পলকের আমলের প্রকল্প
জনগণ নাকি নির্দিষ্ট ব্যক্তির কল্যাণে, খতিয়ে দেখবে সরকার
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা সাড়ে ১০ বছর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন জুনাইদ আহমেদ পলক। আইসিটি মন্ত্রণালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫টি প্রকল্পে ১ হাজার ৯১২ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রকল্পগুলো দেশের জনগণের কল্যাণে নাকি আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো ব্যক্তির পছন্দে নাকি কোনো ঠিকাদার বা কোনো গোষ্ঠীর কল্যাণে নেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখবে সরকার। প্রয়োজনে বরাদ্দসহ প্রকল্পের সংখ্যাও কমাবে। যদি ব্যক্তিস্বার্থে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় তবে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনাসহ সেই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রকল্পটি যদি মাঝপথ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়, তবু বন্ধ করে দেবে সরকার। এসব প্রকল্পের বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫টি প্রকল্পে ১ হাজার ৯১২ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২টির মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জুনাইদ আহমেদ পলক। তখন তার বয়স ছিল ২৮ বছর। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর গত ১৪ আগস্ট জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
‘ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় দুই হাজার ৫৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫১৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কী কারণে এই বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এই টাকায় কী কী কাজ করা হবে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।
১২ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫টি প্রকল্পে ১ হাজার ৯১২ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি কোষাগারের ১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৭২৮ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১২টির মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে। এই প্রকল্পগুলোর সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখবে আইএমইডি।
- আরও পড়ুন
- ২৮ বছর বয়সে এমপি হয়েছি, ৩৩ বছরে প্রতিমন্ত্রী: পলক
- ১৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কত দুর্নীতি হয়েছে জানতে কমিটি গঠন
- এবার ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ যাওয়ার বায়না
- হাত ধোয়ার জন্য ফের ২০ কোটি টাকা আবদার!
- আ’লীগের মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি, সরকারি জায়গায় উঠছে বাণিজ্যিক ভবন!
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে যেসব প্রকল্প
আইএমইডি সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন, ইনফো সরকার (তৃতীয় পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ৪৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। দুটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
‘যে সব প্রকল্পের প্রয়োজন নেই অথবা জনগণের স্বার্থ থেকে ব্যক্তি স্বার্থ বেশি দেখা হয়েছে সেই সব প্রকল্পের তালিকা করা হবে। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেবো না। এখন আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করছি, আমাদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন এসব প্রকল্প বাদ দিতে আর কোনো বাধা নেই।’-বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন
একই অর্থবছর গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ১৪ কোটি টাকা, ডিজিটাল সিলেট সিটি (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ৮ কোটি ৮৭ লাখ এবং সরকারের ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম শক্তিশালীকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন।
- আরও পড়ুন
- জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অধিক নজর
- ৫৪ লাখ টাকার কম্পিউটার সামগ্রীর মেরামত ব্যয় ৫০ লাখ!
- শুরুই হয়নি ৩৪ বাফার গুদামের নির্মাণকাজ, ব্যয় ৩২২ কোটি
বিজিডি ই-গভ সিআইআরটির সক্ষমতা বৃদ্ধি (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ২৩ কোটি ৫০ লাখ এবং ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে ৩০৪ কোটি টাকা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিজিবি ই-গভ প্রকল্প ২০২৫ সালের ৩০ জুন, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি ২০২৬ সালের ৩০ জুন এবং ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ প্রকল্প চলবে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।
‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। যে সব প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে তা উঠে আসবে, জনগণের কল্যাণ হবে এমন প্রকল্প এডিপিতে রাখতে হবে। কোনো প্রকল্প এডিপিতে রাখার আগে ভাবতে হবে এসব প্রকল্প এডিপিতে রাখার যোগ্যতা রাখে কি না।’-অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন
এর মধ্যে ‘ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় দুই হাজার ৫৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫১৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কী কারণে এই বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এই টাকায় কী কী কাজ করা হবে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। প্রকল্পের আওতায় একটি টাকা খরচ করলেও তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) উল্লেখ থাকতে হয়। অথচ থোক বরাদ্দের ক্ষেত্রে তা উল্লেখ নেই।
নানান কারণ দেখিয়ে এই প্রকল্পের মাঝপথে ছয় কোটি মার্কিন ডলার বা ৭১২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দুই হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল তাদের। ফলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
‘আইসিটি বিভাগের আওতায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনেক প্রকল্প নিয়েছেন। সব প্রকল্পের তথ্য আমরা চেয়েছি। এসব প্রকল্প আমরা খতিয়ে দেখবো, কোথাও সমস্যা ও দুর্নীতি হয়েছে কি না। প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকসহ কিছু অপ্রয়োজনীয় খাতও দেখানো হয়েছে, সেগুলোও দেখবো। এক কথায়, প্রকল্পের সব বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবো।’-অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে যেসব প্রকল্প
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহী (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ৬১ কোটি ৬ লাখ টাকা, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ১২৯ কোটি ২৭ লাখ, বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) ৭০ কোটি, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১টি) (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ৭০ কোটি, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজির প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) ৬৪ কোটি, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১৪টি) প্রকল্পে ৩৪ কোটি, জেলা পর্যায়ে আইটি/হাই-টেক পার্ক স্থাপন (১২টি জেলায়) (প্রথম সংশোধিত) ৩৬৪ কোটি, ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পে ৭০ কোটি ৪৮ লাখ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে প্রথম দুটি প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও জেলা পর্যায়ে আইটি/হাই-টেক পার্ক স্থাপন (১২টি জেলায়) প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
আইসিটি বিভাগ বাস্তবায়ন করছে যেসব প্রকল্প
২০২৩-২৪ অর্থবছরে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি দক্ষতা উন্নয়ন (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ৭ কোটি ৪২ লাখ, দীক্ষা-দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা অনলাইন (দীক্ষা) প্রকল্পে ৭ কোটি ৮৪ লাখ এবং মোবাইল গেইম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে প্রথম দুটি প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং দীক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। মোবাইল গেম প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
- আরও পড়ুন
- ব্যয়-মেয়াদ বাড়িয়েও নির্মাণে ‘ফাঁকি’, ঝুঁকিতে রেলপথ
- ইঁদুরে বেহাল সড়ক বিভাজক, বিটুমিন ব্যবহারেও অবহেলা
আইসিটি অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে যেসব প্রকল্প
২০২৩-২৪ অর্থবছরে হার পাওয়ার প্রকল্প (Her Power Project): প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ১০০ কোটি ৫৭ লাখ এবং ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। হার পাওয়া প্রকল্প ২০২৫ সালের ৩০ জুন ও ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প চলবে ২০২৬ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদপ্তর।
ব্যক্তি ও থানা পর্যায়ে জেলাভিত্তিক আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ ও প্রয়োগ পরিমাপ প্রকল্পে ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৩ সালের ১ অক্টোর থেকে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে সব প্রকল্পের প্রয়োজন নেই অথবা জনগণের স্বার্থ থেকে ব্যক্তি স্বার্থ বেশি দেখা হয়েছে সেই সব প্রকল্পের তালিকা করা হবে। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেবো না। এখন আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করছি, আমাদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন এসব প্রকল্প বাদ দিতে আর কোনো বাধা নেই।’
এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যোগ্যতাসম্পন্ন বা মানুষের কল্যাণের প্রকল্প রাখতে হবে বলে মত দিয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। যে সব প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে তা উঠে আসবে, জনগণের কল্যাণ হবে এমন প্রকল্প এডিপিতে রাখতে হবে। কোনো প্রকল্প এডিপিতে রাখার আগে ভাবতে হবে এসব প্রকল্প এডিপিতে রাখার যোগ্যতা রাখে কি না। যে প্রকল্প এডিপি রাখার যোগ্যতা রাখে না সেই প্রকল্পে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়ার মানে হয় না।’
১৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কত দুর্নীতি হয়েছে জানতে কমিটি গঠন
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে প্রকল্পের নামে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে কী পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি গঠন করা এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমানকে। কমিটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এ বিভাগের অধীন সংস্থা কর্তৃক ২০০৯ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত বাস্তবায়িত এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সামগ্রিক মূল্যায়ন করবে।
কমিটিতে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি থেকে একজন প্রতিনিধি, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ থেকে একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে রয়েছেন। দুর্নীতি অনুসন্ধানে প্রয়োজনে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন প্রতিনিধি নেওয়া হবে। পরবর্তীসময়ে প্রয়োজন হলে অন্য কোনো সংস্থা থেকে আইটি বিশেষজ্ঞ নেওয়া হবে।
সংস্থার চলমান প্রকল্পসমূহের সর্বশেষ হালনাগাদ অগ্রগতি প্রতিবেদন যাচাই করে দেখবে মূল্যায়ন কমিটি। পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এর আওতাধীন সংস্থাসমূহ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে চলমান ২১টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি, অবশিষ্ট কার্যক্রম এবং ওই কার্যক্রম সম্পাদনের অপরিহার্যতা যাচাই করা হবে।
কমিটির প্রথম সভা গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ১০টি বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের উপযুক্ত একজন প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইসিটি বিভাগের আওতায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনেক প্রকল্প নিয়েছেন। সব প্রকল্পের তথ্য আমরা চেয়েছি। এসব প্রকল্প আমরা খতিয়ে দেখবো, কোথাও সমস্যা ও দুর্নীতি হয়েছে কি না। প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকসহ কিছু অপ্রয়োজনীয় খাতও দেখানো হয়েছে, সেগুলোও দেখবো। এক কথায়, প্রকল্পের সব বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবো।’
এমওএস/এমএমএআর/জিকেএস