ভয়েস কলে ফ্লোর প্রাইস কমানো-কলড্রপ শূন্যে নামানোর দাবি
ভয়েস কলের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার দাবিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এ চিঠি দেন সংগঠনের নেতারা।
চিঠিতে ভয়েস কলের ফ্লোর প্রাইস কমানো, কলড্রপ শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা এবং প্রতি সেকেন্ডে পালস (সেকেন্ডপ্রতি চার্জ পলিসি) নির্ধারণে বিটিআরসিকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
চিঠিতে গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন উল্লেখ করেছে, ভয়েস কলের ফ্লোর প্রাইস ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ পয়সা করা হয়। সে সময় আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু বিটিআরসি; এমনকি সরকার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে ফ্লোর প্রাইস বৃদ্ধি করে। যার ফলে অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। সেবার মান না বাড়লও গ্রাহকের খরচ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি ভয়েস কলের পরিমাণ দিন দিন কমে আসে।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে সিলিং প্রাইস ২ টাকার সঙ্গে কোনো কোনো অপারেটর ভ্যাট সার্ভিস যুক্ত করে কল রেট আদায় করছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে ভয়েস কল যেখানে ফ্রি, সেখানে বাংলাদেশে ফ্লোর প্রাইস ৪৫ পয়সা এবং সিলিং প্রাইস ২ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এটি দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে অসামঞ্জস্য ও বৈষম্য তৈরি করছে।
মুঠোফোন গ্রাহকদের যত দাবি
সাশ্রয়ী কলরেট নিশ্চিতকরণ: বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস (ন্যূনতম কলরেট) অনেক গ্রাহকের কাছে ব্যয়বহুল। ফ্লোর প্রাইস কমিয়ে বা তুলে নিয়ে সবার জন্য সহজলভ্য কলরেট নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করতে ফ্লোর প্রাইসের সীমা কমানোর প্রয়োজন। সম্ভব হলে ভয়েস কল ফ্রি করে দেওয়া।
গ্রামীণ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধা: গ্রামীণ এলাকাগুলোতে অধিকাংশ মানুষ মোবাইল যোগাযোগে নির্ভরশীল। ফ্লোর প্রাইস কমিয়ে তাদের জন্য বিশেষ কল প্যাকেজ চালু করার দাবি জানিয়েছে গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
প্রতি সেকেন্ডে চার্জ পলিসি: প্রতি সেকেন্ডভিত্তিক চার্জিং সিস্টেম আরও ব্যাপকভাবে কার্যকর করা। এতে গ্রাহকরা তাদের ব্যবহার অনুযায়ী ন্যায্য বিল দিতে পারবেন।
কলড্রপ বন্ধে দাবি
বিটিআরসির গাইডলাইন অনুযায়ী—২ শতাংশ কলড্রপ হতে পারে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী—বিটিআরসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস করি। এ ব্যাপারে নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি।
গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ: কলড্রপ হলে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রতি কলড্রপের জন্য ফ্রি মিনিট বা ডাটা দেওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকরা ক্ষতিপূরণ পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নেটওয়ার্ক উন্নয়ন: কলড্রপের প্রধান কারণ নেটওয়ার্ক দুর্বলতা। মোবাইল অপারেটরদের পাশাপাশি টাওয়ারকে, এনটিটিএন অর্থাৎ ইকোসিস্টেমকে বাধ্য করা উচিত নেটওয়ার্কের মান উন্নত করতে।
বিশেষ করে গ্রামীণ এবং দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বেশি জরুরি বলে আমরা মনে করছি।
বিটিআরসির মনিটরিং: বিটিআরসি যেন নিয়মিতভাবে মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক গুণগত মান পরীক্ষা করে এবং গ্রাহকদের অভিযোগ দ্রুত সমাধান করে। গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তি দ্রুত না হওয়ায় বর্তমানে গ্রাহকরা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ এবং আস্থা হারিয়ে ফেলছে। তাই কমিশনকে গ্রাহকের আস্থা আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আপনার নেতৃত্বে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
কলড্রপের সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন: অপারেটরদের প্রতি মাসে কলড্রপের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এবং এর সমাধান পরিকল্পনা প্রকাশ করতে বাধ্য করতে হবে। প্রত্যেক মাসে কত বাকি পরিমাণ কলড্রপ হয়েছে এবং কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ তার বিপরীতে প্রদান করেছে তা অবশ্যই বিটিআরসির ওয়েব সাইটে কিংবা বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করতে হবে।
তাছাড়া ফেয়ার বিলিং সিস্টেম, ট্যাক্স কমানো, গ্রাহকসেবার উন্নয়নে কাস্টমার কেয়ার সেবা আরও সহজ ও কার্যকর করার জন্য চাপ প্রয়োগ এবং বিটিআরসিতে গ্রাহক সেবা প্রাপ্তিতে ওয়ান স্টপ কাস্টমার সার্ভিস কর্নার স্থাপন করার দাবি জানিয়েছে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
এএএইচ/এমআরএম