ঢাকায় ঘরের বাতাস বেশি দূষিত, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য
আরমান হোসেন (৪০)। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর মগবাজারে। তার ফ্ল্যাটটি ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের। তিনটি কক্ষে চারটি জানালা রয়েছে। রান্নাঘর, ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে ঘরের সব জায়গায় ধুলাবালিতে ভরা। বাতাসের সঙ্গে ময়লার গন্ধ তো আছেই। গন্ধ ও ধুলাবালির কারণে অতিষ্ঠ তার পরিবার।
আরমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শীতে খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নিয়মিত ঘর ঝাড়ু দিলেও তিন-চার ঘণ্টা পর ফের ধুলাবালিতে ভরে যায়। প্রতিটা দিনই অসহ্য আর বিরক্তির মধ্য দিয়ে কাটছে। জানালা বন্ধ রেখেও কোনো কাজ হয় না। একটু ফাঁকফোকর থাকলে সেখান দিয়ে ধুলা ঢোকে।’
দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আরমান হোসেন বলেন, ‘ধুলাবালির কারণে সর্দি লেগেই থাকে। তাছাড়া হাঁচি-কাশি তো নিত্যদিনের ঘটনা। এদিকে বাবার শ্বাসকষ্ট। বয়সও হয়েছে। বাবা বেশি কষ্টে থাকেন। ঢাকার প্রায় সব মানুষই এভাবে বসবাস করছে। আমরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’
মিরপুরে বন্ধুদের সঙ্গে মেসে থাকেন জোনায়েদ খান। বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। প্রতি সপ্তাহে ইনহেলার নিতে হয়। মেসে থাকায় বাসা সবসময় পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না। প্রতিনিয়ত পড়ার টেবিল, বিছানায় ধুলাবালি থাকে। বদ্ধ পরিবেশে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই। মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ হলেও ধুলা কমেনি। মাঝেমধ্যে মনে হয় ধুলাময় রাজ্যে বাস করছি।’
ঘরের গড় দূষণ মাত্রা ছিল ৭৫.৬৯ মাইক্রোগ্রাম/মিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি। কিছু ঘরের দূষণ মাত্রা ছিল ২০০ মাইক্রোগ্রাম/মিটারের বেশি, যা বাসিন্দাদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
সম্প্রতি বায়ুদূষণ ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় বাইরের বাতাসের চেয়েও বিপজ্জনক ঘরের ভেতরের বাতাস। ঘরের বাতাসে মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
গবেষণাটি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক।
গবেষণায় ঢাকায় ৪৩টি ঘরের ভেতরে দূষণের মাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে। বায়ুর মান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘরের গড় দূষণ মাত্রা ছিল ৭৫.৬৯ মাইক্রোগ্রাম/মিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
কিছু ঘরের দূষণ মাত্রা ছিল ২০০ মাইক্রোগ্রাম/মিটারের বেশি, যা বাসিন্দাদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বের অনেক শহরের তুলনায় ঢাকার ঘরের বায়ু মান অনেক বেশি উদ্বেগজনক।
দূষণের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ঘরের ভেতরে বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাইরের দূষিত বায়ুর প্রবেশ। ঘরের জানালা বা অন্যান্য ছিদ্র দিয়ে বাইরের দূষিত বায়ু প্রবেশ করে এবং অভ্যন্তরীণ বায়ুকে প্রভাবিত করে।
- আরও পড়ুন:
- ঢাকায় বাইরের চেয়ে ঘরের বাতাসে মৃত্যুঝুঁকি বেশি
- বায়ুদূষণ রোধের ৭ উপায়
- কমছে আয়ু, মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের মাশুল দিচ্ছে ঢাকাবাসী
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বে চরম বায়ুদূষণে আক্রান্ত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকা। কারণ নগরীর বেশিরভাগ ভবন পরিবেশ উপযোগী নয়। বাসা-বাড়িগুলোতে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা কম। ফলে দূষণের প্রভাব অনেক বেশি থাকে। পরিবেশবান্ধব করে যদি বাড়ি নির্মাণ করা হয় তবেই এই দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
‘মানুষের বেশিরভাগ সময় কাটে ঘরের মধ্যে। তাই ঘরের ভেতরের বায়ুর মান সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণে যেমন- ভাসমান ধূলিকণা, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ফরমালডিহাইড ও উদ্বায়ী জৈব যৌগের উপস্থিতি শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি ও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।’- স্থাপত্য পরিবেশবিদ সজল চৌধুরী
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক ও স্থাপত্য পরিবেশবিদ সজল চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আধুনিক নগরায়ণের যুগে মানুষের বেশিরভাগ সময় কাটে ঘরের মধ্যে। তাই ঘরের ভেতরের বায়ুর মান সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণে যেমন- ভাসমান ধূলিকণা, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ফরমালডিহাইড ও উদ্বায়ী জৈব যৌগের উপস্থিতি শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি ও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
