ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রাঙ্গামাটিতে সহিংসতা: তিনদিনে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা

আবু আজাদ | রাঙ্গামাটি থেকে | প্রকাশিত: ১২:০৩ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাঙ্গামাটি শহরটি গড়ে উঠেছে মূলত চারটি বাজারকে কেন্দ্র করে। পাহাড়ের বাসিন্দারা তাদের উৎপাদিত ফসল ও পণ্য এসব বাজারে বিক্রি করে, কিনে নেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য। সাম্প্রতিক সহিংসতার জেরে গত তিনদিন এসব বাজার কার্যত বন্ধই ছিলো। রাঙ্গামাটির অন্যতম ব্যবসাটি হলো পর্যটকদের কেন্দ্র করে। সহিংসতায় ছেদ পড়েছে সেখানেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু গত তিন দিনেই তাদের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই ক্ষতি শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রাঙ্গামাটির প্রাণকেন্দ্র বলা হয় রনরূপা বাজারকে। শুক্রবার সহিংসতা শুরু হয় এই এলাকা থেকেই। সংঘর্ষ চলাকালে দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনরূপা ও আশপাশের ছোটবড় অন্তত ১০০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তছনছ করে দেওয়া হয়েছে কাঁচা বাজারের ৫০টির বেশি অস্থায়ী দোকান।

রাঙ্গামাটিতে সহিংসতা: তিনদিনে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা

বনরূপা বিএম শপিং কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক এম এস জাহান লিটন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বনরূপা বাজারে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বাজারের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ হয়েছে। পাশাপাশি ১৪৪ ধারা জারি ও আতঙ্কে তিনদিন পুরোপুরি অচল ছিলো সবকিছু।’

‘পাহাড়ের বাসিন্দা ও শহরের ব্যবসায়ীরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা খুব নাজুক অবস্থায় আছেন। তিনদিনে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা।’- এম এস জাহান লিটন।

রাঙ্গামাটি শহরের আরেকটি তৃতীয় বৃহৎ বাজার তবলছড়ি। এই বাজারে কোনো হামলার ঘটনা না ঘটলেও গত তিনদিন ধরে প্রায় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। বেচাকেনা ছিলো শূন্যের কোটায়।

তবলছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমদের এখানে ক্রেতা আসার প্রধান মাধ্যম নৌপথ। পাহাড় থেকে কাঁচামাল না আসায় এই বাজারে ব্যবসা বাণিজ্য পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে। শনিবার সাপ্তাহিক বাজারের দিনেও ক্রেতা বিক্রেতা শূন্য ছিলো এই বাজার।’

নিজেদের ক্ষতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজারে দুইশ দোকান রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন একেকটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ২০ হাজার টাকার বেশি। সে হিসেবে ৪০ লাখ টাকা। একইভাবে আমাদের কাছে যারা পণ্য নিয়ে আসেন তাদের ক্ষতিও প্রায় সমান।’

পর্যটন ব্যবসায় ধস, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা:

রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত ৬০টি রুমের সবই বুকিং ছিলো। কিন্তু জাতিগত সংঘাত, অবরোধসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সব ধরনের বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। আবাসন ও রেস্টুরেন্ট খাতে পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় চার লাখ টাকা। সে হিসেবে তিনদিনে তাদের ক্ষতি ১২ লাখ টাকা, যা আগামী ১৫ দিনে অর্ধ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

শুধু পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সেই নয় রাঙ্গামটিতে প্রায় ৫০টি হোটেল মোটেলের অবস্থা একই। এসব হোটেল পর্যটন সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। হোটেল-মোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, দেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাদের ব্যবসায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটিতে জাতিগত সংঘাত রাঙ্গামাটির পর্যর্টন ব্যবসাকে আবারো সংকটে ফেলেছে। বর্তমানে ব্যবসার খরচও উঠে আসছে না।

রাঙ্গামাটির অন্যতম লাক্সারিয়াস হোটেল গ্রান্ড মাস্টার। দৃর্বৃত্তদের হামলায় এই হোটেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রান্ড মাস্টারের স্বত্বাধিকারী শাহিন আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার হোটেলে সিট ক্যাপাসিটি ১০০। এখন অতিথির সংখ্যা শূন্যের কোটায়। তাই লাখ টাকা আয়ের বদলে প্রতিদিন মেনটেইনেন্স বাবদ ২০ হাজার টাকা ক্ষতি গুনতে হচ্ছে।’

রাঙ্গামাটিতে সহিংসতা: তিনদিনে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা

পর্যটক না থাকায় শঙ্কটে রয়েছে শহরে উপজাতীয় বস্ত্র ও কুটির শিল্পের দোকানগুলো। বানানী টেক্সটাইলের ম্যানেজার লাবনি চাকমা বলেন, ‘লাভ তো দূরে থাক বছরের শুরু থেকে কর্মচারীদের বেতন তোলায় দায় হয়েছে। এখন নতুন পরিস্থিতি সেই সংকটকে আরও দীর্ঘ করলো।’

মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত:

রাঙ্গামাটির বনরূপা সমতা ঘাট ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড কাপ্তাই হৃদের হলো বড় দুটি ভাসমান বাজার। পাহাড়ের মৌসুমি ফলের চালানগুলো এখান থেকেই সারাদেশে যায়। সংঘর্ষ ও অবরোধের ট্রাক, মিনিট্রাক না ছাড়ায় বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। ফলে প্রায় দুই কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে বলে জানান তারা।

রোববার বিকেলে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায়, পাহাড়ে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ইঞ্চিনচালিত বোটে করে আনা কলা, জাম্বুরা, পেঁপেসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বোটেই পচে নষ্ট হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি মৌসুমি ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মুরাদ বলেন, ‘রাঙ্গামাটি থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ ট্রাক পণ্য রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করে। গত তিনদিন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায়, বোটের ফল বোটেই নষ্ট হয়েছে। তবে প্রশাসনের সহযোগিতায় রোববার রাত থেকে কিছু গাড়ি রাঙ্গামাটি শহর ছেড়ে গেছে।’

পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি:

সহিংসতার দুইদিন পর গতকাল দুপুরে রাঙ্গামাটি পৌর এলাকায় জারি করা ১৪৪ ধারা দুপুরে প্রত্যাহার করা হয়। ওই দিন বিকেলে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। সোমবার সকালে সীমিত আকারে শহরের অভ্যন্তরে গাড়ি চলছে। তবে দুরপাল্লার গাড়ি ও নৌ পরিবহন এখনো স্বাভাবিক হয়নি। শহরে তবলছড়ি ও রিজার্ভবাজারে দোকানপাট খুললেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি বনরূপা বাজারের পরিস্থিতি।

এএজেড/এমআরএম/জিকেএস