ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

জিপিএ ৫ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় ৯৪ শতাংশ ফেল কেন?

শাহানা হুদা রঞ্জনা | প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ২৬ মার্চ ২০২৫

জীবনকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার জন্য নানাধরনের পরামর্শ ও উদাহরণ দেয়া হয়। এরমধ্যে খুব পরিচিত একটি উদাহরণ হলো আধা গ্লাস পানিকে আমরা কীভাবে দেখবো? খালি আধা গ্লাস, নাকি আধা গ্লাস ভরা পানি? খালি না বলে, ভরা বলাটাই পজিটিভিটির লক্ষণ। যারা এভাবে দেখেন, তারা পজিটিভ চিন্তার মানুষ। কিন্তু বিপত্তি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে ভর্তি পরীক্ষার পাসের শতাংশের হার নিয়ে। এই হারকে দুর্ভাগ্যজনক বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিজ্ঞান অনুষদে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ৯৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেছেন।

একই রেজাল্ট হয়েছে ঢাবি’র ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট’ (বি ইউনিট) এর পরীক্ষার ফলাফলের ক্ষেত্রে। দুই ফলাফল দেখে কেমন যেন তব্দা লেগে গেল। এই ইউনিটে ৯০.১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। খবরটা দেখার পর থেকেই ভাবছি কিছু লিখি। কেন এতোটা বিপর্যয় আমাদের? আমারতো মনে হয় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় গোড়ায় গলদ রয়েছে। প্রথম কারণটা হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দুর্বলতা। এর কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বা চাকরি ক্ষেত্রেও নেতিবাচক ফলাফল উঠে আসছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অথচ এসএসসি ও এইচএসসিতে এদেরই পাসের হার অসম্ভব ভালো ছিল। যেসব ছাত্রছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে, তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারছে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলে কেন এই বিপর্যয় ঘটলো বা ঘটছে? দুটি ফলাফলের মধ্যে এতোটা ফারাক কেন? কেন পাশের হার মাত্র ৯.৮৫ ও ৬ শতাংশ হবে? এর জন্য আমরা কাকে দায়ী করবো -- স্কুল-কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা, ভর্তি পরীক্ষার সিস্টেম, প্রশ্নোত্তরের দুর্বলতা, ছাত্রছাত্রীদের বোঝার সামর্থ্য, নোট বই, কোচিং, পড়াশোনার পরিবেশ, নাকি অভিভাবকদের চাপ?

এই ফল আরো খারাপ হবে সামনের বছরগুলোতে শিক্ষার্থীরা এখন কথায় কথায় আন্দোলনে নেমে যাচ্ছেন, এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। রাতে-বিরাতে মিটিং, মিছিল করেই দিন কাটছে। মোট কথা পড়ার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে নানাভাবে। অন্যদিকে বেতন-ভাতার দাবিতে গত সাত মাসে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে আন্দোলনের মাঠেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন শিক্ষকরা। রাজধানীতে এমন কোনো শিক্ষক সংগঠন নেই, যারা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেননি।

যেখানে বছর বছর ভালো রেজাল্টের হার বাড়ছে, বাড়ছে জিপিএ, গোল্ডেন জিপিএ, সেখানে ছাত্রছাত্রীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন খারাপ রেজাল্টের কারণে ভর্তি হতে পারছে না? এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা কম, সেই আসন সংখ্যার বিপরীতে কৃতকার্য ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরো কম।
অবশ্য এসব পরিসংখ্যান আদতে শিক্ষার কোনো মান নির্দেশ করে কি? শিক্ষা এখন জিপিএ-নির্দেশক একটি সার্টিফিকেট। জিপিএ-৫ নিশ্চিত করার জন্য অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা সবকিছু করছেন। স্কুল-কলেজের ক্লাসের পরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কোচিং করছে ছাত্রছাত্রীরা। কোচিং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যতোটা না সাবজেক্ট বুঝতে পারা, তার চাইতেও বেশি পড়াকে ভাতের গোলা বানিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মুখে তুলে দেয়া।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পড়া মুখস্থ করে ছাত্রছাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামে। কে জিপিএ পেলো? কে অল্পের জন্য পেলোনা এই দিয়েই ছাত্রছাত্রীর মান নির্ণয় করা হয়। কে কতটা জানে বা বুঝে এগুলো আর তেমন বিচার্য থাকে না। এদের অধিকাংশের লক্ষ্য যদি হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, তাহলে এতো পড়াশোনা করেও ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ৯ শতাংশ পাস করলো কেন?

এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের খুঁজে দেখা উচিত ফাঁকটা কোথায়? কেন এতো এতো জিপিএ নম্বর পেয়েও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা অবধি যেতে পারছে না? তাহলে কি স্কুল-কলেজের পড়াশোনার মান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে? বিভিন্নধরনের সাজেশনস, নাকে মুখে নোট মুখস্থ করেও রেজাল্ট ভালো হচ্ছে না কেন?

বিজ্ঞাপন

স্কুল-কলেজে পড়ার সময় আমার বাবা বলতেন, “টেকস্ট বই পুরোটা পড়ো। ক্লাসের বইয়ের অধ্যায় বা টেকস্ট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে, যেখান থেকেই প্রশ্ন আসুক, তুমি কোথাও আটকাবে না। আর রেফারেন্স বই কিনে নিজেরা উত্তর তৈরি করো। এরপর কাউকে সেটা দেখিয়ে নাও। তোমাদের টিচার নোট তৈরি করে দিবে, আর তুমি তা গলধকরণ করবে, তা হবে না। একজন স্টুডেন্ট একটা বা দুটো বিষয় টিচারের কাছে এক্সট্রা পড়তে পারে, সব সাবজেক্ট কেন পড়তে হবে? সব পড়াই যদি টিচার বা গৃহশিক্ষক তোমাকে পড়িয়ে বা গুছিয়ে দেয়, তাহলে তুমি নিজে কী পড়বে? নোট নয়, তুমি রেফারেন্স বই পড়ো, কোথাও আটকাবে না।”

কথা পুরোপুরি সত্য। আমাদের পড়াশোনার সিস্টেমটা এমনই হওয়া উচিত, যেন পুরো টেকস্ট পড়তে হয়। তেমনভাবে কোনো সাজেশন দেয়া হবে না। বইয়ের যেকোনো অধ্যায় থেকে, যেকোনো ধরনের প্রশ্ন হতে পারে। নোটবই থেকে নয়, নিজের মতো করে উত্তর দিতে হবে। যে কারণে দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখে আবেদনকারীদের মধ্যে কে কত ভাল।

আমাদের দেশে শিক্ষার মানের কতটুকু উন্নতি ঘটলো, এটা বোঝাতে সাধারণভাবে পাসের হারকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পাসের হার যে শিক্ষার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না, এর প্রমাণ এইচএসসির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতা। প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করে। অথচ এসব পাস করা শিক্ষার্থীর শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর তুলতে পারে না। তাহলে গলদতো একটা আছেই, সেটা কী? শিক্ষাব্যবস্থার এই গলদটা যতোদিন পর্যন্ত না চিহ্নিত করা যাবে, ততোদিন অবস্থার কোনো উন্নতি হবে না।

বিজ্ঞাপন

উচ্চশিক্ষার অর্জনের জন্য বা উপরের ক্লাসে ভাল ফল করতে হলে শুধু পুথিগত পড়াশোনা করলেই হয় না। পরীক্ষায় পাশের পড়া একরকম, আর কোথাও নির্বাচিত হওয়ার জন্য পড়া আরেকরকম। কঠিন কঠিন নানা তত্ত্ব জানলেই হবে না, একে যথাযথ জায়গায় প্রেজেন্ট করতে হবে। অনেকে মূল বিষয়টা না বুঝেই পরীক্ষার খাতায় লিখে ফেলে। প্রাসঙ্গিক নয়, এমন বিষয়ও তুলে ধরে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রশ্নোত্তরের বিষয়বস্তু, প্রেক্ষিত খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কাজেই শুধু মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভর করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলে তা কার্যকর ফল বয়ে আনেনা। কাজেই চিন্তা প্রক্রিয়ার দক্ষতা ছাড়া কোনো জ্ঞানই, জ্ঞান নয়। ছাত্রছাত্রীদেরও তাদের কগনিটিভ নলেজ বাড়াতে হবে, শুধু মুখস্থ বিদ্যা নয়। আধুনিক যুগে শুধু জেন-জি হলেই চলবে না, ছাত্রছাত্রীদের নলেজ লেভেল বাড়াতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি, জানার পরিধি বিস্তৃত করতে হবে।

বিশ্লেষক ও গবেষক সিরাজুল হোসেন তাঁর একটি লেখায় লিখেছেন, আফ্রিকার কঙ্গোর কেঙ্গা নামে এক জাতিগোষ্ঠীর কথা। পরিবেশগত কারণে যাদের পুরো সমাজের দৃষ্টি ও মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার মধ্যে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আফ্রিকার কঙ্গোর (ডিআরসি) উত্তরে গভীর ইতুরি রেইন ফরেস্টের ভেতরে বাস করে ব্যাম্বুতি পিগমি জাতি যারা এখনও মূলত শিকারি সংগ্রাহক (হান্টার গ্যাদারার)। এদের সারা জীবন এমন একটি গভীর জঙ্গলে কাটে, যে জঙ্গল ৭০,০০০ বর্গ কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত। এই জঙ্গল এতই ঘন যে গাছের কারণে ১০-১৫ ফুটের বেশি কোন দিকেই দৃষ্টি যায় না। তাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এরা কখনও এর চেয়ে বেশি দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেনি।

বিজ্ঞাপন

১৯৫০-৬০ এর দিকে কলিন টার্নবুল নামে এক ব্রিটিশ-আমেরিকান অ্যানথ্রোপোলজিস্ট ইতুরি রেইন ফরেস্টের ভেতরে বাস করা ব্যাম্বুতি পিগমিদের নিয়ে গবেষণা করতে যান। কেঙ্গা নামে একজন তরুণ ব্যাম্বুতি পিগমিকে গবেষক টার্নবুল তার সহকারী নিযুক্ত করেন। একদিন টার্নবুলের সাথে কেঙ্গা বনের প্রান্তে চলে আসে যেখান থেকে দূরের পাহাড় দেখা যায়। কোনোদিন দূরের পাহাড় না দেখা কেঙ্গা পাহাড় দেখে প্রশ্ন করে মেঘগুলো মাটিতে নেমে গেছে কেন?

আর একবার কেঙ্গাকে নিয়ে এমন খোলা জায়গায় যায়, যেখানে দূরে কতগুলো মহিষ চরছিল। কেঙ্গা সেগুলো দেখে প্রশ্ন করে এগুলো কি পোকা? সারা জীবন যারা ১০-১৫ ফুটের বেশী দেখেনি তাদের মস্তিষ্ক পার্সপেক্টিভ থেকে দূরত্ব পরিমাপের সিনারজিস্টিক প্রক্রিয়াকরণ শেখেনি। টার্নবুল বলে এগুলো পোকা নয় এগুলো মহিষ, দূরে আছে তাই এগুলো ছোট দেখাচ্ছে। কেঙ্গা সেটা বিশ্বাস করতে চায় না।

কেঙ্গার ভুল ভাঙাতে টার্নবুল যখন তাকে হাঁটিয়ে মহিষগুলোর কাছে নিয়ে যায় তখন বিস্মিত হয় কেঙ্গা। সে বলে কোন জাদুর বলে তুমি পোকাকে মহিষ বানিয়ে ফেললে? দূরের জিনিস দেখেনি বলে কেঙ্গার মস্তিষ্কে দৃষ্টিকোণ (পারসপেকটিভ) ও দূরত্ব নিয়ে স্থির চিন্তা (কনসিসটেনসি) তৈরি হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সেই ব্যাম্বুতি পিগমিদের মতো দৃষ্টিসীমার মধ্যে যেটুকু দেখা যায়, বা যতটুকু দেখা যায়, সেটুকু দেখলে চলবে না। যেমন জিপিএ, কোচিং আর মুখস্থবিদ্যার উপর নির্ভর করে পড়াশোনা করলে ফলাফল এরকমই হবে। জ্ঞানের জগতটা অনেক বড়, বিশ্বজুড়েই জ্ঞানের এই জগত বিস্তৃত। নিজের মাথা খাটাতে না পারলে এবং মস্তিষ্ককে দক্ষ করতে না পারলে কেঙ্গাদের মতোই অবস্থা হবে সবার। বয়সে বা চিন্তায় যতো পরিণতই হোক, যতোই জিপি অর্জন করুক না কেন, সেই অদক্ষতা থেকে যাবে এবং সেই অদক্ষতা তার চিন্তা ও জীবনকে প্রভাবিত করবে।

