আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েল গেজ রেললাইন
আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত পাশাপাশি দুটো ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করবে সরকার। দুটো ডুয়েল গেজের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন এবং অপরটি বিদ্যমান মিটারগেজকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করা হবে। মঙ্গলবার একনেক সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত এ প্রকল্পটির নাম হলো আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর।
এই ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণে সরকারের ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫শ ৪ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ নির্মাণ শেষ হবে। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার দূরত্বে পাশাপাশি যে দুটো ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে তার মোট দৈর্ঘ্য ১৪৪ কিলোমিটার। এছাড়া, লুপ ও সাইডিংস লাইনের জন্য আরও ৪০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন তৈরি করা হবে। মোট ১৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ডুয়েল গেজ লাইন নির্মিত হবে। এ নির্মাণ কাজে মোট ব্যয়ের ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা সরকার দেবে। বাকি ৫ হাজার ৪শ ৭৭ কোটি টাকা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) ঋন সহায়তা হিসেবে দেবে।
একনেক-এর সভাশেষে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে অচিরেই ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটি প্রধান করিডোরে পরিণত হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে মালামাল পরিবহণ সুবিধা দিতে পারবে। এতে করে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা আকৃষ্ট হবেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, টঙ্গী-ভৈরববাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনের ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালে শেষ হবে। সেই সাথে আখাউড়া-লাকসাম সেকশন ডাবল ডুয়েলগেজ হয়ে গেলে পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ডাবল ডুয়েলগেজ হয়ে যাবে। ফলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহণের চাহিদা মেটানো সহজ হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজকের (মঙ্গলবার) একনেক সভায় ১০ হাজার ৬শ ২৫ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত এই ৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি নতুন এবং ২টি সংশোধিত। মোট প্রাক্কলিত ব্যায়ের মধ্যে জিওবি ২হাজার ৫শ ২ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল ২হাজার ৬শ ১৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৫হাজার ৪শ ৭৮ কোটি টাকা।
‘প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ৫ এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি’ নামক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা পাওযার এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ৫টি এলাকায় প্রি-পেমেন্ট মিটারিং চালু করতে যাচ্ছে। এর ফলে খিলগাঁও, তেজগাওঁ, কাজলা, কামরাঙ্গীরচর এবং স্বামীবাগ এলাকার বাসিন্দারা এখন কারেন্সি ট্রান্সফার সিস্টেম (সিটিএস) এর মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড ভিত্তিক সিংঙ্গেল অথবা থ্রি ফেইজ এর প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনে প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি মোবাইল কার্ডের মতো টাকা দিয়ে অগ্রিম বিদ্যুৎ মিটার কিনে নিজের প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।
এ প্রকল্পটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, এর ফলে বিদুত্যের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সরকারের রাজস্ব আদায়েও কোন বকেয়া থাকবেনা । সেইসাথে লোডশেডিংও কমে আসবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেন, প্রবল্পটি বাস্তবায়নে ২শ ২৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে জিওবি ১শ ৮৯ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব ৩৫ কোটি টাকা। জানুয়ারি ২০১৫ থেকে জুন ২০১৭ মেয়াদে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে সারাদেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পর্যায়কক্রমে প্রি-পেমেন্টর আওতায় নিয়ে আসা হবে।
কম্পিউটার শিক্ষার প্রসার এবং ইন্টারনেট সংযোগ বাড়িয়ে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং পেশাকে দেশব্যাপী আরও সম্প্রসারণ করছে সরকার। সরকার মনে করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষাকে ভালভাবে ছড়িয়ে দিতে হলে মাল্টিমিডিয়া বিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেজন্যে সরকার দেশের ২০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০০০টি কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করতে যাচ্ছে। একেকটি কম্পিউটার ল্যাবে কমপক্ষে সতেরটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, একটি এলইডি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, একটি হেডফোন ও একটি করে থ্রিজি পকেট রাউটার থাকবে। এছাড়া, দেশব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিকে ছড়িয়ে দিতে ৬৪টি জেলা থেকে একটি করে উপজেলায় একটি করে ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন করবে সরকার।
এবিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এ সফল হতে হলে বিভিন্ন ভাষা বুঝতে পারাও জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে এখাতটি বাংলাদেশের রফতানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাতে পরিণত হবে। সেজন্যে আমরা কম্পিউটার শিক্ষাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্যই দেশে বিদ্যমান ৩৫৪৪টি কম্পিউটার ল্যাবের সাথে আরও ২০০০টি কম্পিউটার ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য আজকের একনেক সভায় ‘৬৪ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ নামের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ২শ ৯৯ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর। ২০১৬ সালের ডিসেমন্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সারকারখানাসহ শিল্প কারখানায় দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করবে সরকার। মূলত আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে রূপান্তরিত করে তা শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা হবে।