‘এই সমস্যাগুলোর সমাধানে স্থাপত্য ডিজাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। স্থাপত্য ডিজাইনের মাধ্যমে ইনডোর এয়ার কোয়ালিটি উন্নত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সঠিক বায়ু চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল বাড়াতে স্থাপত্যে বড় জানালা, ক্রস-ভেন্টিলেশন ডিজাইন এবং বায়ুপ্রবাহের দিক বিবেচনা করা আবশ্যক। বাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য উইন্ডো শেড, ভেন্টিলেটর এবং আঙিনা ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসের প্রবাহ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। স্থাপত্য ডিজাইন শুধু সৌন্দর্যের বিষয় নয়, আরামদায়কও। পরিকল্পিত বায়ুচলাচল, পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার, সবুজায়ন এবং প্রযুক্তিগত সমাধানের মাধ্যমে ইনডোর এয়ার কোয়ালিটি উন্নত করা সম্ভব। একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর আবাসস্থল তৈরির জন্য স্থপতিদের পরিবেশ-সংবেদনশীল নকশা ও ব্যবহারিক সমাধান অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।’ যোগ করেন সজল চৌধুরী।
চলতি ডিসেম্বরে এরই মধ্যে একাধিকবার ঢাকার বায়ুর মান ৩০০–এর বেশি হয়ে গেছে। নভেম্বরে ঢাকার মানুষ একদিনও ভালো বা নির্মল বায়ুতে শ্বাস নিতে সক্ষম হয়নি।
ঢাকার বায়ুর মান
রাজধানীর বাতাস কতটা স্বাস্থ্যকর সেটা প্রতিদিনই আইকিউ এয়ার মান সূচকে তুলে ধরা হয়। এই মান বা স্কোর ৩০০-এর ওপরে চলে গেলে সেই বায়ুকে দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। চলতি (ডিসেম্বর) মাসে এরই মধ্যে একাধিকবার ঢাকার বায়ুর মান ৩০০–এর বেশি হয়ে গেছে। নভেম্বরে ঢাকার মানুষ একদিনও ভালো বা নির্মল বায়ুতে শ্বাস নিতে সক্ষম হয়নি।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণে ঢাকায় প্রথম ১০টি স্থানের মধ্যে শীর্ষে শাহবাগ। এর পরই মতিঝিল, আগারগাঁও, আব্দুল্লাহপুর, ধানমন্ডি-৩২, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, গুলশান-২, আহসান মঞ্জিল ও তেজগাঁও।
গবেষণায় যা আছে
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ঘরের ভেতরের বায়ু দূষণের প্রায় ৪০ শতাংশ বাইরের বায়ুর কারণে ঘটে। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে দীর্ঘ সময় রান্না করা। রান্নার সময় দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে যখন প্রতিবার রান্নার সময়কাল দেড় ঘণ্টার বেশি হয় বলে গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে।
যারা নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করেন, তাদের ঘরের দূষণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এক হাজার ২০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের ঘরে দূষণের মাত্রা বেশি ছিল বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে।
গবেষণা থেকে জানা যায়, দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। এই দূষণের ফলে শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যানসার, কম ওজনের শিশু জন্মদান, মস্তিষ্ক বিকাশজনিত সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য অবনতি এবং অপমৃত্যুর মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
গবেষণাটির প্রধান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ৪৩টি বাসায় এই গবেষণাটা করেছি। বাইরের বায়ুদূষণ আর ধুলাবালি নিয়ে সবসময় কথা হয়, গণমাধ্যমে আসে। কিন্তু ঘরের ভেতরের দূষণ নিয়ে কথা হয় না। বায়ুদূষণ পুরোটাই স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত। কারণ প্রতিটা মুহূর্তে আমরা শ্বাস নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘একটা মানুষ ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের বায়ু গ্রহণ করে। মানুষ দিনের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ঘরে থাকে। বাকি ৩০ শতাংশ পেশা অনুযায়ী ঘরের বাইরে থাকে। ১০ শতাংশ মানুষ ভ্রমণ করে। যারা গৃহিণী, শিশু ও বৃদ্ধ তারা তো সারাদিনই ঘরে থাকে। তাই বাসার বায়ু গুরুত্ব বহন করে। কোন বায়ু আমরা দীর্ঘক্ষণ নিচ্ছি, সেটা বিশুদ্ধ কি না জানাটা খুবই জরুরি। সাধারণত বৃদ্ধ, শিশু, গর্ভবতী বা শ্বাসকষ্টের রোগী আছে, তাদের ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু ঘরের বায়ু তো আরও খারাপ।’
