ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

দখল-চাঁদাবাজিসহ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টাকে ৭ অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:১৭ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরকার পতনের পর উত্তরায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেলেও সেখানে চাঁদাবাজির নতুন সিন্ডিকেটের উদ্ভব হয়েছে। নানা অভিযোগে নাম উঠে আসছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরেও তাদের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।

সবশেষ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কাছে উত্তরা-পশ্চিম থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আজমল হুদা মিঠুর বিরুদ্ধে এমন একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকেও একই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা-পশ্চিম থানার জনগণের পক্ষে দুলাল আহমেদ নামে একজন ব্যবসায়ী এ অভিযোগ দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দেওয়া অভিযোগের একটি কপি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। তাতে সুনির্দিষ্টভাবে ৭টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- দখল, চাঁদাবাজি, মদের বার থেকে মাসিকভিত্তিতে চাঁদা আদায়, উত্তরার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্লাবে মদ বিক্রির ক্ষেত্রে কমিশন নেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে।

আজমল হুদার মিঠুর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

লিখিত অভিযোগে প্রথমেই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ৬ আগস্ট প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতার জলপাই রংয়ের হ্যারিয়ার গাড়ি জোর করে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। জার্মানি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টঙ্গীর জাবান হোটেল ও বারের মালিক বাদলের ৯ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে গাড়িটি নিয়ে আসা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

পশ্চিম থানা এলাকার বেশ কিছু বার থেকে মাসিকভিত্তিতে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে। এ কাজে মিঠু সরাসরি কোথাও যান না। তার তৈরি করা কিশোর গ্যাং সদস্যরা বারগুলোতে নিয়মিত মহড়া দেন ও মাসোহারা আদায় করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। রাজউক মার্কেটের তিনটি দোকান বন্ধ করে চাঁদা আদায় করার বিষয়টিও লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন দুলাল আহমেদ।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা

রাজউক মার্কেটে বিএনপি নেতা মিঠুর মালিকানা রয়েছে। এতদিন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা করলেও এখন তাদের মালিকানায় থাকা অনেক দোকান দখল করছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছে স্থানীয় ওই ব্যবসায়ী। তাছাড়া উত্তরা-পশ্চিম থানা এলাকায় অবস্থিত ফার্নিচার মার্কেট, জমজমের পাশে রাজউকের জায়গায় অবস্থিত কয়েকটি নামকরা হোটেলের ভাড়াসহ এলাকার ফুটপাতের পুরো নিয়ন্ত্রণও তার নেতৃত্বে বিএনপির একটি পক্ষ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপি নেতা মিঠুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে সবশেষ উল্লেখ করা হয়েছে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের নির্মানাধীন মসজিদ কমিটিতে প্রভাব খাটানো ও মসজিদের ইমাম পরিবর্তনের চেষ্টা করা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থিত কাউন্সিলর ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামি আফসার উদ্দিন খানের ঘনিষ্ঠজনকে মসজিদের ইমাম নিযুক্ত করার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মিঠুর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতাও বিব্রত। বিএনপির একজন প্রবীণ নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর স্থানীয় কয়েকজন নেতা যেভাবে অপকর্ম শুরু করেছেন, তাতে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এলাকার মানুষ বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে কয়েকটি বারের মালিক, রাজউক মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললেও তারা নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, এগুলো মিডিয়ায় বললে বিপদে পড়তে হবে। তবে বিএনপি নেতাদের উচিত জনগণের পাশে থাকা।

গাড়ি খোয়া যাওয়া প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

অভিযোগ জমা দেওয়া দুলাল আহমেদ বলেন, আমরা অভিযোগগুলো প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দিয়েছি। আশা করছি তদন্ত করে দেখবে সেগুলো সত্য নাকি মিথ্যা। বিএনপির হাইকমান্ডকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছি আমরা।

তবে সবগুলো অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা আজমল হুদা মিঠু। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখানে দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি চাঁদাবাজি, দখলদারি কোনো কাজে জড়িত না। এলাকার কেউ বলতেও পারবেন না।

প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মিঠু বলেন, ‘ওই গাড়িটা আমি কিনেছি। আগেই গাড়িটি কিনেছিলাম। পরে নিয়ে এসেছি।

মদের বার থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কোনো মদের বারে যাইনি। কেউ আমাকে সেখানে যেতে দেখেছেন কি না, খোঁজ নিতে পারেন। তবে হ্যাঁ, আমি বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য। সেখানে নিয়মিত যাই আমি।

এএএইচ/এমএসএম