এক মিছিলেই অনিশ্চিত জীবন আমিরাত ফেরত প্রবাসীদের
‘খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। আসার সময় সঙ্গে কোনো কিছু নিয়ে আসতে পারি নাই। জমানো টাকাও নাই। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। জিনিসপত্রের এত দাম, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তো কোনো আয়-রোজগারও নাই।’ কথাগুলো কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ারের।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিছিল করে সাজা হয় তার। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রচেষ্টায় আমিরাত সরকার আনোয়ারসহ অন্যদের মুক্তি দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।
আনোয়ার জানান, তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দেশে ফেরার পর থেকেই পরিবার নিয়ে অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
আনোয়ার গত ১৯ জুলাই আবুধাবিতে আন্দোলন করেন। আবুধাবির আইন সম্পর্কে জানলেও দেশে চলে আসতে হবে, এটা তিনি জানতেন না।
আনোয়ার বলেন, ‘এখন সরকার যদি আমাদের দিকে তাকিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে কিছু পয়সা জমিয়ে যেতে পারবো। এছাড়া ইউরোপে যাওয়ার সামর্থ্য নাই।’
আরও পড়ুন
- যারা বিদেশে আন্দোলন করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা: আসিফ মাহমুদ
- আমিরাতে আরও ৭৫ বাংলাদেশিকে সাধারণ ক্ষমা
- আমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশির মুক্তি: ‘কূটনৈতিক জয়’ বললেন হাসনাত
- বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী সংযুক্ত আরব আমিরাত
দুবাই থেকে ফিরেছেন সিলেটের মাঈদুল ইসলাম। পরিবারসহ থাকতেন দুবাইয়ে। আন্দোলন করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান মাঈদুলের ভাই জামাল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ভাই প্রায় ২০ বছর ধরে দুবাই থাকেন। ওখানে তার ব্যবসা ছিল। তিনি ওখানে বিয়েও করেছিলেন। এখন দেশে এসে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি আন্দোলন করেননি। আন্দোলন করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তো পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।’
জামাল বলেন, ‘ওখানকার বাংলাদেশের হাইকমিশনের দেওয়া তথ্যে আমার ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার ভাই তো অনেক পুরাতন প্রবাসী, তিনি ওই দেশের নিয়ম-কানুন জানেন। যারা নতুন তারা হয়তো ভুল করতে পারেন। কিন্তু আমার ভাই নিয়মনীতি সম্পর্কে সচেতন।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের ক্ষমাপ্রাপ্ত আরেক ব্যক্তি আহসান হাজারী বলেন, ‘২০২৩ সালে দুবাই গিয়েছিলাম। দেড় বছর শারজাহ ছিলাম। আমার চাকরি ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এই ঝামেলায় পড়ে গেলাম। আমি খুব বেশি কাজও জানি না। ব্যবসা করার মতো অবস্থাও নেই। আপাতত বেকারই আছি। ভবিষ্যতে কী করবো জানি না। আমি ওখানে যে কাজ করতাম, মোটামুটি দক্ষই ছিলাম। ওখানে থাকলে ভালো জায়গায় যেতাম।’
‘বিদেশে যাওয়ার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। আবার অন্য কোনো দেশে যাওয়ার মতো টাকাও নেই। সরকার যদি আমাদের স্বল্প খরচে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে ভালো হয়।’ যোগ করেন আহসান হাজারী।
ক্ষমাপ্রাপ্ত প্রবাসীরা উপসাগরীয় সহযোগী সংস্থাভুক্ত (জিসিসি) ছয় দেশ বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
যে কারণে গ্রেফতার হন বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে গত ১৯ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকটি সড়কে বড় আকারের মিছিল বের করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সেদিন দেশটির পুলিশ তাদের সতর্ক করলেও বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন করেন। এ কারণে ৫৭ জন বাংলাদেশিকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর ২১ জুলাই দেশটির আদালত বিক্ষোভকারী বাংলাদেশিদের সাজা ঘোষণা করেন। তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পরে একই অভিযোগে আরও ১৩১ জনকে গ্রেফতার করে আরব আমিরাত পুলিশ। কিন্তু সাজা দেয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মনসুর বিন যায়েদ আল নাহিয়ানের পক্ষ থেকে দণ্ড মওকুফের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে ক্ষমাপ্রাপ্ত প্রবাসীরা চলতি বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দেশে ফেরেন।
আরও পড়ুন
- আমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশির সাজা, মুক্তির উপায় কী?