‘গবেষণায় ঘরে গড় দূষণমাত্রা ছিল ৭৫ দশমিক ৬৯ মাইক্রোগ্রাম/মিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি। কিছু ঘরে দূষণের মাত্রা ২০০ মাইক্রোগ্রাম/মিটারের বেশি, যা বাসিন্দাদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাইরের গড় দূষণের মাত্রা ছিল ৬৯ দশমিক ৩ মাইক্রোগ্রাম।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা দূষণের উৎস হিসেবে পেয়েছি রান্না-বান্না, সিগারেটের ধোঁয়া ও কয়েল। অপরিচ্ছন্নতা থেকেও বায়ুদূষণ হয়। সেই সঙ্গে ঘরের দরজা-জানালা, ভেন্টিলেটর দিয়ে বায়ু চলাচলের অবস্থা ও চারপাশে গাছপালার অবস্থা। আমাদের গবেষণায় ছিল, ঘরে কী ধরনের গ্যাস দিনে রান্না হয়, কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, জানালা কতক্ষণ বন্ধ থাকে, কতক্ষণ খোলা থাকে। এছাড়া বাসার ভেতরের দৃশ্যটা কেমন। সেটাও তুলে ধরেছি।’
‘দেশে যত মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয় তার চার ভাগের একভাগ হয় বায়ু দূষণের কারণে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার ও ফুসফুসের সমস্যা তো আছেই। এগুলো সবই মৃত্যুঝুঁকি। দূষণের কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, মনোযোগে সমস্যা সৃষ্টি হয়।’- জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, দেশে যত মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয় তার চার ভাগের একভাগ হয় বায়ু দূষণের কারণে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার ও ফুসফুসের সমস্যা তো আছেই। এগুলো সবই মৃত্যুঝুঁকি। দূষণের কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, মনোযোগে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বায়ু হলো একটা অখণ্ড প্রবাহিত বিষয়। ঘরের বাতাস বায়ুমণ্ডলের একটা অংশ। আমরা তো বায়ুর সমুদ্রে বাস করছি। বাসা-বাড়িতে বায়ুপ্রবাহ ঠিকমতো না হলে, বাতাস এসে যদি বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকে, সূর্যের আলো প্রবেশ করতে না পারে তাহলে সেখানে দূষণের সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর রাজধানীর অধিকাংশ বাসা-বাড়ি এমনই। এজন্য বাইরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি। বাইরে দূষণের সব সূত্র বন্ধ করতে হবে।
- আরও পড়ুন:
- দেশে অকাল মৃত্যুর ২০ শতাংশেরই কারণ বায়ুদূষণ: বিশ্বব্যাংক
- শিশুদের শরীর-মনে প্রভাব ফেলছে বায়ুদূষণ, বাড়ছে রোগবালাই
যে কারণে বায়ুদূষণ
বায়ুদূষণ অধ্যয়ন গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে ঢাকায় বায়ুদূষণের পাঁচটি উৎস পেয়েছি। বিশেষ করে নির্মাণকাজ, যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, কলকারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া, ইটভাটার ধোঁয়া এবং যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা। এগুলো বন্ধ করতে পারলে দূষণ কমানো সম্ভব। সরকারকে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের যে ১৯ দফা নির্দেশনা সেটি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।’
স্থাপত্য পরিবেশবিদ সজল চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, গৃহনির্মাণে ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী, যেমন প্লাস্টিক বা নির্দিষ্ট ধরনের রঙ, বায়ুতে ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত করে। স্থপতিরা যদি পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী এবং পরিবেশবান্ধব বিল্ডিং উপাদান ব্যবহার করেন, তবে তা ইনডোর এয়ার কোয়ালিটিকে উন্নত করতে সহায়ক হবে। অভ্যন্তরীণ পরিবেশে গাছপালা রাখলে তা বায়ু পরিশোধনে সহায়ক হতে পারে। যেমন- অ্যালোভেরা, স্পাইডার প্ল্যান্ট বা পম্প লিলি ইনডোর বায়ুর গুণগত মান উন্নত করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। স্থাপত্য ডিজাইনে ‘গ্রিন ওয়াল’ বা ‘লিভিং রুফ’ অন্তর্ভুক্ত করলে তা শুধু সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, বায়ুর মানও উন্নত করে। প্রাকৃতিক আলোকায়ন বায়ুদূষণ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
- আরও পড়ুন:
- কর্মকর্তাদের সন্তানরা বিদেশে, তাই বায়ুদূষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই
- একবছরে ঢাকায় গড়ে বায়ুদূষণ বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বর্তমানে বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে গেছে ঘরের ভেতরে সব জায়গার মানুষ আক্রান্ত। এখন ঘর এবং বাইরে দুটিই মৃত্যুকূপ। শহরে প্রায়ই বাতাসের মান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-৩০০ তে পৌঁছাচ্ছে। এটার সমাধান বাইরে থেকে হওয়া উচিত। শহরের এত ঘেঁষাঘেঁষি করে ভবন গড়ে উঠেছে এক বাসায় লাগানো এসির বাতাস অন্য প্রতিবেশীর দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অনেকে এয়ার পিউরিফিকেশন লাগানোর পরামর্শ দেয়। যেটা দূষণ শুষে নেয়। কিন্তু সেটা তো ব্যয়বহুল। সব মানুষ ব্যবহার করতে পারবে না। সমাধানের বিষয় হচ্ছে বাইরের দূষণ কমাতে হবে। তবেই ভেতরের দূষণ কমবে। অপরিকল্পিত এসি লাগানো বন্ধ করতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে। ঘরের আশপাশে দূষণের যে কোনো সোর্স বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ছাদ বাগানে গুরুত্ব দিতে হবে।
আরএএস/এমআরএম/এমএমএআর/এএসএম