ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত অসম্ভব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:১৮ এএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

পরিবার শিশুর প্রাথমিক সুরক্ষা ও শিক্ষা নিশ্চিত করে, সমাজ নিরাপদ ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে এবং রাষ্ট্র আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে শিশুদের অধিকার বাস্তবায়ন করে। তাই এ তিন স্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

রাজধানীতে শিশু অধিকার সপ্তাহের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব বলেছেন বক্তারা। শিশুদের ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণে ‘সব শিশুর জন্য শিশু অধিকার নিশ্চিতকরণে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি।

বুধবার (২ অক্টোবর) বেলা ১১টায় একাডেমির সভাকক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন।

সাদিয়া জামানের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিশু একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার এ এস এম নাজমুল হক। সভাপতিত্ব করেন পাবনা ন্যাশনাল চিলড্রেন'স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) সভাপতি শিশু সালমান রশিদ। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকারবিষয়ক পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন।

আবদুল্লা আল মামুন বলেন, শিশুরা একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে, যা শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আবদুল্লা আল মামুন বলেন, বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করা দরকার। এছাড়া শিশুশ্রম আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, দরিদ্র পরিবারের সহায়তা নিশ্চিত করে শিশুদের স্কুলে পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে।

শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের বিষয়ে সেভ দ্য চিলড্রেনের এ কর্মকর্তা বলেন, শিশুদের জন্য সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা হটলাইন এবং সুরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা যেকোনো ধরনের হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হলে সহায়তা নিতে পারে। এছাড়া আইনের কঠোর প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি, কাউন্সেলিং ব্যবস্থা করা এবং বাল্যবিয়ে ও যৌন নির্যাতন বন্ধ করতে শিক্ষার প্রসার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, টিকা দেওয়া, বিনোদনমূলক কার্যক্রম, সৃজনশীলতার বিকাশ বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাজমুল হক বলেন, শিশুদের জন্য একটা সেফগার্ডিং পলিসি তৈরির ব্যাপারে আমরা কাজ করতে চাই। আমরা সব উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে চাই। শিশু অধিকার সনদ নিয়েও আমরা আরও বেশি কাজ করতে চাই।

শিশু বিকাশ কেন্দ্র আজিমপুরের শিশু নিলুফা আক্তার মিম বলেন, আমার ক্লাসের সহপাঠীর বিয়ে হয়ে গেছে। পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। হয়তো খেলাধুলাও করতে পারছে না।

এনসিটিএফ শিশু প্রতিনিধি ফাহিম মুনতাসির বলেন, গ্রামের মাতব্বরদের দেখা যায় তারা বাল্য বিয়ের বিচার করে। কিন্তু সেটা বেশিরভাগ সময় শিশুদের বিপক্ষে যায়।

এসওএসের প্রতিনিধি নুসরাত জাহান বলেন, আমরা বাবা-মা ছাড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করি। অনেককে আমরা বড় করছি যাদের কোন ধরনের আইডেন্টিটি নেই। কিন্তু এ ছাড়াও অনেক শিশু নিয়ে কাজ করার আছে। ইদানীং বাবা-মায়ের আলাদা হওয়ার পর তাদের শিশুদের আমরা দেখি কেমন মানসিক অবস্থার মধ্যে পড়ে। এই শিশুদের কথা হয়তো কেউ ভাবেও না। পজিটিভ প্যারেন্টিং নিয়েও অনেক কাজ করা উচিৎ। পরিবারে বাবা মায়ের দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের জানানো দরকার।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি রাশেদা আক্তার বলেন, আমি চাই আমাদের শিশুরা উন্নয়নমূলক মানসিকতা নিয়ে যেন বড় হতে পারে। দেখা যায় যারা ভালো স্কুলে পড়াশুনা করছে তাদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আমাদের থাকে না, আমরা মনে করি তারা সুবিধাপ্রাপ্ত। কিন্তু এসব শিশুকে নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা থাকতে হবে।

বেসরকারি এনজিও সেন্টার ফর ইনজুরি ইভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) প্রতিনিধি জোবায়ের আলম মনে করেন একটা শিশু ভালোভাবে বেঁচে থাকলেই অধিকারের কথা আসবে। জোবায়ের বলেন, আমরা পনিতে ডুবা থেকে শিশুদের বাঁচাতে কাজ করি। আমি মনে করি এব্যাপারে সবাইকে আরও বেশি সচেতন করা উচিত।

মেহেরপুর এনসিটিএফ সভাপতি ফাহিম মুনতাসির বলেন, শিশুদের নিয়ে যে কাজগুলো হয় তা ঠিকমত হচ্ছে কি না তার তদারকি হওয়া প্রয়োজন।

মিরপুর থেকে আসা শিশু খাদিজা বলেন, আমাদের যাদের মা-বাবা লেখাপড়া করতে পারেননি, সেই মা-বাবাদের নিয়ে কিছু করা যায় কি না ভাবতে পারি।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশুবিষয়ক সংস্থার (ইউনিসেফ) প্রতিনিধি ইফফাত ফারহানা বলেন, আমাদের নেগেটিভ কিছু কালচারাল প্র্যাকটিস আছে। যেমন আমরা বাবা-মায়েরা শিশুদের জন্ম দিয়ে আমাদের সম্পত্তি মনে করি। আমরা চাই তারা একদম আমাদের মন মতো চলুক, যা তাদের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। আমরা উন্নয়নকর্মীরা অনেক দিন ধরে শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর চেয়ে আসছি, আমি মনে করি নতুন সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।

সভাপতির বক্তব্যে শিশু সালমান রশিদ বলেন, আমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণ করতে চাই। প্রতিটি শিশুর নিরাপদ শৈশব বিনির্মাণে আমি সবার সহযোগিতা চাই। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি পর্যায়ে শিশুর অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে গেলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

আইএইচআর/এমএএইচ/