- আমিরাতে দণ্ডিত ৫৭ জনসহ সব বন্দির মুক্তি চেয়ে চিঠি
- রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেই পাল্টে যায় আমিরাতে সাজাপ্রাপ্তদের ভাগ্য
- দৈনিক রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশিকে ভিসা দিচ্ছে সৌদি আরব
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ১৮৮ জন বাংলাদেশি প্রবাসীর মধ্যে ১৮৪ জন দেশে ফিরেছেন। বাকিরা শিগগির দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরার পর পরিবার নিয়ে হঠাৎ করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। অন্যদিকে ক্ষমাপ্রাপ্ত এই প্রবাসীরা উপসাগরীয় সহযোগী সংস্থাভুক্ত (জিসিসি) ছয় দেশ বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আরব আমিরাতের আইনে যা বলা আছে
সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সভা-সমাবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। দেশটির দণ্ডবিধি, ২০২১ এর ২১২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যে সব ব্যক্তি দাঙ্গা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে মিছিল, মিটিং বা প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিবে, চেষ্টা করবে অথবা উসকানি দেবে তাদের এই আইন অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেবে আদালত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু এই ঘটনাটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন ভঙ্গ এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। এর ফলে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত বা জিসিসিভুক্ত অন্য দেশে আর প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে আরব আমিরাত যদি তাদের ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে তবে এ সময় শেষে হয়তো তারা ফিরে যেতে পারবেন।
‘চিঠিগুলো নিয়ে আমরা দুবাইয়ের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবো। আশা করি, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে তাদের ক্ষমার ব্যবস্থা করেছেন, সেভাবে আবার বলবেন, যাতে লোকগুলোকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এটা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দেখা যাক কী হয়।’- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া অণুবিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামিল খান
প্রবাসে আবার ফেরার সুযোগ কতটা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোতে আইন অমান্য, চুরি কিংবা আকামা বাতিল হলেই প্রবাসীরা অবৈধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ওই দেশে তারা আর ঢুকতে পারেন না। ওই সব দেশে পাঁচজন একসঙ্গে চলতে পারেন না। বিনা অনুমতিতে সভা সমাবেশ একদম নিষিদ্ধ। তারা রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য এই আইনকানুন শক্ত করে রাখে।
এদিকে ফেরত আসা এসব প্রবাসী পুনরায় ফিরে যেতে পারবেন কিনা সেটি নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। এদের অনেকেই ঋণের বোঝা, বেকারত্ব, অসচ্ছলতায় পরিবার নিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
আরও পড়ুন
- বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হবে
- অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে আনার দাবি
- আমিরাতে সোয়া ৩ কোটি টাকার লটারি জিতলেন নোয়াখালীর রুবেল
- মালয়েশিয়া থেকে ফিরতে নিবন্ধন করেছেন ৩১ হাজার বাংলাদেশি
