ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ই-লার্নিং ও সাংবাদিকতা শিক্ষা

নাসিমূল আহসান | প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার, ইন্টারনেট ভিত্তিক শিক্ষা সরবরাহ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থাকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বিজ্ঞান, গবেষণা এমনকি সাংবাদিকতা শিক্ষার ক্ষেত্রেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো। নিজের ঘরে বসে, সুবিধামতো সময়ে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিতে অসংখ্য মানুষ ই-লার্নিং এর মাধ্যমে নানা ধরনের কোর্সে অংশ নিচ্ছেন। নিজেদের দক্ষতা, জ্ঞান ও পেশাদারিত্বের জায়গায় উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন।

বিশ্বজুড়ে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি নিজেদের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে যারা সুনির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে আগ্রহীদের জন্য অনলাইন কোর্স তৈরি করছেন। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা শিক্ষার ক্ষেত্রেও এ ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করার মতো।

বিশ্বের বড় বড় সংবাদ সংস্থা তাদের সংবাদকর্মীদের পেশাগত দক্ষতা ও সাংবাদিকতাবিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য ই-লার্নিং টুলকে বেছে নিচ্ছে। উদাহরণস্বরুপ, ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) বিশ্বব্যাপী তাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিনিধিদের জন্য www.bbc.co.uk/learning শীর্ষক একটি ই-লার্নিং পরিসর তৈরি করেছে, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচিত প্রবন্ধ, ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে যেখানে বসে বিবিসি’র সংবাদকর্মীরা নানাবিধ বিষয়ে নিজেদের জ্ঞান ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ করছে।

এছাড়া সাংবাদিকতা ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন: মিডিয়া হেল্পিং মিডিয়া (www.mediahelpingmedia.org), পয়েন্টার নিউজ ইউনিভার্সিটি (www.newsu.org), থমসন ফাউন্ডেশন (thomsonfoundation.edcastcloud.com) সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী, নবীশ সাংবাদিক ও যোগাযোগকর্মীদের জন্য ওয়েবভিত্তিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরি করেছে। এমনকি পৃথিবীর এক নম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট ফেসবুকও সাংবাদিকদের জন্য ই-লার্নিং কোর্সের (www.facebook.com/business/e/courses/journalists) কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

এ ধরনের অনলাইন শিক্ষা পরিসরগুলোতে সাংবাদিকতার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলাপ-আলোচনা, পরামর্শ, টিপস, ভিডিও টিউটোরিয়াল সরবরাহ করে থাকে, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাংবাদিকদেরকে খুব সহজে, স্বল্পতম সময়ে নিজের ঘরে/অফিসে বসে নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানার, শেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের নানা উদ্যোগ চোখে পড়ছে। স্কুলে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম-এর উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকসমূহ ই-বুক-এ রূপান্তর করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, গবেষক বিনামূল্যে যে কেউ যেকোনো সময় অনলাইনে ই-বুক দেখতে পারছেন। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে উদ্বোধন করেন দেশের অন্যতম বাংলা ভাষায় নির্মিত উন্মুক্ত ই-লার্নিং প্লাটফর্ম মুক্তপাঠ। যেখানে বর্তমানে এক লক্ষের অধিক শিক্ষার্থী একুশটির বেশি কোর্সে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) দেশ ও দেশের বাইরে কর্মরত সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের এটুআই প্রোগ্রামের সঙ্গে যৌথ ভাবে বাংলা ভাষায় বিশ্বের প্রথম সাংবাদিকতা বিষয়ক ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) এবং একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘অনলাইন সার্টিফিকেট কোর্স অন জার্নালিজম’ শীর্ষক এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এই ই-লার্নিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে নিজেদের ঘরে বসেই বিনামূল্যে সাংবাদিকতা শিখতে পারছেন।

