ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫

সুস্থ সূচনা আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ

ডা. এম এ সামাদ | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। ২০২৫ সালের স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য "সুস্থ সূচনা, আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ"—এটি মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানায়।

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ২.৮৭ লক্ষ নারী মাতৃমৃত্যুর শিকার হন, এবং প্রায় ৪৬ লক্ষ শিশু মারা যায় পাঁচ বছর বয়সের আগেই, যার মধ্যে ২০ লক্ষ শিশু গর্ভকালেই মৃত (stillbirth)। বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১২৩ জন প্রতি ১ লক্ষ জীবিত জন্মে, এবং ৫ বছরের নিচে শিশুমৃত্যু ৩১ জন প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে।

মা ও শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণসমূহ : প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ– প্রায় ৩১% , প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া ও ইক্ল্যাম্পসিয়া – ২৪%, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, খিঁচুনি এবং অঙ্গ বিকল হওয়া, সেপ্টিসেমিয়া বা ইনফেকশন – ১১%, গর্ভপাত সংক্রান্ত জটিলতা – ৭%, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ ও দেরিতে হাসপাতালে যাওয়া, অন্যান্য (অনির্দিষ্ট কারণ, রেনাল বা কার্ডিয়াক ফেইলিওর ইত্যাদি) – প্রায় ২৭% । এবং বাংলাদেশে নবজাতক (০-২৮ দিন বয়স) মৃত্যুর প্রধান কারণসমূহ: অপরিণত জন্ম– ৩২%, নবজাতকের শ্বাসকষ্ট (Birth asphyxia) – ২২%, জন্মের সময় শিশুর অক্সিজেনের ঘাটতি, নবজাতক ইনফেকশন– ২৫%, জন্ম সংক্রান্ত জটিলতা ও জন্ম ত্রুটি– ৯%, ও অন্যান্য।
এখানে দেখা যায়, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর বেশিরভাগ ঝুঁকির সাথেই কিডনি রোগের সম্পৃক্ততা আছে। আজকের লেখায় তাই আমি কিডনি রোগ ও গর্ভধারণকালীন ঝুঁকি এবং সে গুলো প্রতিরোধের উপায় নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো। এখানে জানা দরকার যে, গর্ভাবস্থা যেমন কিডনি রোগের কারণ হতে পারে পক্ষান্তরে কিডনি রোগ থাকলে আবার গর্ভবতী মা ও নবজাতকের মৃত্যু ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যেতে পারে, আগে থেকে একটু সতর্ক থাকলে অসংখ্য অকাল মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কিডনি রোগ ও গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় কিডনি রোগের উপস্থিতি মা ও শিশুর জন্য গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করে। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) থাকলে গর্ভধারণে সমস্যা হয়, এবং সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া গর্ভাবস্থা মারাত্মক হতে পারে। প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া, ইক্ল্যাম্পসিয়া, অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (AKI), ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), এবং সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথেমাটোসাস (SLE)—এইসব রোগ গর্ভাবস্থায় কিডনি ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ায়। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টপ্রাপ্ত নারীরা গর্ভধারণ করলে তাদের উচ্চ রক্তচাপ, সংক্রমণ ও অকাল প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রি-কনসেপশন কাউন্সেলিং: যারা কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য গর্ভধারণের আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক। এই পর্যায়ে কিডনি ফাংশন (GFR), রক্তচাপ, প্রোটিন ইউরিয়া, হেমোগ্লোবিন, সেরাম ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। উচ্চ রিস্ক থাকলে গর্ভধারণ স্থগিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গর্ভকালীন পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা: গর্ভাবস্থার সময় কিডনি ফাংশন প্রতি মাসে ১ বার পরীক্ষা করা উচিত, যদি CKD থাকে তাহলে প্রতি ২ সপ্তাহে রক্তচাপ, ইউরিন টেস্ট, সেরাম ক্রিয়েটিনিন ও প্রোটিন ইউরিয়া চেক করা দরকার। আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ফিটাল গ্রোথ মনিটরিং এবং নিয়মিত প্রসবপূর্ব চেকআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবজাতকের সুরক্ষা: মা সুস্থ থাকলেই শিশু সুস্থ থাকে। উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-টার্ম বেবির ঝুঁকি থাকায় নবজাতকের নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (NICU) প্রস্তুত রাখা জরুরি। প্রসবের পরে মা ও শিশুর নিয়মিত ফলোআপ ও পুষ্টি নিশ্চিত করা দরকার।

প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা: মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে হলে কমিউনিটিতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী, ধর্মীয় নেতা ও গণমাধ্যমকে এই কাজে যুক্ত করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সচেতনতামূলক সভা, পোস্টার, নাটিকা ও মা-বোনদের জন্য স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য।

এই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে আমরা যেন সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি—প্রতিটি মা ও শিশুর জন্য একটি নিরাপদ, সুস্থ ও সম্মানজনক ভবিষ্যৎ গড়বো।

লেখক: এমবিবিএস, এমডি (নেফ্রো), এফসিপিএস (মেডিসিন), এফআরসিপি সভাপতি, কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। অধ্যাপক, কিডনি রোগ বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাপাতাল।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন