ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা সম্ভব হবে না’

ইসমাইল হোসাইন রাসেল | প্রকাশিত: ০৮:১৪ এএম, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় উদ্বেগে ফেলেছে অভিবাসীদের। অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি ও যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্বপ্রাপ্তির যে আইন তা বাতিল ঘোষণার শঙ্কার বিষয়টি অনেককে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

এসব বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইমিগ্রেশন ল’ ফার্ম রাজু ল’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল অ্যাটর্নি রাজু মহাজন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইসমাইল হোসাইন রাসেল।

জাগো নিউজ: ট্রাম্প প্রশাসন দয়িত্ব নেওয়ার পর অভিবাসীদের বিষয়ে কড়াকড়ি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশ-ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের জন্য একটি বড় আতঙ্কের বিষয় হতে পারে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। এটি আসলে কতটা জটিল হবে বলে মনে করেন?

রাজু মহাজন: এটা জটিল তো হবেই। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প একটা বিশাল ক্ষমতা নিয়ে এবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। গতবার যখন তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন অনেকটা অনভিজ্ঞ ছিলেন, প্রশাসন সম্পর্কে তার তেমন ধারণা ছিল না। এবার সেটি আছে। এর বাইরে হাউজ, কংগ্রেসসহ সব জায়গায় তাদের মেজরিটি। সাধারণত রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরা ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে জিতলেও পপুলার ভোটে জেতেন না। এবার তিনি পপুলার ভোটেও জিতেছেন। কাজেই একটি বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন।

এটা জটিল তো হবেই। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প একটা বিশাল ক্ষমতা নিয়ে এবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। গতবার যখন তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন অনেকটা অনভিজ্ঞ ছিলেন

ফলে এখানে তার একটি ক্ষমতা থাকবেই এবং কিছু বিষয় তো প্রয়োগ হবেই। কিন্তু এটি বলে ‘বার্থ রাইট সিটিজেনশিপ’, যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম হলেই সে জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়। এটা একটা সাংবিধানিক বিষয়, সুতরাং এটি পরিবর্তন করা খুবই কঠিন। এটার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ স্টেটের পার্লামেন্টে পাস করতে হবে। তারপর সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ পাস করতে হবে এবং হাউজে পাস করতে হবে। তারপরও সুপ্রিম কোর্টে এটা নিয়ে বিচার-আচার হতে পারে। আমার যেটা মন্তব্য- এটা পুরোপুরি বাতিল হবে না।

‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা সম্ভব হবে না’

ট্রাম্প যেহেতু প্রেসিডেন্ট, তার হাতে অনেক ক্ষমতা থাকে। ফলে উনি প্রক্রিয়াটা অনেক জটিল করে দিতে পারেন। এখন যেমন অনেক বাংলাদেশি, ভারতীয় বা চায়নিজসহ অনেক দেশ থেকে মায়েরা যখন গর্ভবতী হয় তখন বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে। কারণ জন্মের পরপরই জন্মসনদ পায়, সেটির পরই পাসপোর্টের আবেদন করা যায়। সাধারণত দু-তিন সপ্তাহ বা এক মাসের মধ্যেই পাসপোর্ট চলে আসে। পরে পাসপোর্টসহ বাচ্চাকে নিয়ে বাবা-মা চলে আসে। এটাকে অনেকটা ‘বার্থ ট্যুরিজম’ বলে।

এখন প্রায় ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী আছে। ট্রাম্প বলছেন সবাইকে বের করে দেবেন। কিন্তু আমার মনে হয় না তিনি সেটি করতে পারবেন। কারণ এই প্রক্রিয়া অনেক ব্যয়বহুল।

জাগো নিউজ: ‘বার্থ ট্যুরিজম’ যেটি বললেন সেটি কি তাহলে বাধার মুখে পড়তে পারে?

রাজু মহাজন: এই বার্থ ট্যুরিজম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে। ট্রাম্প হয়তো সিস্টেমটা এমন করে দিল যে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বার্থ সার্টিফিকেট পেলেও পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়া যাবে না। পাসপোর্ট পেতে হয়তো দু-তিন বছর অপেক্ষা করা লাগতে পারে। এরকম সিচ্যুয়েশনে যেটা হবে বাবা-মা বাচ্চা নিয়ে চলে আসতে বাধ্য হবে কিন্তু পাসপোর্ট পাবে না। পরবর্তীসময়ে হয়তো পাসপোর্ট পাবে তবে সেটি সহজ হবে না। ইমিগ্রেশনের সব জায়গায়ই আগামী চার বছর পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব না হলেও উনি প্রক্রিয়াগুলো আরও কঠিন করে ফেলবেন। বিশেষ করে অভিবাসী যারা, অ্যাসাইলামপ্রত্যাশীদের জীবন আরও কঠিন করে ফেলবেন বলে মনে হচ্ছে।

জাগো নিউজ: তার মানে কি জন্মসূত্রে নাগরিত্ব বন্ধ হচ্ছে না?

রাজু মহাজন: আমার মতামত হলো জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা একেবারেই সম্ভব হবে না। কারণ এটা সাংবিধানিক বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান পরিবর্তন খুবই কঠিন। এটা হবে না।

জাগো নিউজ: অভিবাসীদের অনেকেই ট্রাম্পের জয়ে চিন্তায় পড়েছেন। বিশেষ করে সেখানে অ্যাসাইলামে থাকা অনেকে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে অবৈধ অভিবাসী হবেন কারা?

রাজু মহাজন: যারা অ্যাসাইলাম চান তারা সঙ্গে সঙ্গে অবৈধ হন না। এটির লম্বা একটি প্রসেস আছে। প্রথমে ইউএসসিআইএস যেটা ফেডারেল এজেন্সি তাদের কাছে আবেদন করবে। সেখানে রিজেক্ট হলে কোর্টে যায়। কোর্টে যদি রিজেক্ট হয় এরপর আছে বোর্ড অব ইমিগ্রেশন অ্যাপিল সেখানে যায়। সেখানেও রিজেক্ট হলে সার্কিট কোর্টে যায়। সেখানেও রিজেক্ট হলে থিওরেটিক্যালি আবার একটি অ্যাসাইলাম আবেদন করা যায়। আর যদি নতুন আবেদন না করে তাহলে এটাই শেষ। কারণ সার্কিট কোর্ট থেকে তাকে একটি গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হয়। সেই সময়ের মধ্যে তিনি যদি নিজে থেকে আমেরিকা ছেড়ে চলে যান, তাহলে তিনি অবৈধ হন না। কিন্তু সেই সময়ের পরেও যদি তিনি আমেরিকা থেকে না যান, তখন তিনি অবৈধ হয়ে যান। এখন প্রায় ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী আছে। ট্রাম্প বলছেন সবাইকে বের করে দেবেন। কিন্তু আমার মনে হয় না তিনি সেটি করতে পারবেন। কারণ এ প্রক্রিয়া অনেক ব্যয়বহুল।

‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা সম্ভব হবে না’

প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে কোন কোন ব্যক্তি অবৈধ। তাদের গ্রেফতার করতে হবে। এরপর তাদের ডিটেনশন ফ্যাসিলিটিজে রাখতে হবে। সেখান থেকে যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে দূতাবাসের মাধ্যমে। এরপর তাকে প্লেনে তুলে দিতে হবে। কিন্তু প্লেনে তাকে একা তুলে দিতে পারে না, একজন সিকিউরিটি দিতে হয়। সবকিছু মিলে খুব ব্যয়বহুল একটি বিষয়। এই টাকা কোথা থেকে আসবে। আমরা জানি যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু খুব টাইট বাজেট হয় প্রতি বছর। এই টাকা সাধারণভাবেই মিলিটারি ফান্ড থেকে আসবে না, বর্ডার সিকিউরিটি থেকে আসবে না, ফলে টাকা আসবে কোথা থেকে? তাই ট্রাম্প যেটি চাচ্ছেন সেটি হয়তো পুরোপুরি পারবেন না। তবে বাইডেন বা তারও আগে ট্রাম্পের আমলে যতজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তারচেয়ে বেশি ফেরত পাঠানো হবে বলে অনেকে ভয় পাচ্ছেন।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রে তো সরকারের মেয়াদ চার বছর, কিন্তু যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কথা বললেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটি শেষ করতে তো তার মেয়াদের বেশি সময় লাগবে। তাহলে এটি তিনি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন?

