সিজিএস সংলাপে বক্তারা
রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না
সংস্কার করতে হলে পুলিশকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যে ঘাটতি আছে। পুলিশকে বর্তমান প্রযুক্তিগুলো শেখাতে হবে। জনগণেরও পুলিশকে সাহায্য করতে হবে। তবে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় সমর্থন ছাড়া পুলিশ সংস্কার কার্যকর হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক সংলাপে এ অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা। সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংলাপের শুরুতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সুশাসনের অভাব। সংস্কারের কথা আমরা অনেক শুনি, কিন্তু বাস্তবতার আড়ালে সংস্কার এখন এক ধরনের ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অন্তর্বর্তী সরকার পারছে না। জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারছে না, পুলিশ মনোবল হারিয়ে ফেলেছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন
- কমিশনের খসড়া সুপারিশ: আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
- লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
- হর্ন বাজালেই মামলা, বন্ধ হচ্ছে ‘মোটরসাইকেল ফ্যামিলি রাইড’
আলোচনায় অংশ নিয়ে মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘সার্বিকভাবে পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সংস্কার করতে হবে, শুধু পুলিশের ক্ষেত্রেই নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে কমিশনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যা করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, পর্যালোচনা প্রক্রিয়া আনতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল তৈরি করতে হবে। অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোকে সাহায্য করতে হবে, যেন ওয়াচ ডগ হিসেবে কাজ করতে পারে। জনগণকে তাদের দাবি তুলে ধরতে হবে যেন সেই দাবিগুলো তারা পূরণ করতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বিগত সরকার এমন আভাস দিয়েছে যে তারা ক্ষমতায় না থাকলে অনেক মানুষ মারা যাবে। আমাদের পুলিশের সেবা নাকি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ দরকার—এখানে কাজ করতে হবে। পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কার করতে হবে যেন ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ না হয়। পুলিশের কাজ সেবা করা, এটি সব রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে।
আরও পড়ুন
- বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে পুলিশ বড় অপরাধ করেছে: আইজিপি
- ব্যাংকে ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় মামলা, আসামিদের রিমান্ড চাইবে পুলিশ
পুলিশের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি এম এনামুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের আদেশের বিরুদ্ধে বলার সাহস যদি না থাকে, তবে পুলিশ বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, আগে যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তার প্রয়োগ হয়নি। তাই এবার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, পুলিশকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য মানবাধিকার সনদ মানতে হবে এবং আমাদের যা নিয়ম আছে তা অনুসরণ করতে হবে। পুলিশের কাঠামো ঠিক করতে হবে। রাজনীতির সংস্কার করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলো এখানে কাজ করতে পারে। রাষ্ট্রব্যবস্থার যে পচন ধরেছে তার সংস্কার করতে হবে। রাজনীতি দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা ও বিকাশের মনোভাব আনতে হবে।
ব্যবসায়ী এ কে আজাদ বলেন, বায়ান্ন থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের তুলনা করে দেখেন, তার উন্নতি হয়েছে নাকি অবনতি? পুলিশকে এ পর্যায়ে কে নিয়ে গেলো? এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো করে থাকে। পুলিশকে অমানবিক কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। র্যাবকে বিলুপ্ত করতে হবে। এগুলো না করলে এটা চলতেই থাকবে।
এসএম/এমএএইচ/