কেন বুদ্ধিজীবী হত্যা
সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা সংকট ও বিপর্যয়ের কালে বৌদ্ধিক, সৃষ্টিশীল, জ্ঞানমূলক ও প্রগতিশীল পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে জাতিকে যথাযথ দিকনির্দেশনা দানকারীরাই বুদ্ধিজীবী নামে পরিচিতি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির আবির্ভাবের ইতিহাসও জাতিসত্তার ইতিহাসের সমান্তরালে বাহিত। প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিক যুগ হয়ে জাতীয় ইতিহাসের নানা বাঁক পরিবর্তনের কালে বুদ্ধিজীবীরা নানারূপ চেতনার জাগরণ ও বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে জাতিকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কবে থেকে সমাজে বা রাষ্ট্রে বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব তা বলা মুশকিল। তবে, আমরা প্রাগৈতিহাস ও ইতিহাসের ধারায় বিভিন্ন রাজা বা সম্রাটের শাসনকালে তাদের রাজসভায় বুদ্ধিজীবী শ্রেণির উপস্থিতি লক্ষ করি। ‘নবরত্ন সভা’ তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ। আর আধুনিককালে ‘ইন্টেলিজেনসিয়া’ বলতে যা বুঝায় তার অস্তিত্ব আমরা টের পাই ঊনিশ শতকের প্রথম ভাগে। এরা কেবল সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য দিকনির্দেশনাই দিতেন না- সমাজের পক্ষে ন্যায়বোধ ও শ্রেয়োবোধ সম্পর্কে নানা বিষয়ে প্রশ্নও উত্থাপন করতেন। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রচলিত নানা ব্যবস্থার ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কেও অঙ্গুলি নির্দেশ করতেন।
অবিভক্ত বাংলায় রাজা রামমোহন রায় এবং ইয়ং বেঙ্গল নামের প্রগতিবাদী দল বুদ্ধিবাদী এমন অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন যা সমকালীন বাংলার সমাজকে বিস্মিত এবং আন্দোলিত করেছিল। ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে নানা ঘটনা ও দুর্ঘটনা সম্পর্কে সমকালীন বুদ্ধিজীবীদের নানারূপ তর্ক-বিতর্ক ও পরামর্শ সমাজ ও রাষ্ট্রকে চালিত করেছে। তবে বাঙালির পরিপূর্ণ মানস গঠনে বুদ্ধিজীবীদের নানা তর্ক-বিতর্ক ও ব্যাখ্যা-ব্যাখ্যান সবচেয়ে বেশি সক্রিয়তা লাভ করেছে দেশ ভিভাগের পর। স্পষ্ট করে বললে পাকিস্তান সৃষ্টি এবং পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান জনগণকে বৈষম্যের শিকারে পরিণত করার পর থেকে। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের ফলে বুদ্ধিজীবী শ্রেণি সৃষ্ট বৌদ্ধিক বিতর্ক একদিকে বাঙালির স্বাজাত্যবোধকে যেমন তীব্র ও তীক্ষ্ণ করেছিল তেমনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেরণায় বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধও করেছিল। ফলে, পাকিস্তান বিরোধী যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালির সম্পৃক্ততাও বৃদ্ধি পেয়েছিল।
বুদ্ধিজীবীরাই এদেশের মানুষকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন সবচেয়ে বেশি। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে প্রেরণা সঞ্চার করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতো বুদ্ধিজীবীরাও। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী সমাজের বৌদ্ধিক প্রেরণায় শাণিত হতে থাকে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন। অবশেষে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির জীবনে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রায় ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনের জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন ও বৈষম্যকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং এদেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ পরিচালনায়ও অন্যতম টার্গেট ছিল এদেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। আর বঙ্গবন্ধুকে তো হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তারই করা হয়- নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর আল শামস বাহিনী বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হাজার হাজার বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিল্পী, কবি, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও সাহিত্যিককে রাতের অন্ধকারে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের ওপর নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচার চালিয়ে নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানের দোসর এদেশীয় দালালচক্র যখন ক্রমশ উপলব্ধি করছিল যে, মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানিরা ছিন্নভিন্ন এবং তাদের পরাজয় অনিবার্য তখন তারা বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করে।