স্কুল-কলেজে আমাদের কিছু জ্ঞান দেয়া হয়, কিছু তত্ত্ব শেখানো হয়। কীভাবে পড়বো, লিখবো, কীভাবে বেশি নাম্বার পাবো, তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরবো তা শেখানো হয়। আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা কিন্তু কিছুটা অন্যরকম। কোন একটি তত্ত্ব বা পদ্ধতি শেখানো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মূল কাজ নয়। অনেককিছু শিখে নিজের মতো করে গ্রহণ করাই হলো উচ্চশিক্ষা। আর সেই পরিসরে পা রাখতে চাইলে সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।

কোভিড কাল থেকেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নানাধরণের সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা, শিক্ষকদের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ নানা কারণে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য যে গুণগত মান দরকার, সেইভাবে নিজেকে তৈরি করতে পারছেনা। সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থানে আছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ হঠাৎ করে সিলেবাস, পড়াশোনার সিস্টেম, পরীক্ষা পদ্ধতি চেঞ্জ খুবই নেগেটিভ ফল বয়ে এনেছে শিক্ষাক্ষেত্রে। এছাড়া, সময়মতো বই দিতে না পারায় নতুন বছরের শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও শিক্ষা প্রদানের মানও দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে বিভিন্ন কারণে। বেসরকারি স্কুল-কলেজেও শিক্ষক সংকট প্রকট। শুধু পড়াশোনা ঠিকঠাক মতো চলছে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোতে, যেখানে টাকা দিয়ে শিক্ষা কেনা সম্ভব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ করা না গেলে এরকম ফলাফল বিপর্যয় চলতেই থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও পড়াশোনার মানের অবস্থা বেশ দুর্বল। এই দুর্বলতা বোঝার জন্য খুব বেশি কিছুর দরকার নাই, সামাজিক মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা ও নেত্রীদের যে বক্তব্য শুনছি, তাতেই অনুধাবন করতে পারছি পড়াশোনার তাদের অনেকের মেন্টাল হাইট কতটা। কর্পোরেটে ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা দুজন সেদিন বললো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভালো রেজাল্ট করে পাস করা ছাত্রছাত্রীদের চাকরির ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে প্রতিবছর তারা আঁতকে উঠেন। অধিকাংশরই পারফরমেন্স আশাব্যঞ্জক নয়।

এই ফল আরো খারাপ হবে সামনের বছরগুলোতে শিক্ষার্থীরা এখন কথায় কথায় আন্দোলনে নেমে যাচ্ছেন, এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। রাতে-বিরাতে মিটিং, মিছিল করেই দিন কাটছে। মোট কথা পড়ার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে নানাভাবে। অন্যদিকে বেতন-ভাতার দাবিতে গত সাত মাসে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে আন্দোলনের মাঠেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন শিক্ষকরা। রাজধানীতে এমন কোনো শিক্ষক সংগঠন নেই, যারা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেননি।
যুদ্ধে জিততে গেলে যেমন কৌশলগত মেধা থাকতে হয়, তেমনি যথাযথভাবে শিক্ষিত হতে হলেও ভালো শিক্ষাব্যবস্থা ও ভালো স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন। প্রায় চার হাজার বছর আগে ঈশোপনিষদে বলা হয়েছিল “যারা অবিদ্যা অনুশীলন করে, তারা অজ্ঞানের ঘোর অন্ধকারময় লোকে প্রবেশ করে।” আসল সত্য হচ্ছে জ্ঞান, যা অনন্ত। টিকতে হলে সেই জ্ঞানের দিকেই আমাদের যেতে হবে।

২৫ মার্চ, ২০২৫

লেখক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন