পরিকল্পনার অভাবে সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পে ক্ষতির আশঙ্কা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশের পর্যটন খাতে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে দক্ষিণের ম্যানগ্রোভ বন, ভ্রমণপিপাসুদের জন্য হয়ে উঠেছে আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বনবিভাগসহ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে বারবার হোঁচট খাচ্ছে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন। এতে পর্যটন খাতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্যের কারণে সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের পাখী, চিত্রাহরিণ, কুমির, ডলফিনসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। তাই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য একই সঙ্গে বিনোদন ও গবেষণার স্থান হয়ে উঠতে পারে সুন্দরবন।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পর্যটন খাতকে যদি সুন্দর করে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করা যায় তাহলে এটা একটা বিরাট সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হবে। এছাড়া সুন্দরবনে পর্যটককেন্দ্রিক নান্দনিক যেসব নৌযান রয়েছে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করা হলেও পর্যটন শিল্পে তা ভূমিকা রাখবে।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনকেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে একদিকে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। অন্যদিকে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তবে বনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং সুন্দরবন ভ্রমণের নীতিমালা কঠোরভাবে পালন করতে হবে। তা না হলে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পের মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিকল্পিতভাবে পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশ অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই এখানে ইকোট্যুরিজমের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন। যা তৈরিতে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছে বনবিভাগ। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মো. নুর আলম শেখ বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবসে বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করেই পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। সুন্দরবনের আশপাশের যে গ্রাম আছে সেগুলোকে ইকোট্যুরিজম সেন্টারে পরিণত করতে হবে। এছাড়া সুন্দরবনে যেসব পর্যটক প্রবেশ করে তারা যাতে বন্যপ্রাণীর ক্ষতি না করে, সুন্দরবনে প্লাস্টিক দূষণ না করে সে ব্যাপারে একটি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারকে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে সুন্দরবনের পর্যটন এলাকাগুলোতে পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো না থাকা ও অনুমতি প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতায় ব্যাহত হচ্ছে ইকোট্যুরিজম। বনবিভাগ জানিয়েছে ২০১৪ সালে ভ্রমণ নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। যার আলোকে নতুন পর্যটন স্পট বাড়ানোর কাজ চলছে।
এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, ২০১৪ সালের ভ্রমণ নীতিমালা অনুযায়ী সুন্দরবনে বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি পর্যটন স্পট বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে ১১টি ট্যুরিস্ট স্পট আছে। সুন্দরবনে আগত পর্যটকরা সেখানে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছেন। পরিবেশের ক্ষতি হবে না এ ব্যাপারে বনরক্ষীদের একাধিকবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী পর্যটকদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আবু হোসাইন সুমন/এসআইটি/জিকেএস