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া অণুবিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামিল খান জাগো নিউজকে বলেন, আরব আমিরাত ও জিসিসি কান্ট্রির আইন অনুযায়ী এরা হয়তো আর দুবাইতে ঢুকতে পারবেন না। পাশাপাশি জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতেও ঢুকতে পারবেন না। আরব আমিরাতে কাউকে শাস্তি দেওয়া হলে সে তথ্য জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর কাছেও শেয়ার করা হয়। এই আইন এখনও বলবৎ আছে। যারা সাজার পর ফিরে এসেছেন ইমিগ্রেশনে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে দেওয়া হয়। পরে এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করলে তাদের আর জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
মোস্তফা জামিল খান বলেন, যারা ফেরত আসছেন এদের অনেকে পুনরায় বিদেশ যেতে চাচ্ছেন। এরই মধ্যে আমরা কয়েকটা চিঠি পেয়েছি। চিঠিগুলো নিয়ে আমরা দুবাইয়ের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবো। আশা করি, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে তাদের ক্ষমার ব্যবস্থা করেছেন, সেভাবে আবার বলবেন, যাতে লোকগুলোকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এটা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দেখা যাক কী হয়।’
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা প্রবাসী নেটওয়ার্কের মুখপাত্র আরাফাত ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় ওমানেও একই অপরাধে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ভিসাও বাতিল হয়ে গেছে। যদি তাদের পাসপোর্টে কত বছরের জন্য নিষিদ্ধ সেটা উল্লেখ করা থাকে, তাহলে নিষিদ্ধ সময়ের পর তারা যেতে পারবেন। ভুক্তভোগী অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, দুবাই ইমিগ্রেশনে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে দেওয়া হয়েছে। ফলে পুনরায় উপসাগরীয় দেশে যাওয়াটা তাদের জন্য অনিশ্চিত। কারণ যে দেশ থেকেই ভিসা বাতিল হোক, উপসাগরীয় ছয় দেশে তারা আর যেতে পারবে না। তবে এখানে জটিলতা আছে। তারা যেহেতু ক্ষমাপ্রাপ্ত সেক্ষেত্রে তাদের বিষয়ে দুই দেশের যৌথ সমন্বয়ে বিষয়টি সমাধান করা যেতে পারে। তাদের শাস্তি কমিয়ে আনা যায় কি না সেটাও করা যেতে পারে।’
‘যারা গ্রেফতার হয়ে ফেরত আসছেন হয়ত আইন অনুযায়ী আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দুবাই যেতে পারবেন না। অন্যদিকে তাদের পাসপোর্টে যদি নো-এন্ট্রি টু জিসিসি কান্ট্রি সিল বা দুবাই ইমিগ্রেশন যদি তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে দেয়, তাহলে এটা দুই দেশের সমন্বয়ে সমাধান করা হবে।’- অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, ‘যারা গ্রেফতার হয়ে ফেরত আসছেন হয়ত আইন অনুযায়ী আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দুবাই যেতে পারবেন না। অন্যদিকে তাদের পাসপোর্টে যদি নো-এন্ট্রি টু জিসিসি কান্ট্রি সিল বা দুবাই ইমিগ্রেশন যদি তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে দেয়, তাহলে এটা দুই দেশের সমন্বয়ে সমাধান করা হবে। তাদের তালিকা ধরে প্রত্যেকের জন্য ক্লিয়ারেন্সের ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে তারা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশে যেতে চাইলে তাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বিএমইটি থেকে চিঠি ইস্যু করা যেতে পারে। চিঠিতে তারা যে ক্ষমাপ্রাপ্ত এবং অন্য কোনো আইনি জটিলতা নেই, সেটি উল্লেখ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে তারা ইমিগ্রেশনে বাধাগ্রস্ত হবেন না। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের সব দূতাবাসে এই চিঠিগুলো পাঠানো যেতে পারে। তবু প্রশ্নের সম্মুখীন হলে তারা মুচলেকা দিতে পারেন, সেটি বিএমইটি তাদের চিঠি বানিয়ে দিতে হবে।’
