গুজব তারাই ছড়ায়, যাদের কোনো সামর্থ্য নেই

ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে প্রতি মিনিটে ছড়ানো হচ্ছে নানা গুজব। গুজব তারাই সৃষ্টি করে, যাদের ভালো কিছু করার সামর্থ্য নেই।
গুজব সংক্রমণ ব্যাধির মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর সেই গুজবের ভিত্তি যদি রাজনীতি হয়, তাহলে তো কথাই নেই। মুহূর্তে জন থেকে জনে, এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের ভেতরে ও বাইরে একটি মহল গুজব ছড়িয়ে আসছে। যাদের উদ্দেশ্য যেকোনো মূল্যে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
অপপ্রচার, গুজব নিয়ে কথা বলেছেন সেনা প্রধান। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেনাবাহিনী কাজ করছে, সেটি দেশ ও জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে। সোমবার (২৪ মার্চ) ঢাকা সেনানিবাসের সেনাপ্রাঙ্গণে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে (অফিসার্স অ্যাড্রেস) তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সেনাপ্রধান দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নানা ধরনের অপপ্রচার, গুজব, উসকানিমূলক বক্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন। ঢাকার বাইরের সেনা কর্মকর্তারা অনলাইন মাধ্যমে এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হন।
কর্মকর্তা ও সৈনিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান বলেন, তাঁদের আত্মত্যাগ দেশ সব সময় স্মরণ করবে। তিনি সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, এমন কিছু করা যাবে না, যাতে উসকানিদাতাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি পেশাদার বাহিনী। সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে সরকার জানে, জনগণও জানে। এসব কথা উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে; কিন্তু দেশে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি। অনেকে নানা ভুল তথ্য, অপতথ্য নানাভাবে ছড়াচ্ছে, এতে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি সামলাতে হবে ধৈর্যের সঙ্গে। সেনাবাহিনীর কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশ ও দেশের জনগণ।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সামনে ঈদ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হবে। যদি কোনো কারণে কোথাও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, কঠোরভাবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
সাম্প্রতিক কালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন নেতার বার্তাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। পক্ষে–বিপক্ষে নানা রকম প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমনকি এই প্রচারণা থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীও রেহাই পায়নি। রাজনৈতিক দলের নেতা বা সরকারের কোনো পদাধিকারীর আগের কোনো বক্তব্যকে এখনকার বক্তব্য বলে চালানো হচ্ছে। কেউ কেউ গুজবের আগুনে বেগুনপোড়া আলুপোড়া দিয়ে বিকৃত আত্মসুখও অনুভব করছেন।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবে সবাই আশা করেছিলেন, দেশে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা চলছিল তার অবসান হবে, অর্থনীতি ও জনজীবনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা সেটা বলছে না।
দেশের সাধারণ মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, যতই দিন যাচ্ছে, আন্দোলনকারী দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে অনৈক্য–বিভেদ বাড়ছে। এই সুযোগে দেশের ভেতরে ও বাইরে একটি চক্র অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। আরেকটি চক্র বিদেশে বসে যাকেই অপছন্দ হচ্ছে, তাকে হুমকি দিচ্ছে, বাড়িঘর ও অফিস হামলা চালানোর জন্য উসকানি দিচ্ছে। অতীতে তাদের উসকানির কারণে কিছু স্থানে অঘটন ঘটলেও এখন আর জনগণ তাদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না। মানুষ এখন উসকানিদাতাদের বিষয়ে সচেতন হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
২৪শের ৫ আগস্টের আগের অরাজক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে যখন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে, তখন কোনো ঘটনা, বিবৃতি কিংবা গুজবকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হোক, তা সচেতন মানুষের কাম্য নয়। অর্থনৈতিক উন্নতি ও সহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির জন্য দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বিশেষ করে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী কোনো পক্ষের এমন কিছু করা বা বলা উচিত হবে না, যাতে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সে রকম কিছু হলে সুযোগসন্ধানীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ পাবে, যা কখনোই করতে দেওয়া সমীচীন হবে না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, গণ–অভ্যুত্থানের লক্ষ্য পূরণের জন্য জাতীয় ঐক্য আরও মজবুত করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকার ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কারও এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন যেকোনো দল করতে পারে। অতীত অপরাধের বিচারও দাবি করতে পারে। কিন্তু ‘আমরা দমন করব’, ‘প্রতিহত করব’—এ ধরনের স্লোগান স্বৈরাচারী আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
গুজব তারাই সৃষ্টি করে, যাদের ভালো কিছু করার সামর্থ্য নেই। সমাজের প্রতিটি দায়িত্বশীল নাগরিককে চলমান সংকট সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আন্দোলনকারী সব পক্ষের প্রতি আহ্বান থাকবে, এসব উসকানি ও গুজবে কান দেবেন না। আমরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে সজাগ সচেতন থাকলে দেশি বিদেশি কোনো অপশক্তিই আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারবেনা।
বিজ্ঞাপন
লেখক : সাংবাদিক।
এইচআর/এএসএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন