ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনগেজমেন্টে বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিত

খালিদ হোসেন | প্রকাশিত: ১১:৫৯ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমাদের এখানে নানামুখী থ্রেট আছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য জরুরি বলে মনে করেন জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউজের স্থায়ী সংবাদদাতা, সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভসের নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, ‘একটা স্থায়ী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনগেজমেন্টে বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিত, আরও ওয়ান স্টেপে যাওয়া উচিত।’

প্রায় এক দশক পর গত ১১ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক মুশফিকুল ফজল আনসারী। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই নানা শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানায়।

এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, মানবপাচার, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানান ইস্যুতে সরব মুশফিকুল ফজল আনসারী। বিশ্ব মোড়লদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। ঢাকায় পৌঁছেই ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। গত ২২ সেপ্টেম্বর আবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এরই মধ্যে তার সঙ্গে কথা বলেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খালিদ হোসেন। কথোপকথনের পুরো অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

জাগো নিউজ: দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরেছেন। সরকার পরিবর্তন না হলে কি দেশে ফিরতে পারতেন?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: না, পারতাম না।

জাগো নিউজ: তাহলে আপনার করণীয় কী হতো?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: সরকার পরিবর্তন বলতে আমাদের যে গণঅভ্যুত্থান অর্থাৎ এই যে ফ্যাসিস্ট সরকারের পলায়ন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষ একটা মুক্তির আকাঙ্ক্ষা করেছিল সেই আকাঙ্ক্ষার পথে বাংলাদেশ। ট্রেনটি তার লাইনে উঠেছে। এখনো গন্তব্য পৌঁছায়নি। গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত যা যা করা দরকার, একজন সাংবাদিক হিসেবে তাই করব। নিশ্চয়ই আপনারাও তাই করছেন।

জাগো নিউজ: আপনার সাংবাদিকতা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন এনেছে বা কোন কোন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: প্রথমত হলো যুক্তরাষ্ট্র তার নীতির ক্ষেত্রে নিজেদের পলিসি গ্রহণ করে। কোনো সাংবাদিকের কারণে পরিবর্তন হয় না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের যেটা হচ্ছে অ্যাটেনশন বা দৃষ্টি আকর্ষণ এবং নীতিগুলো সামনে আগানোর ক্ষেত্রে, ধরেন আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন বলে আমি আমার ইন্টারভিউ দিচ্ছি। সম্ভবত, এই ইন্টারভিউয়ের কারণে আমার কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমি যাদের প্রশ্ন করছি, তাদেরও প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। প্রস্তুতি নিতে হয়। নিতে হলে পরে এ বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। তখন একটা কাজ হয়। এ বিষয়গুলো একটা প্রভাব রাখে যে এটা হলো জবাবদিহিতার ক্ষেত্র।

সব দেশেরই সাংবাদিকরা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন দেশে এবং দেশের বাইরে। যুক্তরাষ্ট্রেরও জবাবদিহিতার ব্যাপার আছে। বরং যুক্তরাষ্ট্র এখন একটা বৃহৎ রাষ্ট্র, তাদের জবাবদিহিতা অনেক বেশি। কারণ, তারা সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিন্তু সারা বিশ্বের গণতন্ত্র, মানবাধিকার অনেক অংশে তারা দেখভাল করছে। অন্য বিষয়ে তাদের ভূমিকা আছে। সেজন্য তাদের জবাবদিহিতার ব্যাপার আছে। যেমন জাতিসংঘ একটি ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম, তাদেরও জবাবদিহিতার ব্যাপার আছে। শুধু বাংলাদেশ নিয়ে নয়, বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকরা আপনারা দেখবেন তাদের জবাবদিহিতায় আনতে প্রশ্ন করে। এই প্রশ্নগুলো করার ফলে যেটা হয় তারা যে উত্তরগুলো দেয় তা যেন একটা হোমওয়ার্ক হয়। এই হোমওয়ার্কটা যে কোনো দেশের ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস, রুল অফ ল’, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনগুলোতে কাজ হয়।

জাগো নিউজ: প্রচলিত আছে যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারতীয় লেন্সে দেখে। আপনার কি তাই মনে হয়?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: আমিও তাদের একই প্রশ্ন করেছি, আপনি যে প্রশ্নটা আমাকে করেছেন। সেই প্রশ্নটি আমি যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি মেকারদের করি তোমরা সরাসরি দেখো কি না। তবে, একটা বিষয় হলো ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করে, সেখানে লিডারশিপ তারা ভারতের ওপর দিয়ে রেখেছে। কারণ, এখানে চায়নিজ ব্যাপার আছে। মানে জিও পলিটিক্যাল নিয়ে একটা ইস্যুজ আছে। সেটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা। তবে যেটা হলো, তারা বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের প্রায়ই আশ্বস্ত করে প্রাইভেট এবং পাবলিক লেভেলে।

তারা এনগেজ হয়েছেন বলেই অনেকগুলো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিষয়ে নীতির পরিবর্তন, ভিসানীতি পরিবর্তন করেছেন। তারা র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য অনেক এনগেজ হয়েছেন। অনেক পয়সা খরচ করেছেন। বাজেট দিয়েছেন ইস্টার্ন ট্রেনিং ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশন বিল্ডআপ করতে। অ্যান্টি করাপশন গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নীতিনির্ধারকরা।

জাগো নিউজ: আপনি ইন্দো-প্যাসিফিকের কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিকের কৌশলগত জায়গায় বাংলাদেশের গুরুত্ব কতখানি বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: বাংলাদেশের গুরুত্ব আছে বলেই তারা অনেক বেশি এনগেজ হয়েছেন। এখন এনগেজমেন্ট অনেক বেশি। সেই এনগেজমেন্ট যাতে সরাসরি হয়, ঢাকা-ওয়াশিংটন একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা নিয়ে বিস্তর কাজ রয়েছে। বাংলাদেশকে তারা একটা পার্টনারশিপের আওতায় নিয়েছে। অন অফ দ্য বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র পার্টনার হিসেবে নিয়েছে, অল অফ দ্য লার্জেস্ট ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। অর্থনৈতিক অংশীদার, সামাজিক, পলিটিক্যাল নানান অংশীদারত্ব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রয়েছে।

সুতরাং আমার দেশের গুরুত্ব নানা কারণে। বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে লার্জেস সিঙ্গেল ডেস্টিনেশন। আমাদের জাতীয় যে টোয়েন্টি পার্সেন্ট এফডিআই বা ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট যেটা ২০ শতাংশের মতো। আমাদের টোটাল এক্সপোর্টের ১৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের নানান প্রতিষ্ঠান যেমন আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তাদের যে ইনভলভমেন্ট রয়েছে সুতরাং নানান কারণে বাংলাদেশে তাদের গুরুত্ব আছে এবং এ গুরুত্বটা আরও বেড়েছে এখন।

জাগো নিউজ: ভারতের রাজনীতি এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখছে?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: সেটা যুক্তরাষ্ট্র ভালো জানে।

জাগো নিউজ: আপনার অবজারভেশন কী?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: আমি অবজারভ করতে পারি যে, গত নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র, আমি প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে তারা বলেছে- যেমন আমরা দেখেছি দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ইস্যুগুলো অ্যাড্রেস করতে চাইতো না। কারণ, ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপক ধরনের অবক্ষয় আছে। সেখানে মানবাধিকারের লঙ্ঘন আছে, সেখানে মাইনরিটিদের ওপর নির্যাতনের বিষয় আছে। এগুলোর ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের নির্লিপ্ততা। যেটা আমি অ্যাড্রেস করেছি। তোমরা এটা কেন অ্যাড্রেস করছ না? খুব ব্যাপকভাবে অ্যাড্রেস করেছি, শক্তভাবে।

দৃঢ়ভাবে যুক্তরাষ্ট্র অ্যাড্রেস করেছে গত নির্বাচনের আগে। যার কারণে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং সন্ত্রাসীদের বিষয়ে ঝাড়খণ্ডের যে গভর্নর যাকে নির্বাচনের আগে গ্রেফতার করল। কংগ্রেসের ফান্ড অর্থাৎ অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিল। এসব বিষয়ে যখন প্রশ্ন করেছি, এর উত্তর দেওয়ার কারণে ইউএস অ্যাম্বাসেডর নিউ দিল্লি, তাকে সমন করেছে। এসব বিষয়ে তারা সরাসরি বলেছে, এসব বিষয়ে আমরা ইন্ডিয়ার সাথে অবশ্যই অ্যাড্রেস করি।

তারা হিউম্যান রাইটস ভায়েলেশনের বিষয়ে অ্যাড্রেস করে। তারা মাইনরিটির বিষয়টা কি অ্যাড্রেস করে? কিন্তু এসবের ভেতর দিয়ে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের একটা বিশাল অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের এনগেজমেন্ট। আইসিটি, ইনফরমেশন টেকনোলজি শেয়ারিংসহ নানা বিষয়ে আছে। নানান কারণে ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত যদিও তা আমেরিকান পলিসি তারপরও তারা ইন্ডিয়া থেকে গেছে, তাদের একটা এনভায়রনমেন্ট সব জায়গায়ই আছে। একটা বিশাল রাষ্ট্র, স্বাভাবিকভাবে তাদের একটা ডাইসপ্রা কমিউনিটি আছে এবং যেসব ক্ষেত্রে কন্ট্রিবিউট করার কথা, সে সব পথে তারা অভিন্নভাবে কন্ট্রিবিউট করছে।

সাক্ষাৎকারে মুশফিকুল ফজল আনসারী, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনগেজমেন্টে বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিতসাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাক্ষাৎকার নেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খালিদ হোসেন।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সেভেন সিস্টার নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ভারত কোয়াড আছে, তারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র কোনো মন্তব্যের কারণে কোনো সময় প্রতিক্রিয়া দেখায় না। ইউ ক্যান সে অ্যানিথিং অ্যান্ড এভরিথিং। যুক্তরাষ্ট্র দেখে কী অ্যাক্ট করছে। সেটির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র দেখে সব সময় তাদের যে ডিপ্লোমেসি, তাদের সিকিউরিটি এগুলো কোনো ক্ষেত্রে কোনো হার্ম হচ্ছে কি না। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাক্ট করার বিষয় নয়। সেভেন সিস্টার ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের বিষয়।

জাগো নিউজ: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে যতটা চিন্তিত, কিন্তু সে দেশের মণিপুর রাজ্য বিষয়ে তার মন্তব্য দেখা যাচ্ছে না?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: এটা রাহুল গান্ধীও বলেছেন।

জাগো নিউজ: আপনি কীভাবে দেখেন এবং যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টা কীভাবে দেখছে?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: সেখানে তো একটা কর্তৃত্ববাদের উত্থান হয়েছে। যদিও সর্বশেষ নির্বাচনে ভারত একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্সে এসেছে। প্রাইম মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদী একপ্রকার জবাবদিহিতার মধ্যে এসেছেন। অপজিশন তারা একটা জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পেরেছে। তারা বলে গাটবান্ধন সরকার বা জোটবন্ধন সরকার, জোট সরকার সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগে যেরকম একটা কর্তৃত্ববাদের দিকে যাচ্ছিল, আমরা দেখেছি অনেক ধরনের ইস্যুস সেখানে তৈরি হয়েছে, যেটা আমি শুরুতে বললাম।

আপনি মণিপুরের কথা বলছেন, কীভাবে সেখানে মণিপুর রাজ্যের মানুষদের গুলি করে মারা হচ্ছে। আপনি কাশ্মীরের কথা বলতে পারেন কীভাবে তাদের অধিকার ক্ষরণ করা হচ্ছে। মাইনরিটি মুসলমানদের অর্থাৎ আপনার মনে রাখতে হবে ২০ কোটি সেখানে বাস করে। তাদের কীভাবে একটা মাইনরিটি হিসেবে, ধর্ম চর্চার কারণে কীভাবে তাদের হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়টাকে বিকৃতভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে ভারতে। হ্যাঁ, কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেটা হিন্দু হওয়ার কারণে নয়, সে হয়তো আওয়ামী লীগ করায় তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে বা তারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। অথবা তারা হয়তো আগে আক্রান্ত হয়েছে পরে রিভেঞ্জ গড়েছে। এগুলো কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে এটা ছিল রিভেঞ্জ। তারপরও বিষয়টা সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখতে হবে আমাদের।

যেভাবে ভারতজুড়ে চিত্রায়িত হয়েছে ইন্ডিয়ার রাইট উইং মিডিয়াগুলোতে, এখানে হয়তো সব হিন্দুকে মেরে ফেলা হচ্ছে, মন্দির ভাঙা হচ্ছে। এসব ফ্যাক্ট চেকিংগুলো খুব সুন্দরভাবে করেছে বিবিসি ও এএফপি। কংগ্রেসের নেতা শশী থারুর, উনি কিন্তু তার টুইট পরে চেঞ্জ করেছেন। তিনি পরে বলেন, আমরা এক ধরনের খবর জানছিলাম, এখন সেই খবরগুলো ভিন্নভাবে জানতে পারছি। এটা তো ওপেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনগেজমেন্টে বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিতজাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউজের স্থায়ী সংবাদদাতা মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী।

এ সরকার এটা ভালো কাজ করেছে, যে কারণে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমি সাধুবাদ জানাই। যে কোনো দেশের সাংবাদিক এদেশে আসতে পারবেন। আগের সরকার থাকলে এটা কোনোদিনই সম্ভব ছিল না যে কোনো সাংবাদিক দেশে আসতে পারবেন, বিদেশি সাংবাদিক এসে রিপোর্ট করতে পারবেন, তিনি সরেজমিনে দেখতে পারবেন। দীর্ঘকাল কোনো বিদেশি সাংবাদিককে এদেশে ভিসা দেওয়া হয়নি। তো সেই ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সব সাংবাদিকের জন্য ভিসা উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলের উত্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে দেখেন আপনি?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: রাজনীতি এবং ইসলাম, এ দুটির ধারণা তো আমাদের আছে। কারণ, আমি নিজে একজন প্রাক্টিসিং মুসলিম। আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি রাজনীতি করেছেন শেখ হাসিনা। যখন যে সময় দরকার তখন তিনি পট্টি বেঁধেছেন, হাতে তসবি নিয়েছেন। যখন দরকার নেই, তখন ছুড়ে ফেলেছেন। যখন দরকার তখন তিনি আল্লামা শফীর সঙ্গে চুক্তি করেছেন। তারপর তিনি মদিনা সনদের ওপর দেশ চালাবেন বলে বিভিন্ন কিছু বলেছেন।

কিন্তু দেখেছি তার ভেতরে একটা সেকুলার ভাব প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা ও জঙ্গি কার্ড খেলেছে। এটা নিউইয়র্ক টাইম কলাম লিখেছে, শেখ হাসিনা কীভাবে বিদেশিদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে তারা থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে না। কিন্তু এটাও যে তার একটা অভিনয় তা পুরো দুনিয়া জানে। রিলিজিয়াস পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে এটার কোনো স্থানই নেই। ইন দ্য নেম অফ ইসলাম জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। পৃথিবী কোনো জায়গায় ঠাঁই নেই। মানে যুক্তরাষ্ট্র খুব এনগেজ হয়। এসব বিষয় তারা বোঝার চেষ্টা করে, কতটুকু তারা ডেমোক্রেট, কতটুকু তারা মডারেট, কতটুকু তারা প্র্যাকটিস করছে এসব বিষয়ের ওপর।

জাগো নিউজ: আপনার কাছে জানতে চাই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কোয়াড এবং আকুসের আলাদা প্রয়োজনীয়তা কেন বলে আপনি মনে করেন?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব পলিসি। ধরেন, বিভিন্ন স্মল স্মল গ্রুপে তারা কাজ করে। কারণ এখানে পলিটিক্যাল বিষয় আছে। যেখানে রয়েছে নেটওয়ার্ক প্রয়োজনীয়তা। সেখানে অ্যাট দ্য সেম টাইম তারা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির কারণে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পলিসির সঙ্গে সবাইকে একীভূত করতে চায়। চায়নাকে কামব্যাক করা বা মোকাবিলা করা, অ্যাট দ্য সেম টাইম রাশিয়ার যে আগ্রাসন এই আগ্রাসনগুলো মোকাবিলা করা।

রাশিয়ার তো নানামুখী আগ্রাসন রয়েছে। তারা একদিকে অন্যদের আক্রমণ করছে, অন্যদিকে সাইবার হামলা মোকাবিলা করে। তখন তারা মনে করে তাদের দুই ধরনের অ্যালায়েন্স দরকার। একটা অ্যালায়েন্স, অন্যটা পার্টনারশিপ। তারা যত এনগেজ হতে পারে, তত বেশি বেশি কাজ করতে পারে। আন্তর্জাতিক যে স্বার্থ সেই স্বার্থগুলো এনসিওর করার জন্য আমার মনে হয় তারা প্রয়োজন মনে করে নানা অ্যালায়েন্সের।

জাগো নিউজ: শিগগির বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতার চুক্তি দেখতে পারছেন কি না?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: চুক্তি তো আছেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এ চুক্তি দীর্ঘকাল ধরেই আছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের সিকিউরিটির জন্য এটা খুব জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র যদি নাও চায় বাংলাদেশের জন্য এটা জরুরি। কারণ, আমাদের এখানে নানামুখী থ্রেট আছে। জঙ্গিবাদের উত্থান একটা বিশেষ জায়গা থেকে কিন্তু ইনক্রিজ করা হয়। ওই একই ক্যাম্পেইন একই প্রজেক্ট। আপনি হঠাৎ দেখবেন জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে, আবার হঠাৎ দেখবেন নেই। তো এগুলো কোথাও না কোথাও থেকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় অথবা ইনক্রিজ করা হয়। একটা স্থায়ী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনগেজমেন্টে বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিত, আরও ওয়ান স্টেপে যাওয়া উচিত।