পাকিস্তানি বাহিনী এবং এদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তান পন্থীরা এও উপলব্ধি করেছিল যে, মুক্তিযুদ্ধে সফল অভিযানের পেছনে রাজনৈতিক নেতাদের মতোই যারা বুদ্ধি, প্রেরণা, উৎসাহ এবং বাঙালির স্বাজাত্যবোধ সম্পন্ন সাংস্কৃতিক চেতনায় উজ্জীবিত করেছেন তারা বেঁচে থাকলে সেইসব দেশদ্রোহীদের পক্ষে এই দেশের মাটিতে টিকে থাকা দুষ্কর। তাই পেশাজীবী বাঙালির নানা স্তরের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ওপর নেমে আসে ঠাণ্ডা মাথায় সুপরিকল্পিত গুপ্তহত্যার নিষ্ঠুর আক্রমণ। পাকিস্তানের দোসররা আরো চিন্তা করেছিল এইসব বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমেই স্বাধীনতা পেতে যাওয়া বাঙালিকে একটি পঙ্গু জাতিতে পরিণত করা সম্ভব। তাই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় তথা স্বাধীনতা লাভের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলির নেতৃত্বে এ হত্যকাণ্ড পরিচালিত হয়।
স্বাধীনতা লাভের পর গভর্নর হাউজে রেখে যাওয়া তার ডায়রিতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা পাওয়া যায় যার অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বর নিহত হন। রাও ফরমান আলির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাকিস্তানি বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেনান্ট জেনারেল আমির আবদুলাহ খান নিয়াজির নির্দেশনায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে ব্রিগেডিয়ার বশির, লেফটেনান্ট কর্নেল হেজাজি, মেজর জহুর, মেজর আসলাম, ক্যাপটেন নাসির, ও ক্যাপটেন কাইউম। আর তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করে এদেশীয় দোসর আল বদর, আল শামস ও ছাত্রসংঘের কর্মীবৃন্দ। পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বর ও নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে তারা। বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষ এ হত্যাকাণ্ডের সংবাদে পুনরায় স্তম্ভিত হয়ে যায়- চমকে ওঠে সমগ্র বিশ্ব। এর আগে ২৫ মার্চ কালো রাতে ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে পরিকল্পিত গণহত্যা পরিচালনার মাধ্যমে বাঙালির ওপর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৪ ডিসেম্বর বা তার অল্প আগে-পরে নিখোঁজ কিংবা বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বুদ্ধিজীবীদের বিজয় অর্জনের পর পরই পাওয়া গেল দলিত-গলিত লাশ হিসেবে ঢাকার মিরপুর ও রায়ের বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের পৈশাচিক পন্থায় নির্যাতন ও পরে হত্যা করেছিল। অজস্র লাশের দেহের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি আর এদেশীয় নরপিশাচদের নির্মম আঘাতের ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন দেখে আত্মীয়-স্বজনেরা বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল। চোখ-মুখ বাধা অজস্র লাশের কোন কোনটি মাত্র সনাক্ত সম্ভব হলেও অসংখ্য লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কোন কোন লাশ ছিল জবাই পর্যন্ত করা! লাশের এসব বীভৎস ছবি দেখে অনুমান করতে কষ্ট হয়নি যে, পাকিস্তানি হানাদার আর তাদের এদেশীয় দোসররা তাদের হেরে যাওয়ার ক্ষোভ, দুঃখ ও হতাশার নির্মম আঘাতের ক্ষতচিহ্ন এদেশের পক্ষে কাজ করা বুদ্ধিজীবী শ্রেণির শরীরে রেখে গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জামায়াতে ইসলাম এবং মুসলিম লীগ এবং তাদের অনুসারী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা এদেশেরে বুদ্ধিজীবীদের উপর এরূপ হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এ ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের শহিদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয় এক হাজার ৭০ জন। আর এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত বাংলা পিডিয়ায় এ সংখ্যা দেখানো হয়েছে এক হাজার একশত এগারো জন। কিন্তু দেশব্যাপী এ সংখ্যা যে আরো বেশি তা বলাইবাহুল্য। অথচ অদৃষ্টের কী নির্মম পরিহাস! বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরেও বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের’ নামে যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্র-ক্ষমতা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং তার উত্তরসূরিরা।
