এই প্রকাশ্য চুরি আর কত দিন?
সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাড়ার মিটার প্রায় তুলেই দিয়েছে চালকরা । মিটারে তো তারা যেতে রাজিই না, তাকে নিয়মের কথা বলতে গেলে তেড়ে আসছে ইদানিং। অন্তত ১০ জন রাজি না হওয়ার পর এক জন মিটারে যেতে রাজি হচ্ছে, তাও টাকা বাড়িয়ে দেয়ার শর্তে। অথচ কারো কিছু বলার নেই। বিআরটিএ’র কাছে নালিশ জানানোর একটা পদ্ধতি আছে, কিন্তু প্রতিদিন সকালে ১০ জনের নামে অভিযোগ করার মত ধৈর্য ক`জনের আছে, আমি জানি না । আমার নিজের নেই। তবে হ্যাঁ অভিযোগ করলে শাস্তি হয় সন্দেহ নেই। কিন্ত তাতে আমার কী লাভ? আমি তো আমার কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছি না।
সকালে ঠাণ্ডা মেজাজে বাইরে বের হয়ে সিএনজি ওয়ালার সঙ্গে ঝগড়া করতে হচ্ছে। দ্বন্দ্ব খুব সাধারণ। আমি আইন মানতে চাই ও চায় না। ও আমার কাছ থেকে ডাকাতি করবে প্রকাশ্যে, আমাকে সেটা মানতে হবে। আমি মানি না। কিন্তু আমার সামনে অনেকেই মেনে নয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে সিএনজির চালক একেক জনের বয়স হয়ে গেছে ৬০ এর ওপরে। সাদা দাড়ি, কপালে নামাজ পড়ে দাগ ফেলেছে, এই এরাই নির্বিকার চিত্তে বলেন, মিটারে চালাই না। আইনের কথা বলতে গেলে ঝগড়া করে। সে যে প্রকারান্তরে চুরি করছে, এটা তার বোধের মধ্যেই নেই। আমার কেন জানি মনে হয় এই যে চুরি, এটা সিএনজি চালকরা একটা যুদ্ধ হিসেবে নিয়েছে। যে কোন কিছুর বিনিময়ে তারা চুরি করবেই। কারণ এক দুই বছর না, বছরের পর বছর ধরে এই সিএনজি অটোরিক্সাগুলোকে নিয়ম মানানোর চেষ্টা চলছে। হচ্ছে না। এদের অজুহাতের শেষ নেই। এই গ্যাসের দাম বেশি…কয়েক দফা বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। হলো না … এই সিএনজির মালিক ভাড়া বেশি নেয়।
সেখানেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ করার জায়গা রাখা হয়েছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে একটি অটোরিক্সার জন্যে মালিকের কাছে তিন জন চালক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরাই একজন আরেক জনের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে গাড়িটি ভাড়া নিচ্ছেন। কোন কিছুতে ফল হচ্ছে না । যাত্রী ঠকিয়ে চুরি হচ্ছেই। এর মধ্যে মিটার কারসাজি উদ্ভাবন করে ফেলেছে কোন কোন চালক। চাকা ঘুরবে, কিন্তু মিটার উঠবে যা ওঠার কথা তার দ্বিগুণ।
মানুষ ঠকানোর যত পদ্ধতি আছে এই সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা সবই আয়ত্ত্ব করেছে এবং প্রকাশ্য সেটার অনুশীলন করছে। কেউ কিছু বলছে না। আমার মনে হয় সিএসজি অটোরিক্সা্র আজকের এই যে স্বেচ্ছাচার এটা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। না হলে সরকারের মত শক্তিশালী সংগঠনের বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ ঘোষণা করে তারা কিভাবে টিকে থাকছে। নিশ্চয়ই এর পেছনে কারো কোন স্বার্থ জড়িত। এটা সাধারণ যাত্রীদের জানিয়ে দিলেই পারে। কর্তৃপক্ষ বলতে পারে “আমরা বছরে এক আধবার অটোরিক্সা চালকদের সঙ্গে টম এন্ড জেরি দৌড় দেব, তোমরা ভুল্ বুঝবে না, তোমরা সব সময় পকেট প্রস্তুত রাখবে। আমাদের মহান অটোরিক্সা চালকরা সেটা প্রকাশ্যে কাটবেন” বিষয়টি হয়তো এরকম নয়।
কর্তৃপক্ষের কেউ না কেউ চান এটা একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আসুক। কিন্তু পারছেন না। অথচ আমি কিন্তু, এদের নিয়ম মানানোর খুব সহজ রাস্তা দেখতে পাই। সকালে পাড়ায় মহল্লায় আর বিকেলে অফিস পাড়ায় ভ্রাম্যমাণ দল থাকা দরকার বিআরটিএর। এমন ফোন নাম্বার থাকা দরকার যেন অভিযোগ পাওয়া মাত্রই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে শাস্তি দেয়ার দল। কারো শাস্তি চাওয়াটা অমানবিক মনে হতে পারে কারো কারো। কিন্তু এই এরা, যারা বছরের পর বছর অত্যাচার চালাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর, একটু আধটু শাস্তি তাদের পাওনাই হয়েছে এরই মধ্যে। সেই অপরাধে হলেও এই প্রতারক সিএনজি চালকদের শাস্তি দরকার। নিয়মিত শাস্তি হতে থাকলে আমি নিশ্চিত এই অরাজকতা চলে যাবে।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।
[email protected]
এইচআর/আরআইপি