জাগো নিউজ: আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের বিশেষ সুবিধা নিতে পারবে?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথা বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই আকাঙ্ক্ষাকে সাপোর্ট করেছে। মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা এবং এই আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তাকেও সাপোর্ট করেছে। আপনি দেখবেন সেদিনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল এসেছে, হাইলেভেলের ডেলিগেশন দল। ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতো অ্যাসিস্ট্যান্ট তারা সাইন করেছে। আরও সহযোগিতার ক্ষেত্রেও থাকবে। নানান ধরনের এনগেজমেন্ট বাড়বে। তারা একটি এস্টাবিলিটি চায়। সেটি হলে এখানে বিনিয়োগও বাড়বে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। সেটা খুব জরুরি।

জাগো নিউজ: আরাকানের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে প্রথমত সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন চায় তারা। কারণ তাদের জীবন যেখানে হুমকির মুখে, তাদের জীবনহানি হয়েছে, তারা এখানে আশ্রিত হয়েছে। তো আবার তাদের হুমকির মুখে ফেলা যায় না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ইনশিউর না হবে। জাতিসংঘ এটা বলে যে একটা এনভায়রনমেন্ট তৈরি করা, একটা ডায়ালগে যাওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনগেজমেন্টে বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিতজাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউজের স্থায়ী সংবাদদাতা মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী/জাগো নিউজ

আমরা বিগত সরকারের আমলে দেখিনি যে মিনিংফুল কোনো ডায়ালগে তারা গেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনটা সেভ হতে হবে। আপনি তাদের তো আবার গর্তের ভেতরে ফেলে দিতে পারেন না। তারাও তো মানুষ। সুতরাং এ বিষয়টাতে আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কনসার্ন রয়েছে। তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন না হলে যুক্তরাষ্ট্র বলেন, জাতিসংঘ বলেন বা ওয়েস্টার্ন মানবতাবাদী রাষ্ট্র বলেন কেউ এটা সমর্থন করবে না।

জাগো নিউজ: শেষ প্রশ্ন আপনার কাছে, শেখ হাসিনার বিচার বাংলাদেশে হলে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে বা আপনি কি মনে করেন শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হওয়া উচিত?

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: আমি মনে করি এগুলো আন্তর্জাতিক আদালতে হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে কিছু ইফস অ্যান্ড বাটস আছে। যে অপরাধী তার বিচার করতে হবে। কে খুশি হলো এবং কে বেজার হলো এটা কোনো বিষয় নয়। ঘটনা হলো সে অন্যায়কারী কি না, তার ন্যায়বিচার হচ্ছে কি না, জাস্টিস এনসিওর করতে হবে।

এটা দিনের মতো পরিষ্কার শেখ হাসিনা শুট অ্যান্ড সাইট অর্ডার দিয়েছে। দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে। মানুষকে খুন করেছে। সে নিজেই স্টেটমেন্ট দিয়েছে কীভাবে শায়েস্তা করতে হয় আমি জানি। এগুলোই তার জন্য যথেষ্ট। তার অফিসাররাও জানে কীভাবে তার অফিসারদের ব্যবহার করেছে গুলি করার জন্য। সুতরাং এই সাপসেনসিয়াল এভিডেন্সিয়াল ভিত্তিতে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা এটা তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা করতেই হবে। সে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোক আর সাধারণ নাগরিক হোক তাকে তো বিচারের আওতায় আনতেই হবে।

জাগো নিউজ: ব্যস্ততার মধ্যে জাগো নিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী: আপনাকেও ধন্যবাদ।

মুশফিকুল ফজল আনসারী মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক এবং অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম সম্পাদিত বৈদেশিক নীতি ম্যাগাজিন সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভসের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনীতিক প্রতিবেদক ছিলেন। এছাড়া বার্তা সংস্থা ইউএনবিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্ট। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। এনটিভিতে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘হ্যালো এক্সেলেন্সি’ হোস্ট করেছেন, যেখানে রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। তিনি জাস্টনিউজবিডির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন।

কেএইচ/এমএমএআর/জেআইএম