পাকিস্তানিরা পরাজিত হলেও তারা এদেশে তাদের একটি শক্তিশালী বশংবদ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল বলে পাকিস্তানি ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ এইসব বশংবদদের সহযোগিতায় অবলীলায় সম্পন্ন হয়েছে। সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তানের সামগ্রিক পরাজয় যখন একেবারেই সন্নিকটে তখন জাতির মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের গোপনে প্রথমত গুম এবং পরে হত্যা করা হয়। এ হত্যা পাকিস্তানের প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে সৃষ্ট। তারা ভাল করেই বুঝেছিল এবং জেনেছিল যে, রাজনৈতিক চেতনার পাশাপাশি বাঙালিকে সাংস্কৃতিক চেতনায় জাগ্রত রাখার পশ্চাতে বুদ্ধিজীবিদের প্রেরণাই ছিল সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।
তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়েও বুদ্ধিজীবী হত্যায় অত্যন্ত সুচতুরভাবে গোপনে সংঘবদ্ধ হয় এবং সুখী ও সমৃদ্ধ বাঙালির দিশারী স্বরূপ সক্রিয় চেতনার স্ফুরণসমূহ নিভিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা ভেবেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে করতে পারলে এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আলোহীনতায় আর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। তারা ভেবেছিল স্বাধীন হলেও দেশটি আর কখনো তার যথাযথ অস্তিত্ব নিয়ে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আত্মপ্রকাশে সক্ষম হবে না। মূলত বাঙালিকে এবং স্বাধীন হতে যাওয়া বাংলাদেশটিকে পঙ্গু করে দেওয়ার লক্ষ্যেই বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা রচনা করে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামসসহ মুসলিম লীগ, জামায়াত আর ছাত্রসংঘের অসংখ্য নেতাকর্মী।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার জবাবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এদশের সর্বস্তরের মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৪ ডিসেম্বর যে হত্যাযজ্ঞের অপরাজনীতি শুরু হয় তা স্বাধীন দেশেও প্রবহমান থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাও সেই হত্যাযজ্ঞের ধারাবাহিকতা। অর্থাৎ পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর নীলনকশা বাস্তবায়নে যুক্ত হয় এদেশের কিছু বিপথগামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সেনা কর্মকর্তা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানপন্থীদের যেমন রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয় তেমনি শুরু হয় ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব! বিকৃত ইতিহাসের পথ ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরাই রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে।
‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের’ নামে এবং মুক্তিযুদ্ধকে ‘অতীতের বিষয়’ উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশ চলতে থাকে পশ্চাৎ গতিতে। মুক্তিযুদ্ধকালীন চার মূলনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাকিস্তানি ভাবধারার আদর্শে রাষ্ট্র চালাতে থাকেন জিয়াউর রহমান। তাই যখনই দেখা গেছে পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাসী এই গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে তখনই তাদের মধ্যে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির প্রবণতা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ২১ আগস্টের বোমা হামলাও সেই একই অপরাজনীতির অপচ্ছায়া মাত্র! বিকৃত ইতিহাস এবং হত্যার রাজনীতির মহোৎসব হাজার বছরের বাঙালি জাতিসত্তা সম্পর্কে আমাদের যেমন উন্মূল করেছে তেমনি মুক্তিযুদ্ধের সময় গৃহীত চার মূলনীতির বিসর্জন আমাদের বিস্মিত করেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের এ নির্মম সত্য তুলে ধরতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/এমএস