ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ছাত্র আন্দোলনে গুলি: যুবলীগ ক্যাডার ফিরোজ গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:১৭ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা যুবলীগে ‘ক্যাডার’ মো. ফিরোজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার ফেনী সদর থানার রামপুরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার ফিরোজ চান্দগাঁও থানার মুরাদপুর এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রবাজি, মাদক ও ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) শরীফ উল আলম বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে খবর পেয়ে ফেনীর রামপুরা এলাকা থেকে ফিরোজকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৮ জুলাই নগরের মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচার গুলি করার কথা স্বীকার করেছেন ফিরোজ। ওই দিন নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় সায়মান মাহিন নামের এক দোকান কর্মচারীকে গুলি করার কথা তিনি র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেন। ফিরোজকে চান্দগাঁও থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কী ঘটেছিল সেই দিনগুলোতে

১৬ জুলাই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর ১২টা থেকেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে কয়েকশ ছাত্রলীগকর্মী রেলস্টেশনে অবস্থান নেন। এ সময় মুরাদপুর মোড়ে অবস্থান নেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র আন্দোলনে গুলি: যুবলীগ ক্যাডার ফিরোজ গ্রেফতার

বিকেল পৌনে ৩টার দিকে মিছিল নিয়ে মুরাদপুরের দিকে এগোতে থাকেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রাস্তার আশপাশে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী ও পথচারীদের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। ওই মিছিল থেকেই মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথমে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা হয়। পরে শুরু হয় গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ। এ সময় যুবলীগ ক্যাডার ফিরোজসহ অন্তত আটজন অস্ত্রধারীকে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়তে দেখা যায়। ওই সময় প্রকাশ্যে বিদেশি পিস্তল হাতে ফিরোজের গুলি ছোড়ার দৃশ্য সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ওই দিনগুলোতে চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম, এএইএইচ কলেজেরে শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন শান্ত ও ফার্নিচার দোকানকর্মী ফারুক হোসেন নিহত হন।

একদিন পর ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে শিক্ষার্থীদের ওপর আবারও প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। সেদিন গুলিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, আশেকানে ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী ও দোকানকর্মী সায়মন নিহত হন।

ছাত্র আন্দোলনে গুলি: যুবলীগ ক্যাডার ফিরোজ গ্রেফতার

চট্টগ্রাম নগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ৪ শিক্ষার্থীসহ ১০ জন নিহত হন। ঘটনার সময় অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শনকারী ২৫ জনের ছবি পাওয়া গেলেও ১০ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা সবাই নগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মী।

কে এই ফিরোজ

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দশ বছরে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর ও বহদ্দারহাট এলাকার লোকজন তথা ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্কের নাম ছিল ফিরোজ। নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে চালিয়ে গেছে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর তাসপিয়া হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত আসামি এই ফিরোজ।

২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরের প্রবর্তক মোড়ে একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে সন্ত্রাসীরা ১১ লাখ টাকা লুট করে। মারধর করা হয় একজন চিকিৎসককে। ঘটনার পরদিন নগরের বায়েজিদ থানার কয়লাঘর এলাকা থেকে যুবলীগ ক্যাডার ফিরোজ ও মনিরুজ্জামানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ফিরোজের পাঁচলাইশের আস্তানা থেকে ১২ রাউন্ড গুলিভর্তি দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলিসহ একটি ম্যাগজিন, একটি একনালা বন্দুক, একটি বন্দুকের ব্যারেল, তিনটি কার্তুজ ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

এএজেড/এমআরএম/জেআইএম