ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভারতের বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ড-মালদ্বীপে ছুটছেন পর্যটকরা

মুসা আহমেদ | প্রকাশিত: ১০:৫৭ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হয়ে গেছে পর্যটন মৌসুম। দেশ-বিদেশে পছন্দের গন্তব্যে ছুটছেন পর্যটকরা। খরচ-সুবিধা বিবেচনায় বাংলাদেশিদের সর্বাধিক পছন্দের গন্তব্য ভারতের ভ্রমণ ভিসার কোনো সুখবর এখনো নেই। বিকল্প হিসেবে বেড়েছে প্যাকেজ ট্যুরের কদর। শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও নেপাল।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতে বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে যাচ্ছেন পর্যটকরা। অনেকে একসঙ্গে দুটি বা তিনটি দেশ ঘোরার প্যাকেজ নিয়ে সাশ্রয়ী ট্যুর করছেন।

ভারতের বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ড-মালদ্বীপে ছুটছেন পর্যটকরা

অ্যাভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের পর্যটকদের বড় একটি অংশ সারা বছরই ভারতে বেড়াতে যেতেন। পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইটের হার এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। যদিও আশপাশের অন্য দেশগুলোর ফ্লাইটে যাত্রী বেড়েছে।

ভারতের পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন পর্যটকরা। এসব দেশে সহজেই ভিসা পাওয়ার কারণে অনেকে দুই-তিনটা দেশ একসঙ্গে প্যাকেজে যাচ্ছেন। প্যাকেজ ভ্রমণ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।- টোয়াব পরিচালক মো. ইউনুছ

জানতে চাইলে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. ইউনুছ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভারতের পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন পর্যটকরা। এসব দেশে সহজেই ভিসা পাওয়ার কারণে অনেকে দুই-তিনটা দেশ একসঙ্গে প্যাকেজে যাচ্ছেন। প্যাকেজ ভ্রমণ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।’

ভারতে ভ্রমণ ভিসার সুখবর নেই
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভারতে বিদেশি পর্যটকদের আগমন প্রায় ৪৭ দশমিক ৮ লাখ। এসময় ভারতে পর্যটকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকা পাঁচ দেশ হলো- বাংলাদেশ (২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্র (১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৯ দশমিক ৮২ শতাংশ), কানাডা (৪ দশমিক ৫ শতাংশ) ও অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ৩২ শতাংশ)।

টোয়াব সূত্র জানায়, বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের একটি প্রধান গন্তব্য ছিল ভারত, প্রায় ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভ্রমণ করেন চিকিৎসার জন্য (প্রায় ৮০ শতাংশ), কেনাকাটা (১৫ শতাংশ) এবং অবকাশ যাপন (৫ শতাংশ)। ভ্রমণকারীদের কেনাকাটার জন্য প্রথম পছন্দ কলকাতা। এরপর আছে সিকিম, গোয়া, কাশ্মীর, দার্জিলিং, গুজরাট, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, হায়দরাবাদসহ উত্তর-পূর্ব ভারত। ৫ আগস্টের পর এ সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। ভ্রমণ ভিসা কবে চালু হবে সে বিষয়ে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। এখন শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসা ভিসা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।

থাইল্যান্ড-মালদ্বীপের ফ্লাইটে বাড়ছে যাত্রীচাপ
টোয়াব সূত্র জানায়, ভারতে যেতে না পেরে অনেক পর্যটক পরিবার-পরিজন নিয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, নেপালের কাঠমান্ডু যাচ্ছেন। এর মধ্যে ব্যাংকক, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, নেপাল রুটের ফ্লাইটে পর্যটকের চাপ অনেকাংশে বেড়েছে। অনেকে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের প্যাকেজ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনকেন্দ্রিক দেশগুলোর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কাঠমান্ডু, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ব্যাংকক, মালদ্বীপে যায়। এছাড়া শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স, ফিটস এয়ার, মালদিভিয়ান, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ, বাটিক এয়ার এবং এয়ার এশিয়া ঢাকা থেকে এসব গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এসব এয়ারলাইন্সে মালদ্বীপে ইকোনোমি ক্লাসের রিটার্ন ভাড়া প্রায় ৪৫ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা, কাঠমান্ডু ৩২ থেকে ৩৫ হাজার, শ্রীলঙ্কা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা, সিঙ্গাপুর ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা, মালয়েশিয়া ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা, ব্যাংকক ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা।

দূরত্বের দিক দিয়ে ভারতের পর বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কাছের পর্যটনকেন্দ্রিক দেশ নেপাল। দেশটিতে ঢাকা থেকে দুটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং নেপালের হিমালয়া এয়ারলাইন্স।

বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমেছে। এতে এয়ারলাইন্স ব্যবসা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অচলাবস্থা দ্রুত কাটাতে হবে।- ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ মো. কামরুল ইসলাম

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ভিসা জটিলতায় ভারতের সব রুটের ফ্লাইট সংখ্যা কমানো হয়েছে। চট্টগ্রাম-কলকাতার ফ্লাইটটি আপাতত বন্ধ। তবে ভারতে যেতে না পেরে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যাংকক এবং মালদ্বীপে যাচ্ছেন। এই দুই রুটের ফ্লাইটে পর্যটকের চাপ অনেকাংশে বেড়েছে। পাশাপাশি থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের (একসঙ্গে তিন দেশ) প্যাকেজও নিচ্ছেন অনেকে।

নেপালের কাঠমান্ডুতে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, বিমানের কাঠমান্ডু ফ্লাইটে প্রতিদিন ৮০ শতাংশের বেশি যাত্রী যাতায়াত করছেন। এই যাত্রীদের অধিকাংশই পর্যটক। বাকিরা কাঠমান্ডু হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন।

ঢাকা-কলকাতা-দিল্লি-চেন্নাইয়ে বন্ধ একের পর এক ফ্লাইট
বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো। তবে পর্যটক কম থাকায় ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা ফ্লাইট স্থগিত করেছে নভোএয়ার। আবার চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এছাড়া ভারতের এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইটও এক-তৃতীয়াংশ কমেছে।

ভারতের বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ড-মালদ্বীপে ছুটছেন পর্যটকরা

ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লিতে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু এ পথে গড়ে ৫০ শতাংশ যাত্রীও পাচ্ছে না সংস্থাটি। ফলে আগে যেখানে ঢাকা-কলকাতায় ১৪টি ফ্লাইট চলতো এখন সেখানে মাত্র সাতটি ফ্লাইট (দিনে একটি) চলছে। একইভাবে দিল্লিতে আগে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করতো বিমান। এখন সেখানে সপ্তাহে চারটা এবং চেন্নাইয়ে সাতটির জায়গায় তিনটি ফ্লাইট চলছে। এ অবস্থায় পরিচালন ব্যয় তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে বিমান।

ঢাকা থেকে কলকাতা রুটে এটিআর ৭২-৫০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করতো নভোএয়ার। কিন্তু পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে নভোএয়ার।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ভারতের কলকাতায় সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এখন যাত্রী সংকটে ১৫টি ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় সব ফ্লাইটই বন্ধ। এছাড়া ঢাকা থেকে চেন্নাই রুটে সপ্তাহে ১১টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো ইউএস-বাংলা। এখন সেটি কমিয়ে পাঁচে নামানো হয়েছে।

মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজ বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমেছে। এতে এয়ারলাইন্স ব্যবসা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অচলাবস্থা দ্রুত কাটাতে হবে।

এমএমএ/এএসএ/জেআইএম