ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রিউমর স্ক্যানার

৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের ‘অধিকাংশই হিন্দু’ দাবি সঠিক নয়

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:২৭ এএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫

৪৩তম বিসিএসের নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়াদের সবাই কিংবা অধিকাংশই হিন্দু দাবি করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাদের এ দাবি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। বরং বাদ পড়া ২০৯ জনের মধ্যে অন্তত ১২০ জন বা অধিকাংশই মুসলিম বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের দাবি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

এতে বলা হয়েছে, ‘৪৩তম বিসিএসে ২ হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে পরবর্তী সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে এক হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ দিয়ে ৩০ ডিসেম্বরে নতুন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। অর্থাৎ, আপাতদৃষ্টিতে ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত পুরোনো প্রজ্ঞাপনের তুলনায় নতুন প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে ১৬৮ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বিসিএসের তালিকায় ১৬৮ জন হিন্দু প্রার্থীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাদ পড়াদের অধিকাংশ হিন্দু বা সংখ্যালঘু দাবিতেও সংবাদ প্রকাশ করা হয়।’

৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের ‘অধিকাংশই হিন্দু’ দাবি সঠিক নয়

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘৪৩তম বিসিএসের নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ১৬৮ জনের সবাই কিংবা অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রথম প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা এমন ২০৯ জনকে নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে অন্তত ১২০ জনই বা অধিকাংশই (অন্তত ৫৭ শতাংশ) ইসলাম ধর্মাবলম্বী। একই সঙ্গে প্রথম প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া এমন প্রায় ৪১ জনকে নতুন করে যোগ করা হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচজন হিন্দু বা সংখ্যালঘু রয়েছেন।'

এ বিষয়ে গত ২ জানুয়ারিতে প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক সাময়িকভাবে ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীকে মনোনীত করে ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সুপারিশ পাঠায়। বিসিএস নিয়োগবিধি ১৯৮১ এর ৪ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রার্থীদের প্রাক-চরিত্র যাচাই-বাছাই করে সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং এজেন্সি রিপোর্ট বিবেচনায় সাময়িকভাবে ৫৯ জনসহ মোট ৯৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ২ হাজার ৬৪ জন প্রার্থীর অনুকূলে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ নিয়োগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নির্ধারণে এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর বিষয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে প্রাক-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের ‘অধিকাংশই হিন্দু’ দাবি সঠিক নয়

এনএসআই এবং ডিজিএফআই থেকে ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর উপযুক্ততা/অনুপযুক্ততা বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২৭ জন প্রার্থীর প্রাক-চরিত্র বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য (আপত্তি/অসুপারিশকৃত) পাওয়া যায়। ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে সাময়িক নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়। একই সঙ্গে তাদের বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও খোঁজখবর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জনকে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনসহ মোট ২৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট এক হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীর অনুকূলে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা সত্ত্বেও একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নাম বাদ যাওয়াদের একটি তালিকা করে রিউমার স্ক্যানার টিম। তালিকায় দেখা যায় ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা এমন ২০৯ জনকে ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এরপর বাদ যাওয়া ওই ২০৯ জনের পূর্ণ নাম অনুসারে ইসলাম ধর্মাবলম্বী এমন অন্তত ১২০ জন খুঁজে পায় রিউমার স্ক্যানার টিম। গত বছরের ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা পাওয়ার পর যারা ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা হারিয়েছেন। অর্থাৎ, নতুন প্রজ্ঞাপনে জায়গা হারানো প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৫৭ শতাংশ প্রার্থী মুসলিম।

অপরদিকে রিউমর স্ক্যানার টিম লক্ষ্য করে, এমন ৪১ জনের নাম নতুন করে ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে যুক্ত করা হয়েছে যাদেরকে ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বাদ দেওয়া হয়েছিল। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া এমন ৪১ জনের মধ্যে নামানুসারে প্রায় পাঁচজন হিন্দু বা সংখ্যালঘু রয়েছেন। অর্থাৎ, ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত ২ হাজার ৬৪ জন থেকে ২০৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে ৪১ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা পাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৯৬ জন।

১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপনে জায়গা পাওয়ার পর ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বাদ যাওয়া ২০৯ জনের মধ্যে অন্তত ১২০ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। মোট বাদ পড়া প্রার্থীদের মধ্যে যা অন্তত ৫৭ শতাংশ। নতুন করে যোগ হওয়া ৪১ জনের মধ্যে পাঁচ জন হিন্দু বা সংখ্যালঘু রয়েছেন।

গত বছরের ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নাম না থাকা সত্ত্বেও নতুন করে যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশকৃত বা সাময়িক মনোনীত ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর বিষয়েই রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে প্রাক-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাই করানো হয়েছে। সেই তালিকা থেকেই এক হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীর নিয়োগের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়।

এরই মধ্যে সাময়িক নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত ২২৭ জনের মধ্যে যে কেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে জানিয়ে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কেএসআর/এমএস