পরকীয়ার জেরে কীটনাশক খাইয়ে মা-মেয়েকে হত্যা করেন বিধান
বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল নম্বরের সূত্রে খুলনার মাধুরী বিশ্বাসের (৩৬) সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান পটুয়াখালীর বিধান দাস (২৫) নামের এক যুবক। চার-পাঁচ মাস সম্পর্ক চলার পর বিয়ের দাবিতে সাত বছরের কন্যাসন্তান শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে খুলনা থেকে পটুয়াখালীতে বিধানের কাছে চলে যান মাধুরী।
সেখান থেকে মা-মেয়েকে লঞ্চযোগে ঢাকায় আনার সময় সুকৌশলে পানির সঙ্গে ঘাস মারার কীটনাশক খাইয়ে তাদের হত্যা করেন বিধান।
এ হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন পর মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ার থ্রি অ্যাঙ্গেল ডক এলাকা থেকে বিধান দাসকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পটুয়াখালী জেলার দশমিনার বিধান দাস বাল্কহেডের ইঞ্জিন শ্রমিক। চার-পাঁচ মাস আগে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে খুলনার পিংকু মজুমদারের স্ত্রী মাধুরী বিশ্বাসের মোবাইল নম্বর নিয়ে কল করেন। ধীরে ধীরে বিধান ও মাধুরীর মধ্যে সখ্য গড়ে এবং একপর্যায়ে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
- আরও পড়ুন
পরকীয়া প্রেমিকসহ দেবরকে হত্যা, দুই ভাবি গ্রেফতার
পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বামীর গলায় ব্লেড চালালেন স্ত্রী
ডিসি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, এরপর মাধুরী বিধানকে বিয়ের জন্য চাপ দেন, কিন্তু বিধান রাজি হন না। গত ২৮ নভেম্বর মাধুরী তার সাত বছরের মেয়ে শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে খুলনা থেকে বাসযোগে বরিশালে বিধানের সঙ্গে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। সারারাত একসঙ্গে থেকে পরদিন সকালে বিধান পারিবারিক কাজ নিয়ে ব্যস্ততার কথা বলে পটুয়াখালী চলে যান। তিনি মাধুরীকে বলেন তিনিও যেন পটুয়াখালী চলে আসেন, এরপর সেখান থেকে তারা একসঙ্গে ঢাকা যাবেন। এরপর থেকে বিধান পরিকল্পনা সাজাতে থাকেন কীভাবে মাধুরীকে তার জীবন থেকে সরানো যায়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ৪ ডিসেম্বর সকালে দশমিনা বাজারের নলখোলা বন্দরের একটি দোকান থেকে ঘাস মারার কীটনাশক কেনেন বিধান। ওইদিন বিকেলে বিধান, মাধুরী ও তার মেয়ে শ্রেষ্ঠাসহ লঞ্চযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। লঞ্চ ছাড়ার পর খাওয়া-দাওয়া শেষে শ্রেষ্ঠা ঘুমিয়ে পড়লে বিধান ও মাধুরী অন্তরঙ্গ সময় কাটান। এরপর বিধান মাধুরীকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বলে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বিষ মেশানো পানি পান করতে দেন এবং মাধুরী তা পান করেন। পরে শ্রেষ্ঠা ঘুম থেকে উঠলে তাকেও একই কীটনাশক খাওয়ানো হয়।
কীটনাশক খাওয়ানোর পর দুজনই দুবার করে বমি করেন। পরদিন ৫ ডিসেম্বর সকালে লঞ্চটি সদরঘাট টার্মিনালে পৌঁছালে বিধান মাধুরী ও শ্রেষ্ঠাকে এক জায়গায় বসিয়ে খাবার আনার কথা বলে পালিয়ে যান।
পরে অজ্ঞানতনামা এক ব্যক্তি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সামনে মাধুরী ও তার মেয়েকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিকিৎসার জন্য সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাধুরীকে মৃত ঘোষণা করেন। শ্রেষ্ঠাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর চিকিৎসার সুবিধার্থে শ্রেষ্ঠাকে তার আত্মীয়রা গোপালগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। গত ১৪ ডিসেম্বর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্রেষ্ঠার মৃত্যু হয়।
লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন আরও বলেন, এ ঘটনায় ৬ ডিসেম্বর নিহত মাধুরীর বড় ভাই নারায়ণ বিশ্বাসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। মামলা রুজুর পর সন্দেহভাজন হিসেবে বিধান দাসের সন্ধান পায় পুলিশ। এরই পেরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বিধান দাসকে গত ১৭ ডিসেম্বর গজারিয়ার থ্রি অ্যাঙ্গেল ডক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বিধান এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায় স্বীকার করেন।
টিটি/ইএ/জেআইএম