ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৪:০২ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জেলা বা উপজেলা হাসপাতালে নিয়োগ পেয়ে যেসব চিকিৎসক সেখানে যান না, তাদের আর সুযোগ দেয়া হবে না। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি চিকিৎসকদের উপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, সরকারি চাকরি যদি কারও ভালো না লাগে, তাহলে তা ছেড়ে ঢাকায় বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেটের অর্থ দ্বারা সংগৃহীত সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কথঅ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও যথার্থ। চিকিৎসকরা এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো এ সেবা থেকে বঞ্চিত। প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাব, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী না থাকা, চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাব- এসব কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। দেশের বেশিরভাগ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার নেই। ডাক্তারদের সেখানে পোস্টিং দেয়া হলেও তারা থেকে যেতে চান রাজধানীতেই।

এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই অনেক হাসপাতালে। বলা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার না থাকায় সবচেয়ে সঙ্কটে পড়েছে স্বাস্থ্য খাত। রোগব্যাধি হলে ওষুধ খেয়ে জীবন রক্ষা করে মানুষ। কিন্তু সেই ওষুধেও ভেজাল। মানহীন ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে রোগ সারার বদলে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে ভুয়া ডাক্তারের দৌরাত্ম্য । চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়াতেও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। জনস্বার্থে এসব ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।

‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০১৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রাথমিক ফলাফলে স্বাস্থ্যখাতের যে চিত্রে উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় সার্কভুক্ত দেশগুলোর ভেতরে স্বাস্থ্য খাতে খরচ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। স্বাস্থ্য খাতে যে খরচ হয়, তার ৬৭ শতাংশ ব্যক্তি নিজে খরচ করে। সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়- বাংলাদেশের মাথাপিছু বার্ষিক স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় এখন ৩৭ ডলার বা ২ হাজার ৮৮২ টাকা। স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় হয়, তার ২৩ শতাংশ বহন করে সরকার। ৩ শতাংশ বহন করে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আর বাকি ৭ শতাংশ বহন করে দাতাসহ অন্যান্য সংগঠন। উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তি যে খরচ করে, তার সবচেয়ে বড় অংশটি খরচ হয় ওষুধের পেছনে। এজন্য চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির ওপর স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি নির্ভর করে। এ কারণে ভুয়া ডিগ্রি, পদবি ব্যবহারকারী এবং ভুল চিকিৎসা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করাও জরুরি। ভেজাল ও মানহীন ওষুধের ব্যাপারেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসা এখন সেবা নয়, বাণিজ্য। যেখানে-সেখানে গজিয়ে উঠছে হাসপাতাল ক্লিনিক। বেশিরভাগ ডাক্তার এখন সরকারি হাসপাতালে সময় দেয়ার চেয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে অধিক মনোযোগী। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া ডাক্তারদের গ্রামে থাকার মানসিকতা থাকতে হবে। এছাড়া ওষুধের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। মানুষের এ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন