ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আ’লীগের মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি, সরকারি জায়গায় উঠছে বাণিজ্যিক ভবন!

ইকবাল হোসেন | প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • দুই বছরের মধ্যে হোটেল নির্মাণের শর্ত থাকলেও কোনো হোটেল নির্মিত হয়নি
  • গণপূর্তের লিজ শর্ত ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন
  • সরকারি পার্কিংয়ের জায়গা লিজ দেন মন্ত্রী, কোটি কোটি টাকা হাতবদল

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার মাস্টারপ্ল্যানে থাকা কার পার্কিংয়ের সরকারি জমি তিন তারকা হোটেল করার জন্য আওয়ামী লীগের এক এমপিকে দেন মন্ত্রী। ২৪ বছর আগে লিজ চুক্তি সম্পাদন করে ওই ঘটনায় প্রায় তিন কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়। মামলা হয় দুর্নীতি দমন কমিশনেও।

২০০০ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই জমি লিজ দেওয়া হলেও শর্ত মোতাবেক গড়ে ওঠেনি তিন তারকা হোটেল। উপরন্তু হাতবদল করে আরেক ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান লিজের জায়গাটি মর্টগেজ দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বাণিজ্যিক ওই ভবনটি মার্কেন্টাইল ব্যাংক দখলে নিয়েছে। বর্তমানে জায়গাটির মূল্য প্রায় ৪৩ কোটি টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১৯৯৯ সালে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার সময় সপ্তম জাতীয় সংসদের নিজ দলের সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের ভাই ফখরুল আনোয়ারকে সরকারি জমি লিজ দেন। রফিকুল আনোয়ার ‘সোনা রফিক’ হিসেবে চট্টগ্রামে পরিচিত।

লিজডিড হওয়ার পর প্লট হস্তান্তর কিংবা ঋণ নেওয়ার বিষয়টি আমাদের অবগত করা হয়নি। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে যখন কথা উঠেছে, সেহেতু লিজের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কি না বা হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে কি না, তা সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।- নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম খান

ওই জমি বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে গণপূর্ত বিভাগের কোনো মতামত পাত্তা দেওয়া হয়নি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেকটা জোর করে নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করেই জায়গাটি তিনি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে দুদকের মামলার পর বিগত ১৬ বছর লিজের শর্ত ভঙ্গ হলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ।

যেভাবে রফিকের পরিবারে আগ্রাবাদের সেই জমি
কার পার্কিংয়ের জমি হস্তান্তরে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া দুদকের মামলার অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহরের মাস্টারপ্ল্যানে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্লট ২২, ২৩, ২৪ এবং ৩৫, ৩৬, ৩৭ এর মধ্যবর্তী ২১/১ নম্বর প্লটে ১ দশমিক ৯০ বিঘা জমি খালি রাখা হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টারপ্ল্যানে ওই স্থানটিতে জনস্বার্থে কার পার্কিংয়ের জন্য ১ দশমিক ৪৪ বিঘা জায়গা রাখা হয়। আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ের আখতারুজ্জামান সেন্টার ও আগ্রাবাদ মোড়ের হোটেল সেন্টমার্টিনের মধ্যকার ওই জায়গাটিতে অত্যাধুনিক বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেতে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন তৎকালীন চট্টগ্রাম-৪ ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের ভাই ফখরুল আনোয়ার।

সে সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। পরের ২৬ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, ‘বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যানজট নিরসনের জন্য আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার প্লট নম্বর ২২, ২৩, ২৪, ৩৫, ৩৬ ও ৩৭ এর মধ্যবর্তী কার পার্কের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি বিক্রয় করা যাবে না। এ স্থানটি ঘেরাও করে অবিলম্বে গণপূর্ত অধিদপ্তর কার পার্ক স্থাপনের ব্যবস্থা নেবে।’ ওই সভায় তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী জানান, ‘কার পার্কের জন্য নির্ধারিত স্থানটিতে কার পার্কিং না করা হলে সুইসাইডাল হবে।’

পরে ১৯৯৯ সালের ১১ মার্চ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এরপর ৬ মে আগের ওই জায়গাটিতে আন্তর্জাতিক মানের তিন তারকা হোটেল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পুনরায় আবেদন করেন ফখরুল আনোয়ার। চট্টগ্রাম মহানগরীর স্টেশন রোড এলাকার হোটেল গোল্ডেন ইন হলো ওই সময়ের সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের নিজ পারিবারিক মালিকানাধীন।

