রেহমান সোবহান
ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও মানসম্মত শিক্ষা উভয়ই প্রয়োজন
সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান ও প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, ছাত্রনেতা হিসেবে ছদ্মবেশী রাজনীতিক মাফিয়াদের ছাত্রদের সংগঠনের আধিপত্য উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে কলুষিত করেছে, যেখানে পুনরুদ্ধারের জন্য অস্ত্রোপচারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণ: অধিকতর ন্যায়পরায়ণ সমাজের পথরেখা’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সভ্য সংঘ এই বার্ষিক বক্তৃতার আয়োজন করে।
একক বক্তৃতায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং মানসম্মত শিক্ষা উভয়ই প্রয়োজন। বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জ হলো আরও সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা। আমরা যদি আমাদের শিক্ষার এই বিভাজন বন্ধ করতে না পারি, তাহলে আমাদের সামনে আরও সামাজিক সংঘাত দেখা দেবে।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
রেহমান সোবহান বলেন, দেশের শিক্ষার সংস্কার ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সাল থেকে ছয়টি শিক্ষা কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা এই কমিশনগুলোর সুপারিশকৃত সংস্কারগুলোর কার্যকারিতা বিচার করতে পারি না। এর কারণ সেগুলো কখনই গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার মান সর্বস্তরে এতটাই খারাপ রয়েছে তা অনুসন্ধান না করেই শিক্ষা সংস্কারের জন্য আরেকটি কমিশন গঠনের পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য অগ্রসর হওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার এবং সব সম্ভাব্য নির্বাচিত সরকারকে অবশ্যই পাবলিক শিক্ষার জন্য বাজেটের ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমপক্ষে ৫-৬ শতাংশ জিডিপিতে তিনগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। শিক্ষায় এই বৃহৎ বিনিয়োগ তখনই অর্থবহ হবে যদি শিক্ষাব্যবস্থায় সুশাসনের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে ঘুস, প্রাইভেট টিউশনে শিক্ষকদের সময় বিনিয়োগ এবং শৃঙ্খলা প্রতিরোধে শিক্ষকদের সম্মিলিত পদক্ষেপগুলো মোকাবিলা করতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য হতে পারে জনশিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে নেতৃত্ব এবং সেবাকারী ব্যক্তিদের পুনরায় সম্পৃক্ত করা।
এই অর্থনীতিবিদ আক্ষেপ করে বলেন, একসময় সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আমাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, যারা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়েছেন, তারা সবাই বাংলা মাধ্যম স্কুলে, অনেক জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পর্যন্ত শিক্ষিত। আজ বাংলাদেশের শাসক শ্রেণির সরকারি শিক্ষার মান উন্নয়নে আর কোনো অংশীদারত্ব নেই। কারণ তাদের ছেলেমেয়েরা বা নাতি-নাতনিরা মানসম্পন্ন ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিত হয়েছে, হচ্ছে এবং আশা করবে। তবে কিছু অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা তাদের সন্তানদের বিদেশের পরিবর্তে বাংলা মাধ্যম স্কুল এবং ঢাকা বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে এই প্রবণতা থেকে দূরে সরে যেতে পারেন।
এসময় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, শিক্ষায় গণতন্ত্রায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা গণতন্ত্রায়িত না হলে মানুষ কীভাবে গণতন্ত্রী হবে? রাজনীতিবিদদের কখনোই দেখিনি চিন্তাশীল লোকের কথা শোনেন। কারণ রাজনীতিতে উচ্চশিক্ষিত লোক নেই। মানুষের হৃদয়কে শৈশবে আপ্লুত করতে পারলে তারা সারা জীবনের জন্য সুরক্ষিত হন। ১০টি উজ্জীবিত মানুষ বেরিয়ে এলে একটি জাতির ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে।
এসএম/এসআর