রাজু মহাজন: কিছু মানুষকে হয়তো ফেরত পাঠানো প্রথম থেকেই শুরু হবে। কারণ কিছুসংখ্যক এরই মধ্যে ডিটেনশন ফ্যাসিলিটিজে আছেন। তাদের হয়তো প্রথম দুই মাসে ফেরত পাঠালো। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু উনি যেভাবে বলছেন সবাইকে বের করে দেবেন, সেটি হবে না।

জাগো নিউজ: ড. ইউনূসের সঙ্গে বাইডেনের একটি ভালো সম্পর্ক আমরা দেখেছি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ততটা গভীর সম্পর্ক নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। আপনি কী মনে করেন?

রাজু মহাজন: ডেমোক্রেটদের বড় বড় নেতার সঙ্গে বিশেষ করে ক্লিন্টন, জো বাইডেন, ওবামার সঙ্গে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত পর্যায়ের সম্পর্ক। যতই রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক থাকুক ব্যক্তিগত সম্পর্কের তো একটা মূল্য থাকেই। বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ড. ইউনূসের যে সুসম্পর্ক, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অতটা হয়তো থাকবে না। একটু চাপে থাকবে। যদিও তাদের ফরেন পলিসি এত দ্রুত পরিবর্তন হয় না। এশিয়া প্যাসিফিকে তারা মেজর ফরেন পলিসি নিয়ে চলছে। চীন ঠেকানোর পলিসি আছে, যেখানে বাংলাদেশ-ভারত ফ্যাক্টর। সুতরাং, খুব বেশি পরিবর্তন আসবে তা নয়। কিন্তু এখন যতটা উষ্ণ আছে অতটা থাকবে না।

জাগো নিউজ: ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের জন্য কী ধরনের কৌশলে এগোনো উচিত বলে মনে করেন?

রাজু মহাজন: ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবন এবং তিনি কেবিনেটের জন্য যাদের নিয়েছেন তাদের গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তিনি দুই ধরনের মানুষ নিয়েছেন। প্রথমত যারা ধনী ব্যবসায়ী, দ্বিতীয়ত কনজারভেটিভ খ্রিস্টান রাজনীতি করে আসা মানুষ। আমাদের প্রচুর খ্রিস্টান আছে আমেরিকায়, যারা বিভিন্ন চার্চের সঙ্গে জড়িত। তাদের বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে খ্রিস্টান রাজনীতি করা যে নেতারা আছেন তাদের কাছে বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলার মেসেজটি পৌঁছানো যেতে পারে।

অন্যদিকে ধনী ব্যবসায়ীদের যাদের ক্যাবিনেটে রেখেছেন তাদের অনেক ধরনের ব্যবসা আছে। যেমন ইলন মাস্ক। তার যে কোম্পানি টেসলা বা তার গিগা ফ্যাক্টরির প্ল্যান্ট বাংলাদেশে স্থাপন করার সুযোগ দেওয়া হলে বাংলাদেশে একদিকে বিদেশি বিনোয়োগ আসবে, কর্মসংস্থান হবে অন্যদিকে ইলন মাস্ক দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারেন। এভাবে পরিকল্পনা করে কাজ করলে খুব বেশি সমস্যায় বাংলাদেশ পড়বে না।

আইএইচআর/এএসএ/জিকেএস