ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

অনুসন্ধানে নামছে দুদক

পছন্দ হলেই জমি দখলে নিতেন মির্জা আজম

সাইফুল হক মিঠু | প্রকাশিত: ১০:৩৩ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

ময়লার ভাগাড় কিংবা পতিত জমি পছন্দ হলেই তার। পেশিশক্তি আর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একের পর জমি দখলের অভিযোগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের বিরুদ্ধে।

নবম থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মির্জা আজমের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ সংসদ সদস্যের সম্পদ ১৫ বছরে বেড়েছে ১২২ গুণ।

মির্জা আজমের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা শাখা। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগের ভিত্তিতে মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করতে যাচ্ছে দুদক।

পেশিশক্তি আর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের অভিযোগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এ সংসদ সদস্যের সম্পদ গত ১৫ বছরে বেড়েছে ১২২ গুণ।

মির্জা আজমের উত্থান

মির্জা আজমের জন্ম জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে। ১৯৮০ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে একই কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। ওই সময় থেকে শুরু করেন ব্যবসা এবং সম্পৃক্ত হন রাজনীতিতে। তখন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সরকারি বরাদ্দের চাল-গমের ডিও কিনে সরকারি-বেসরকারি মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও সরকারি গুদামে সরবরাহ করতেন।

১৯৭৯ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ছাত্র সংসদের আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন মির্জা আজম। এরপর ১৯৮১ সালে জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ১৯৮৭ সালে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, ১৯৯১ সালে জেলা সভাপতি ও ১৯৯৩ সালে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জামালপুর-৩ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।

জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের থ্রিডি মডেল। ছবি: সংগৃহীতজামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের থ্রিডি মডেল। ছবি: সংগৃহীত

প্রকল্পের টাকায় মির্জা আজমের বিনোদন ক্লাব

ময়লার ভাগাড় দখল করে বিনোদন ক্লাব, গ্রাম দখল করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কী নেই তার। জামালপুর শহরের পলাশগড় এলাকায় সাড়ে ৪ একর জমিজুড়ে ছিল পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। সেই স্থাপনা সরিয়ে পুরো জমি নামমাত্র মূল্যে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব লিমিটেডকে। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মির্জা আজম। জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু ক্লাবটির কোষাধ্যক্ষ। মির্জা আজমকে খুশি করতে ক্লাবের উন্নয়নকাজের জন্য পৌরসভার সাবেক মেয়র ছানু কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প দেন। প্রকল্পের আওতায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ক্লাবের সীমানা প্রাচীর, নিজস্ব রাস্তা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রকল্প দিয়েছে জেলা পরিষদও। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ক্লাবটি চালু হয়। রিক্রিয়েশন ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য গুনতে হতো ৫ লাখ টাকা। দলের প্রভাবশালী অনেক নেতা-কর্মী ক্লাবটির সদস্য। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্লাবটি জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন।

জামালপুরে দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকার প্রায় ২৬ শতাংশ জমি দখল করে স্ত্রীর নামে করেছেন আলেয়া গার্ডেন নামের একটি রিসোর্ট। স্থানীয়ভাবে যা ‘রং মহল’ নামে পরিচিত।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লাবের প্রাচীরের কারণে বন্ধ হয়েছে ২০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে শহরে যাতায়াত করতে হয়। সম্প্রতি এসব গ্রামের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাব বন্ধ এবং সড়কটি খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনও করেন। পরে তারা দেয়াল ভেঙে চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করেন।

তারা আরও অভিযোগ করেন, ময়লার ভাগাড় সরিয়ে ২০২১ সালে জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব নামে ভিআইপি বিনোদন ক্লাবটি গড়ে তোলেন মির্জা আজম। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু। এই ছানু আবার আজমের স্ত্রী আলেয়া আজমের ভাতিজিজামাই।

জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন জাগো নিউজকে বলেন, মির্জা আজম সরকারি বরাদ্দের চাল দোকানে দোকানে সরবরাহ করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার দখল-অনিয়ম। যে জায়গা পছন্দ হতো, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দখলে নিতেন।

ওয়ারেছ আলী মামুন আরও জানান, ক্লাবটির সঙ্গে পৌরসভার কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্টতা নেই। কাজেই পৌরসভার জায়গাটি এভাবে দিতে পারে না। এই প্রাচীরের কারণে হাজারও লোকের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

জামালপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন মির্জা আজম। ছবি: সংগৃহীতজামালপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন মির্জা আজম। ছবি: সংগৃহীত

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি দখল

২০১৩ সালে জামালপুর শহরের নয়াপাড়া পাঁচরাস্তা মোড় এলাকায় গড়ে তোলা হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় নাওভাঙ্গাচর এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মির্জা আজম। এ কাজের জন্য তিনি নাওভাঙ্গাচরের দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জোরপূর্বক জমি দখল করেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

২০১৩ সালে জামালপুরে গড়ে তোলা হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় নাওভাঙ্গাচর এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মির্জা আজম। এ কাজের জন্য তিনি নাওভাঙ্গাচরের দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জোরপূর্বক জমি দখল করেছেন বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

গত ২০ আগস্ট মির্জা আজমের বিচার ও দখল হওয়া জমি ফেরত পেতে মানববন্ধন করেন নাওভাঙ্গাচরের মানুষ। তাদের অভিযোগ, জোর করে জমি দখল করেন মির্জা আজম। তার সহযোগী ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন।

জামালপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন মির্জা আজম। ছবি: সংগৃহীতজামালপুরের আলেয়া গার্ডেন। ছবি: সংগৃহীত

স্ত্রীর নামে আলেয়া গার্ডেন

জামালপুরের দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকায় প্রায় ছয় একর জমির ওপর স্ত্রী আলেয়ার নামে আলেয়া গার্ডেন গড়ে তোলেন মির্জা আজম। স্থানীয়ভাবে এই রিসোর্ট ‘রং মহল’ নামে পরিচিত। এই রিসোর্টের মধ্যে ২৬ শতাংশ জমি ছিল দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকার আওয়ামী লীগের সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি মঞ্জুরুল হক ফজলুর। মির্জা আজম ১৩ শতাংশ জমির দাম দিয়ে বাকি ১৩ শতাংশ দখল করে দেয়াল নির্মাণ করেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর পরই এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা আলেয়া গার্ডেনে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এছাড়া ঝিনাইব্রিজ সংলগ্ন খাসজমি দখল করে ছাই তৈরির কারখানা নির্মাণ করার অভিযোগও আছে মির্জা আজমের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সুশীল সমাজের এক প্রতিনিধি ও কলেজশিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, নাওভাঙ্গাচরের প্রায় ৩০ একরের জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এর ভেতরে খাসজমি আছে, কেনা জমিও আছে। জমি বেচাকেনা নিয়ে অর্থনৈতিক জালিয়াতি হয়েছে। যাদের জমি তাদের অনেকেই টাকা পাননি। একটা নদী-গ্রাম দখল করে সেটা বালু দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। আলেয়া রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে জমি দখল করে। এসব জমির টাকা যখন ভুক্তভোগীরা চেয়েছেন তখনই হামলা শিকার হয়েছেন।

পছন্দ হলেই জমি দখলে নিতেন মির্জা আজম

মির্জা আজমের ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে ওই কলেজশিক্ষক বলেন, ‘হাতির নিচে যদি মশা পড়ে, মশা প্রতিবাদ করতে পারে না। মির্জা আজম বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন; তবে জামালপুরে তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। নিজের কোরাম দিয়ে দল পরিচালিত করতেন। ভিন্নমতের কাউকে তিনি স্থান দিতেন না। তার পছন্দের লোকের বাইরে জামালপুরে টেন্ডার, প্রকল্প কেউ পেতেন না। মির্জা আজমের পছন্দের লোকজন ছাড়া জামালপুরে জাতীয় সংসদের প্রার্থী কিংবা স্থানীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারতেন না।’

তিনি আরও বলেন, মির্জা আজমের অনুসারীরা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে পুনর্বাসিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছে না।

৫ আগস্ট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর মির্জা আজমের আলেয়া’স কটেজ। ছবি: সংগৃহীত৫ আগস্ট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর মির্জা আজমের আলেয়া’স কটেজ। ছবি: সংগৃহীত

