বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত
কাঠমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন আশরাফুল
বাবার দুই সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকতো। তাকিয়ে থাকতে না পেরে দরিদ্র পরিবারের হাল ধরতে ১৩ বছর বয়সে শুরু করেন কাঠমিস্ত্রির কাজ। চার ভাই-বোনের লেখাপড়া, চিকিৎসা আর সংসার চালানোর ব্যয়, সবকিছুর দায়িত্ব ছিল আশরাফুলের কাঁধে। একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আশরাফুলের মা।
গত ৫ আগস্ট অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনে নামেন হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের জাতুকর্ণপাড়া ডুগিহাটি গ্রামের ১৭ বছর বয়সী এই কিশোর। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে গুলি লেগে মৃত্যু হয় তার।
কি ঘটেছিল সেদিন?
৫ আগস্ট বেলা ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা সাগরদিঘির পশ্চিমপাড় ঈদগাহ মাঠ থেকে মিছিল বের করেন। এরপর গ্যানিংগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ শেষে মিছিল নিয়ে চার থেকে পাঁচ হাজার লোক বড়বাজার শহীদ মিনারে গিয়ে জড়ো হন। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে থানার সামনে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় ঘটনাস্থলে নিহত হন চারজন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন সাংবাদিক ও বানিয়াচং থানার এসআইয়ের মৃত্যু হয়। পরদিন গুলিবিদ্ধ আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয়রা বলছেন, সেদিন নিজের কর্মস্থল থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগ দেন আশরাফুল। আরিফ নামে এক বন্ধু মিছিল থেকে ফেরত আসার অনুরোধ করেছিল তাকে। কিন্তু আশরাফুল ফেরেননি।
- আরও পড়ুন
- ‘আমাকে আর কেউ চাকরি দেবে না, বলবে তোর পা নেই’
- পুলিশ ৬টা গুলি করে, এরপর ৩ তলায় পড়ে যাই
- ‘একটা চাকরি দেন, নইলে পুরো পরিবার না খেয়ে মরবো’
সেদিন আশরাফুলের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে তার দরিদ্র পরিবারে।
জানা গেছে, আশরাফুলের বাবার নাম আব্দুর রউফ ও মা মাহমুদা বেগম। বানিয়াচংয়ের গ্যানিংগঞ্জ বাজারে একটি ফার্নিচারের দোকানে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন আশরাফুল। তাই দিয়ে চলতো সংসার।
আশরাফুলের মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘সেদিন আশরাফুল যাওয়ার সময় কইয়্যা গেছে, রাইতে আমার লাগি লাকড়ি আর জিয়ল মাছ (শিং, মাগুড়) লইয়্যা বাড়িত আইব। এরপরে খবর ফাইলাম পোলা আমার গুলি খাইয়্যা মারা গেছে।’ পাড়ার মানুষ কয়-কেল্লাইগ্যা পোলারে মিছিলে ফাডাইছলায়? আমি তারারে কইয়্যা দিছি-আমার পোলা শহীদ অইছে।’
মাহমুদা বেগম ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও তাকে শহীদের মর্যাদা দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
আশরাফুলের ছোট বোন তৈয়বা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই আমাদের মাথার ওপরে ছায়া ছিল। আমরা তার হত্যার বিচার চাই।’
বানিয়াচং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ডিএইচ রাজু বলেন, আশরাফুলের পরিবার অতিশয় দরিদ্র। সে না থাকায় পুরো পরিবার এখন দিশেহারা। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকার এবং সমাজের বিত্তবানদের প্রতিও আহ্বান জানান এই সমন্বয়ক।
এসএনআর/জিকেএস