ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নাজাতের দশকে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ১০:১০ এএম, ২১ মার্চ ২০২৫

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাজারো শুকরিয়া তিনি আমাদেরকে মাহে রমজানের রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলো সুস্থতার সাথে অতিবাহিত করার সৌভাগ্য দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা এখন প্রবেশ করবো নাজাতের দশকে।

শেষ দশকে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো অধিক ইবাদত ও দানখয়রাত করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রমজানের শেষ দশদিনে ইবাদতের ক্ষেত্রে মহানবি (সা.) এতটা সচেষ্ট হতেন যেমনটি অন্য সময়ে পরিলক্ষিত হতো না। (সহিহ মুসলিম) সাধারণ দিনগুলোতে অর্থাৎ বছরের অন্য সময়ও মহানবির (সা.) ইবাদতের দৃষ্টান্ত এমন ছিল যা কোনো সাধারণ মানুষই পালন করতে পারবে না সেখানে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানে এর চিত্রই ভিন্ন হতো।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

হজরত আয়েশা (রা.) আরো বলেন, মহানবি (সা.) শেষ দশকে প্রবেশ করলে কোমর বেঁধে ইবাদতে লেগে যেতেন এবং রাতগুলোকে জীবিত করতেন আর পরিবারের সদস্যদের জাগাতেন। হাদিস থেকে এটিও জানা যায় যে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, আমলের দিক থেকে খোদা তা’লার নিকট এই দিনগুলো অর্থাৎ রমজানের শেষ দশদিনের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রিয় অন্য কোন দিন নেই।

রমজানের এই শেষ দশকে বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফে বসতেন এবং লাইলাতুল কদরের অন্বেষণে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতেন। ইতিকাফের আভিধানিক অর্থ হলো কোনো স্থানে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া বা অবস্থান করা। ইসলামি পরিভাষায় ‘ইবাদতের সংকল্প নিয়ে রোযা রেখে মসজিদে অবস্থান করার নাম ইতিকাফ’ (হিদায়া, বাবুল ইতিকাফ)।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত নবি করিম (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তার মৃত্যু পর্যন্ত এ নিয়মই ছিল। এরপর তার সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন।’ (সহিহ বুখারি) এই শেষ দশকে একজন ইতিকাফকারী দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়েন, যেন তিনি তার অভীষ্ট মনোবাসনা পূর্ণ করে ইতিকাফ থেকে উঠতে পারেন।

ইতিকাফের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরাহ পালন করার সওয়াব দান করা হবে। (শোয়াবুল ইমান) রমজানের এই শেষ দশকের একটি রাতে এসে থাকে লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্য রজনি লাভ বোধ করি মুমিনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সারা জীবন কঠোর সাধনা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে শয়তানি প্রবৃত্তিরূপে দৈত্যকে নিধন করার পর মুমিনের কাছে আসে সেই মুহূর্তটি-সেই পাওয়ার মুহূর্তটি যা আল কুরআনের সুরা কাদরে ‘লাইলাতুল কদর’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ মুহূর্তটি।

বিজ্ঞাপন

লাইলাতুল কদর বলতে আমরা সাধারণত একটি রাতকে মনে করে থাকি। ভৌগোলিক কারণে সারা দুনিয়ায় যেহেতু একই সময়ে রাত থাকে না সেজন্যে লাইলাতুল কদরকে আমাদের গণনার একটি রাত নির্ধারণ করা সঠিক বলে মনে হয় না। লাইলাতুল কদর এমন একটি সময় মুমিনের ব্যক্তিগত জীবন বা জাতীয় তথা মিল্লাতী জীবনে রাতের ন্যায় কাজ করে থাকে। মুমিন সাধনার শেষলগ্নে তার প্রভুর দিদার বা দর্শন ও সান্নিধ্য লাভ করে বাক্যালাপে ভূষিত হয়।

এ মুহূর্তটিই আসলে তার জীবনে লাইলাতুল কদর। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ মুহূর্তটি অবশ্যই মুমিনের জীবনে আসে রমজানের কঠোর সাধনার শেষ দশকে। রোজার সাধনার মাধ্যমে মুমিন পানাহার ত্যাগ করে, নিদ্রাকে কম করে দিয়ে এবং নিজের প্রজননকে সাময়িকভাবে হলেও স্বীকার করে আল্লাহর রঙে রঙিন হয়। তাই সে আল্লাহর সাথে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বাক্যালাপ করার সৌভাগ্য লাভ করে।

হাদিস পাঠে জানা যায়, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-হজরত রাসুল করিম (সা.) কদরের রাত্রি সম্বন্ধে বলেছেন ‘রমজান মাসের শেষের দশ রাত্রিসমূহে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর’ (বুখারি)। অপর এক হাদিসে হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। (বুখারি)

বিজ্ঞাপন

মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন ‘তোমাদের কাছে রমজান এসেছে। রমজান মোবারক মাস। এর রোজা আল্লাহ তোমাদের প্রতি ফরজ করেছেন। এ মাসে বেহেশতের দ্বার সমূহ উন্মুক্ত করা হয়েছে আর দোযখের দ্বারসমূহ বন্ধ করা হয়েছে এবং দুষ্কৃতকারী শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে। এ মাসের একটি রাত্রি যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত, সে সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত’ (বুখারি)।

আমরা যদি রমজানের শুরু থেকেই আল্লাহর প্রাপ্য এবং বান্দার অধিকার প্রদানের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করি এবং পুণ্যকর্ম সম্পাদন করি তাহলে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ হবে ও জান্নাতের দরজাগুলো খুলে যাবে। তাই অবশিষ্ট দিনগুলোকে বৃথা নষ্ট না করে পুণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।

ইতিমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলি অতিবাহিত হয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি নাজাতের দশকে। এই শেষ দশকে আমাদের ইবাদতে বিশেষ পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের রাতগুলো ইবাদতে রত থেকে জাগ্রত রাখতে হবে। এছাড়া পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাতসহ যত রকমের পুণ্যকর্ম আছে তাতে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শেষ দশকে গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ একটি দোয়া রয়েছে, এটি আমাদের অনেক বেশি পাঠ করতে হবে। দোয়াটির বিষয়ে হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত আয়েশা (রা.) মহানবির (সা.) কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি লাইলাতুল কদর লাভ করলে কি করবো? হজরত রাসুল করিম (সা.) তাকে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতে বললেন: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস। অতএব, আমাকে ক্ষমা করো (তিরমিজি)।

হে দয়ায়ম আল্লাহ! আপনি আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে আপনার সন্তুষ্টির চাদরে জড়িয়ে নিন আর বিশ্ব থেকে সব ধরনের অশান্তি-বিশৃঙ্খলা দূর করে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।
masumon83@yahoo.com

বিজ্ঞাপন

এইচআর/এমএস

বিজ্ঞাপন