৮৬ কিমি নদীপথ পাড়ি দিয়ে অসুস্থ শিশুকে চিকিৎসা দিলো কোস্টগার্ড
সুন্দরবনের গহীন এলাকায় একটি পর্যটকবাহী জাহাজে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশু হঠাৎ মধ্যরাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জাহাজটি কাছাকাছি দূরত্বে যেতে সময় লাগতো প্রায় নয় ঘণ্টা। উপায়ন্তর না দেখে জাহাজে থাকা একজন পর্যটক কোস্টগার্ড সদরদপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করেন।
সঙ্গে সঙ্গে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ হাইস্পিড বোটযোগে কুয়াশার মধ্যেও রওনা হয় কোস্টগার্ডের একটি মেডিকেল টিম। এরপর প্রায় ৮৬ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে খুলনায় বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হয় শিশুটিকে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বিএন) খন্দকার মুনিফ তকি এসব তথ্য জানান।
খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, গত ৭ নভেম্বর ৫০ জনের একটি পর্যটক দল এমভি উৎসব নামক জাহাজে করে সুন্দরবন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গমন করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুন্দরবনের সংরক্ষিত অঞ্চল কটকায় পৌঁছাতেই একজন শিশু যাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। যার বয়স মাত্র ছয় মাস। কটকা থেকে মোংলা ও খুলনার দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার, যা প্রায় নয় ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত।
তাছাড়া, পর্যটন জাহাজগুলোর চলাচলের গতি নিতান্তই সীমিত থাকে। কাছাকাছি দূরত্বে জনবসতির চিহ্ন মাত্র নেই, জাহাজের মধ্যে ছিল না কোনো চিকিৎসক। টেলিযোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন টেলিটকের একটি মাত্র ফোন। এমতাবস্থায় ওই জাহাজে উপস্থিত ছিলেন সামরিক বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
তিনি বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে কোস্টগার্ড সদরদপ্তরকে অবহিত করেন। এরপর কোস্টগার্ড সদরদপ্তর এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনকে নির্দেশনা দেয়।
বিষয়টি জানা মাত্রই কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সার্জন লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ রায়হানুল জান্নাহর নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল দল দ্রুত জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ হাইস্পিড বোটযোগে কটকার উদ্দেশে রওনা করে।
রাত্রিকালীন অবস্থায় প্রচণ্ড কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও উদ্ধারকারী দলটি ৮৬ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়ে সুন্দরবনের দুর্গম স্থানে অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে পর্যটক জাহাজ এমভি উৎসবের কাছে পৌঁছায়। পরবর্তীতে সার্জন লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ রায়হানুল জান্নাহ টুরিস্ট জাহাজটিতে অসুস্থ শিশুটিকে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেডিকেল ইভ্যাকুয়েশন সম্পন্নের পর বোটযোগে দ্রুততার সঙ্গে মোংলা বেইসে স্থানান্তর করেন।
এরপর কোস্টগার্ডের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠিয়ে শিশুটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়। যার ফলে ভ্রমণকারী জাহাজে অবস্থানরত পর্যটক এবং জাহাজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি আরও বলেন, ট্যুরিস্ট সিজনে সাধারণত এ ধরনের জাহাজগুলো সমুদ্রের কাছাকাছি সুন্দরবনের গহীন এলাকায় গমন করে থাকে। এসব এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্গম এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ। এ কারণে ট্যুরিস্ট জাহাজগুলো ভ্রমণের আগে একজন চিকিৎসক/প্যারামেডিকসহ যাত্রা করলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
টিটি/এমএএইচ/এমএস