দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতি ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা: সিপিডি
সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। যা দেশের জিডিপির শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। দেশের ১১ জেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিখাত। এ খাতে ক্ষতি ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া অবকাঠামো খাতে ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার।
রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আয়োজিত ‘পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া: সিপিডির বিশ্লেষণ' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা ফেলো মুনতাসির কামাল। উপস্থাপনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
মূল প্রবন্ধে সিপিডি জানায়, সাম্প্রতিক বন্যায় বেসরকারি বা ব্যক্তিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। যা এই বন্যায় মোট ক্ষতির ৫৩ শতাংশ। আর্থিক হিসাবে যা ৬৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। বন্যায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্ষতির পরিমাণ ৫২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সহযোগিতা কাঠামোর পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি তারা ত্রাণ বিতরণে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ সুবিধা প্রদান, বীজ সরবরাহ নিশ্চিত, চাল আমদানি প্রস্তুতি, কাঁচামাল ও পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো, জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে আবহাওয়া তথ্য আদান-প্রদান, বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা সংক্রান্ত পূর্বাভাস সহজবোধ্য করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন।
গবেষণায় বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালী জেলায় যার পরিমাণ ৪,১৯১ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির ২৯ শতাংশ। অপরদিকে কৃষি ও বনায়ন খাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুমিল্লা জেলা যার পরিমাণ ২৩.৫ শতাংশ। নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী জেলাগুলো অন্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মুনতাসির কামাল তার উপস্থাপনায় বলেন, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান, মৎস্য, পোল্ট্রি, যেখানে উদ্যোক্তা এবং স্থানীয়রা জানান তাদের ৮৫-৯৫ শতাংশ মাছের ঘের ভেসে গেছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের প্রায় সর্বস্ব হারিয়েছে।
রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টের মত অবকাঠামোগত ক্ষতির পাশাপাশি স্কুল, কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ফেরত যেতে পারছে না। অনেকে ডায়রিয়া, চর্মরোগে ভুগছেন। এছাড়া সাপের উপদ্রব বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে, ফলে কেউ বেশি ত্রাণ পেয়েছে আবার কেউ একেবারেই পায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় সমন্বয়হীনতা হয়েছে, আবার অনেকে বলছেন জনপ্রতিনিধি না থাকায় ত্রাণ কার্যক্রম ন্যায্য হয়েছে।
এছাড়া ত্রাণ বিতরণে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকারের কোন যোগাযোগ ছিল না, আবার দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় সরকারি জনবল লক্ষ্য করা যায়নি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবে ভবিষ্যতে এ ধরনের বন্যা বাড়বে। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি অ-আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি যা টাকায় পরিমাণ করা কঠিন।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এই বন্যা একটি টেস্ট কেস ছিল। এবারের বন্যা প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন ছিল এবং অনেক নতুন অঞ্চল এর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এ ধরনের বন্যায় প্রকোপ আগামী দিনে আরও বাড়বে। এটি মোকাবিলায় সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি থাকা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি দুর্যোগ নিরসনে প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান উপায়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমাদের এই দুর্যোগের সাথেই বেঁচে থাকতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি হোক, কিন্তু মৃত্যু যাতে কম হয় সেই ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
এসআরএস/কেএসআর/জেএইচ/জেআইএম