প্রাথমিকভাবে চারটি কোর্স নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সাংবাদিকতাবিষয়ক দেশের একমাত্র ই-লার্নিং প্লাটফর্মটি। সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি কোর্স, টেলিভিশন সাংবাদিকতা কোর্স, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং উন্নয়ন সাংবাদিকতা কোর্স শীর্ষক এ চারটি কোর্স আগ্রহীরা বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে কোর্সে অংশ নিতে পারছেন।

২০১৬ সালে সংসদে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, বর্তমানে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈ-মাসিক ও ষান্মাসিক পত্রিকার সংখ্যা দুই হাজার ৮৩৪টি। এছাড়া তথ্য অধিদফতরে ১৭১৭টি অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। নিবন্ধনের বাইরে অনিমিয়ত প্রকাশনা, ব্লগ, ওয়েবসাইটের সংখ্যা তো অজস্র। প্রথম আলোর তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে চ্যানেলের সংখ্যা ৪১টি। এতো এতো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর অন্য কোন দেশে বিরল। কিন্তু এসব গণমাধ্যমের টেকসই বিকাশ কি আদৌ নিশ্চিত? সব গণমাধ্যম কি যোগ্য, দক্ষ সংবাদকর্মী দিয়ে তাদের কাজ পরিচালনা করতে পারছেন?

দেশের গণমাধ্যম কর্মীদের একটা বড় অংশের সাংবাদিকতা বিষয়ে কোন একাডেমিক পড়াশোনা নেই। অনেক সাংবাদিকই নিজেদের দক্ষতা ও জানাশোনা বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু সাংবাদিকদের এ প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির সুযোগ চাহিদার তুলনায় খুবই কম। বিশেষ করে মফস্বলে যারা কাজ করেন, তাদের সেই সুযোগ আরও কম। এ রকম জায়গায় দাঁড়িয়ে দেশের সংবাদকর্মীদের মান উন্নয়নে, সাংবাদিকতা শিল্পকে এগিয়ে নিতে সাংবাদিকতা শেখার এ ই-লার্নিং প্লাটফর্ম অভাবনীয় ভূমিকা রাখতে পারে।

পিআইবি’র অনলাইন সাংবাদিকতাবিষয়ক কোর্স চালুর পরে দুটো কোর্সে প্রায় ছয় হাজার আগ্রহী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক কোর্সে অংশ নেয়ার আবেদন করে। বাছাইয়ের পর বর্তমানে দুটো কোর্সে মোট ২ হাজার ৬৫১ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত কোর্সে পড়াশোনা করছেন। পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এ কোর্সদুটোতে প্রান্তিক পর্যায়ের অংসখ্য সংবাদকর্মী অংশ নিয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করলেও কোনো ধরনের প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। এছাড়া কোর্সে একাধিক প্রবাসী শিক্ষার্থী আছেন, যারা দেশের বাইরে বসে বিভিন্ন চ্যানেল ও পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। কোর্সে সকল কনটেন্ট যেমন: সাংবাদিকতার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রবন্ধ, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ও ভিডিও লেকচার সাংবাদিকরা ডাউনলোড করে রাখতেও পারছেন।

বাংলা ভাষায় ই-লার্নিং-এর মাধ্যমে সাংবাদিকতা শেখার পিআইবির নতুন এ আয়োজন দেশের সাংবাদিকতা শিক্ষার ইতিহাসে প্রথম। যত বেশি সংবাদকর্মীকে এ আয়োজনের আওতায় আনা যাবে, ততই দেশের সাংবাদিকতা শিল্পে দক্ষ ও জানাশোনা মানুষের সংখ্যা বাড়বে। সামগ্রিক সাংবাদিকতা চর্চার জায়গায় আরও পরিবর্তন আসবে। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে তাদের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পিআইবি’র এ ই-লার্নিং প্রশিক্ষণের সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন।

লেখক: সমন্বয়কারী, পিআই-এটুআই ই-লার্নিং প্রোগ্রাম।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন