ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না: সারজিস আলম
নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ কোথাও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম। বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বিভাজন এক পাশে রেখে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ রকম খুনি সংগঠন শুধু গুলিস্তান নয়, বাংলাদেশের কোনো জায়গায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
যতদিন গণতান্ত্রিক সরকার না হচ্ছে ততদিন শেখ হাসিনার উৎপাত দেখা গেলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন সারজিস। রোববার (১০ নভেম্বর) গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট মোড়ে আয়োজিত গণজমায়াতে এসব কথা বলেন তিনি।
সারজিস বলেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রায় দুই হাজার মানুষকে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যা করা হয়েছে। ২ লাখ মানুষকে রক্তাক্ত কো হয়েছে। এর বিচার হওয়া উচিত কি না? এই শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের হুকুমদাতা, তার বিচার হওয়া উচিত কি না?
তিনি বলেন, আমাদের বীর যোদ্ধা যারা এই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত হয়েছেন, হাত-পা হারিয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন, এমনকি এখনো স্বৈরাচারের যেকোনো দোসরের অত্যাচারে জীবন দিতে প্রস্তুত সেইসব আহত যোদ্ধার প্রতি অনুরোধ করতে চাই-আমরা যখন হাসপাতালে তাদের দেখতে গিয়েছি, তাদের রক্তাক্ত স্মৃতিগুলো এখনো রয়েছে। আমরা তাদের বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করতে চাই, আমরা খুব দ্রুতই অনেক কিছু ভুলে যাই। বিগত ১৬ বছর কি হয়েছে এবং শেষ ৩৬ দিনে কি হয়েছে তা শুধু আপনাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। এই ঘটনাগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। আপনারা যদি মনে করেন কোনো কারণে এই ঘটনাগুলো ছড়িয়ে দিতে পারছেন না, তাহলে আপনাদের ঘটনাটি লিখুন এবং আপনাদের ছবিগুলো আমাদের পাঠান। আমরা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেগুলো পুরো পৃথিবীর কাছে জানাতে চাই।
সারজিস বলেন, আমার দ্বিতীয় অনুরোধ শহীদ হওয়া পরিবারদের প্রতি। কেউ ভাই হারিয়েছেন, কেউ বোন হারিয়েছেন, কেউ সন্তান হারিয়েছেন। আপনারা কিন্তু আপনাদের এই ব্যথা বুঝেন। আপনারা ছাড়া পৃথিবীর কেউ এই ব্যথা বুঝবে না। কোনো কিছু দিয়ে এই অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়। আপনাদের কাছে আমার বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ, আপনাদের এই কথাগুলো, বেদনাগুলো, কষ্টগুলো লিখে দয়া করে আমাদের কাছে পাঠান। শুধু দেশ নয়, পুরো পৃথিবীর কাছে ওই খুনি হাসিনার নির্মম হত্যাকাণ্ডগুলো তুলে ধরতে চাই।
সংবাদিকদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই একমত হবেন গত ১৬ বছরে আপনার যা বলার ছিল, যেটি প্রকাশ করার ছিল সেটি আপনারা করতে পারেননি। আমরা নিজের চোখে দেখেছি, কোনো একটা সংবাদ যদি সরকারের বিপক্ষে যাবে বলে ডিজিএফআইয়ের মনে হতো, সেটি কিছু সময়ের মধ্যে পাল্টে যেত। আমরা চাই এই নতুন বাংলাদেশে গত ১৬ বছর এবং শেষ ৩৬ দিনে যা হয়েছে সেগুলো সাহস নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো ভয় না নিয়ে আপনারা নির্দ্বিধায় তুলে ধরুন। আমরা আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি প্রত্যেকটা মিডিয়ার একটি করে উইং থাকুক আপনারা আমাদের সেই আহত ভাইদের কাছে যাবেন। তাদের ব্যথা-বেদনাগুলো পুরো দেশসহ পৃথিবীর সামনে তুলে ধরুন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের বিপ্লবী ভাইদের বলতে চাই বিগত ১৬ বছরে একটা একটা করে দলগুলো তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রাজপথে নেমেছিল। তাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু হাসিনা তার বাহিনী নিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী দিয়ে সবাইকে দমন করেছে। যার ফলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম এবং খুনি হাসিনাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
এদিকে গুলিস্তানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও মাঠে আসেনি আওয়ামী লীগ। তবে সমাবেশ স্থল থেকে ছাত্রলীগ সন্দেহে ৩ জনকে গনপিটুনি দিয়েছে ছাত্র-জনতা। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এনএস/এমআইএইচএস/জিকেএস