা করতে হবে। এবং যাত্রীদের প্রয়োজন অনুযায়ী যেন গন্তব্যে যায় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বাস, মিনিবাসগুলো যেন ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চালাতে না পারে সেটিও দেখতে হবে। গণপরিবহনের সংকট দূর করতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তা খুব দ্রুত। এই ব্যবস্থাগুলো নিশ্চিত হলেই কেবল যাত্রীরা জিম্মী দশা থেকে মুক্তি পাবেন।
এইচআর/এমএস