মির্জা আজমের সম্পদের পাহাড়

জামালপুর শহরে পৌরসভা ভবন সংলগ্ন স্থানে আলেয়া’স কটেজ নামে একটি বিলাস বহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে মির্জা আজমের। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ঢাকার ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে (পুরোনো ২৮ নম্বর) প্রভাব খাটিয়ে সরকারি প্লট দখল করে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। এই রোডের ১২ নম্বর বাসাটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন মির্জা আজম।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে এমপি থাকাকালে ঢাকার নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন মির্জা আজম। ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে প্লটটি পরিবর্তন করে বারিধারায় ১০ নম্বর সড়কে নতুন প্লট বরাদ্দ নিয়ে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। এছাড়া তিনি আলোচিত তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের অন্যতম শেয়ারহোল্ডার বলেও অভিযোগ আছে। কক্সবাজারের পাঁচতারকা সী-গাল হোটেলের অন্যতম অংশীদার মির্জা আজম। এই হোটেলের চেয়ারম্যান মির্জা আজমের স্ত্রী আলেয়া আজম।

এ ব্যাপারে সী-গাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী রুমী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সী-গাল হোটেলের একক মালিক মাসুম ইকবাল। আমাদের ঢাকায়ও আরেকটি হোটেল রয়েছে (হোয়াইট হাউজ)। সী-গাল বা ওই প্রপাটিতে মির্জা আজম কিংবা অন্য কারও কোনো শেয়ার নেই। মির্জা আজমের স্ত্রী এই হোটেলের চেয়ারম্যান নন।’

jagonews24

মির্জা আজমের আরও যত সম্পদ

দুদক জানতে পেরেছে, মির্জা আজমের অপি বৃষ্টি নামে একটি হাউজিং কোম্পানির মালিকানা রয়েছে। তার স্ত্রী আলেয়া আজম এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। মির্জা আজমের ভাই মির্জা আনোয়ার এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মেলান্দহ উপজেলার দুরমুট ইউনিয়নে তমা কংক্রিট লিমিটেড ও ময়মনসিংহে ভালুকা ডেইরি ফার্ম নামে প্রতিষ্ঠানেও মির্জা আজমের শেয়ার রয়েছে। শেরপুর নালিতাবাড়িতে নালিতাবাড়ি ফিশারিজের মালিক আলেয়া আজম।

মেলান্দহ উপজেলায় নয়ানগর ইউনিয়নের কান্দাপাড়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিনহাজের নামে জামালপুর শহরে এবং শহরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে আনুমানিক ৩০০ একর জায়গা কেনা আছে, যা মির্জা আজমের। পাশাপাশি মাদারগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মির্জা আজমের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমিও রয়েছে বলে দুদক জানতে পেরেছে।

এছাড়া জামালপুর শহরের বকুলতলা মোড়ে ৮ শতাংশ জমির ওপর মির্জা আজমের বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। মেডিকেল রোডে তিনতলা দুটি বাড়ি, মাদারগঞ্জ উপজেলা পৌর শহরের বালিজুড়ি বাজারে দুই একর জমিতে নুরুন্নাহার মার্কেট ও বকুল মার্কেটের মালিকানা রয়েছে মির্জা আজমের। মাদারগঞ্জ উপজেলা চত্বরে এক একর জমিতে একাধিক মার্কেট ও মেলান্দহ উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য জমি। মির্জা আজম নেত্রকোনায় শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর নামে বিপুল সম্পদ করেছেন বলে দুদক জানতে পেরেছে।

দুদক সূত্র বলছে, আবু সালেহ গেন্দার নামে দেশে বিদেশে বিভিন্ন খাতে বিপুল সম্পদ ও বিনিয়োগ রয়েছে মির্জা আজমের।

পছন্দ হলেই জমি দখলে নিতেন মির্জা আজম

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মির্জা আজম ও তার পরিবারের সদস্যরা গাঢাকা দিয়েছেন। এসব বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

জামালপুর জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, মির্জা আজম ও তার স্ত্রী, সাবেক পৌর মেয়র ছানু এবং মির্জা আজমের চার ভাই অবৈধ সম্পদে বিত্তশালী হয়েছেন গত ১৫ বছরে। বিরোধীদলের কাউকে সভা-সমাবেশ করতে দিতেন না। মিথ্যা ও হয়রানির মামলা দেওয়া হতো বিএনপি ও অন্য দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর মির্জা আজমের অনুসারীদের বিএনপিতে পুনর্বাসিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেন তিনি।

এসএম/এসএনআর/এমএমএআর/জিকেএস