আসিফ মুনির বলেন, ‘এই ১৮৮ জনকে একসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেটি হতে পারে কোনো এজেন্সি বা সরকারি বোয়েসেলের মাধ্যমে। তাহলে এই মানুষগুলো পুনরায় কাজে যুক্ত হতে পারবেন। এজন্য তাদের দূতাবাস ও আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে এটার সমাধান করা যেতে পারে। হয়ত সময় লাগবে। কিন্তু এটার সমাধান দ্রুত করা উচিত।’
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এদের তো আইন অনুযায়ী অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমাদের সরকারের প্রচেষ্টায় তারা দেশে আসছে। এখন তাদের জন্য বিকল্পভাবে অন্য দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত নতুবা স্থানীয়ভাবে দেশে তাদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।’
‘যারা ফেরত আসছেন তাদের বেশিরভাগই সে দেশে কাজে দক্ষ হয়ে উঠছেন। এজন্য তাদের দক্ষতা অনুযায়ী আমাদের দেশে কাজের ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তারা বেকার না থাকে। এভাবে প্রতিটি সেক্টরে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করা উচিত। অন্যদিকে তাদের কিছু টাকা দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা ব্যবসা করতে পারেন।’- বাংলাদেশি প্রবাসী নেটওয়ার্কের মুখপাত্র আরাফাত ইসলাম
ফেরত আসাদের কর্মসংস্থান জরুরি
বাংলাদেশি প্রবাসী নেটওয়ার্কের মুখপাত্র আরাফাত ইসলাম বলেছেন, ‘যারা ফেরত আসছেন তাদের বেশিরভাগ সে দেশে কাজে দক্ষ হয়ে উঠছেন। এজন্য তাদের দক্ষতা অনুযায়ী আমাদের দেশে কাজের ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তারা বেকার না থাকে। এভাবে প্রতিটি সেক্টরে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করা উচিত। অন্যদিকে তাদের কিছু টাকা দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা ব্যবসা করতে পারেন।’
আরও পড়ুন
- বাংলাদেশিকে হত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের ২ নাগরিক অভিযুক্ত
- লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরও ১০৫ জন
- বিদেশি কর্মী সীমিত করছে মালয়েশিয়া
- বিনামূল্যে পাওয়া যাবে বিএমইটি স্মার্ট কার্ড
- সৌদি আরবে আরও ১৯ হাজার প্রবাসী গ্রেফতার
প্রবাসীদের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির জাগো নিউজকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের আইন খুবই শক্ত। আমাদের দেশের আইনের মতো না। যারা যাচ্ছে খেয়াল রাখতে হবে তারা সে দেশের আইনকানুন জানেন কি না? সেখানে বিক্ষোভ-মিছিল ও প্রতিবাদ করা যায় কি না? আমরা জানি যে মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণত ট্রেড ইউনিয়ন করা, প্রতিবাদ করা যায় না। কিন্তু এসব আইন অনেক প্রবাসী জানেন না। এই দায়টা কিন্তু আমাদের সরকারের। ভবিষ্যতে যেন এরকম পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য কর্মীরা যে দেশে যাবে সে দেশের আইন সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রবাসী কল্যাণ বা বিএমইটি প্রি-ডিপার্চারে কর্মীদের যে ব্রিফিং করে, সেখানে কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে সেই দেশের আইন শেখানো হয় বা মান্য করার কথা বলা হয়, এটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।’
‘নতুন কর্মীরা যাওয়ার আগে তাদের যে ওই দেশের ভাষা বা আইন নিয়ে সচেতন করা দরকার সেটুকু আমাদের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিশ্চিত করতে পারছে না। কর্মীদের বিমানে ওঠার আধা ঘণ্টা আগে যে গৎবাঁধা ব্রিফিং দেওয়া হয়, এগুলো কর্মীদের মাথায় থাকে না। ওই দেশে কী করতে পারবেন, কী পারবেন না এটা অবশ্যই কর্মীদের জানাতে হবে। এসব নিয়ম তো সরকার জানে। আমি মনে করি, রিক্রুটিং এজেন্সি, বিএমইটি, মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ার প্রভাব কর্মীদের মাঝে পড়ে।’ যোগ করেন আসিফ মুনির।
আরএএস/এসআইটি/এমএমএআর/এমএস