এদিকে ফখরুল আনোয়ারের ওই আবেদনের পর ২৫ মে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভা হয় বলে দুদকের ওই মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। উল্লখ করা হয়, মন্ত্রী তার ওপর ন্যস্ত সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সভার আলোচনায় উল্লেখ করেন, ‘আগ্রাবাদ এলাকায় কার পার্কের জন্য কার্যকর কোনো চাহিদা নেই।’

এসময় মন্ত্রী গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রধান স্থপতিকে বর্ণিত প্লটের নকশা পুনর্বিন্যাস করার নির্দেশ দেন। সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর কমবেশি ১ দশমিক ৪৪ বিঘার প্লটটি হোটেল গোল্ডেন ইনকে তিন তারকা বিশিষ্ট হোটেল নির্মাণের জন্য লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ১৯৯৯ সালের ৯ জুন হোটেল গোল্ডেন ইনকে লিজ বরাদ্দ দেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। লিজ দলিলের প্রথম শর্ত ছিল- ‘বরাদ্দ করা জমি হোটেল নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হবে। এছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে উক্ত জমি ব্যবহার করা যাবে না এবং বরাদ্দ করা প্লটের দখল বুঝে নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে হোটেল নির্মাণ করতে হবে।’

প্লটটি হস্তান্তরে দুর্নীতি
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আলোচিত জমির মূল্য ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৮ টাকা নির্ধারণ করে লিজ গ্রহীতার সঙ্গে লিজ ডিড সম্পাদনের জন্য গণপূর্ত বিভাগ-১ চট্টগ্রামকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে লিজচুক্তি করার আগেই বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করে প্লটটি হস্তান্তরের জন্য ৪ কোটি ৬১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩৭ দশমিক ৩৮ টাকায় মাসুক হকের (শাহীন) সঙ্গে চুক্তি করেন ফখরুল আনোয়ার। ২০০০ সালের ৩০ এপ্রিল ওই চুক্তি হয়।

হোটেল গোল্ডেন ইন চট্টগ্রাম লিমিটেডের পরিবর্তে সানমার হোটেলস লিমিটেড নামে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দপত্র এনে দেবেন বলে ওই চুক্তিপত্রে অঙ্গীকার করেন ফখরুল। ওই দিনই চেকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা অগ্রিম নেন ফখরুল। মাসুক হক চট্টগ্রামের শীর্ষ ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সানমার প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

বিনিয়োগ ছাড়াই প্রায় তিন কোটি টাকা ভাগাভাগি
আদালতে উপস্থাপিত দুদকের অভিযোগপত্র অনুযায়ী, প্লটটি বরাদ্দপত্রে গোল্ডেন ইন হোটেল চট্টগ্রাম নামের পরিবর্তে বরাদ্দ করা জায়গায় সানমার হোটেলস লিমিটেডকে স্থলাভিষিক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ফখরুল আনোয়ার। ২০০০ সালের ১৮ জুন সানমার হোটেলস লিমিটেডের নাম স্থলাভিষিক্ত বিবেচনায় নিয়ে গোল্ডেন ইন চট্টগ্রামের পরিবর্তে আগের বরাদ্দপত্রের ধারাবাহিকতায় সানমার হোটেলস লিমিটেডের সঙ্গে লিজ দলিল সম্পাদনের অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়।

সরকারি লিজ বরাদ্দ করা জমি বিক্রি কিংবা হস্তান্তরের সুযোগ না থাকায় পরিকল্পিতভাবে ফখরুল আনোয়ার সানমার হোটেলস লিমিটেড জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধন করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে ফখরুল আনোয়ার ছাড়াও তার অন্য দুই ভাই রফিকুল আনোয়ার এবং ফরিদুল আনোয়ারকেও শেয়ার হোল্ডার দেখান। তিন ভাই প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ শেয়ারের মালিক হন।

এরপর বরাদ্দ হস্তান্তর চুক্তি অনুসারে মাসুক হক অবশিষ্ট ২ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৮ টাকার মধ্যে অগ্রিম নেওয়া ২০ লাখ টাকা বাদে অবশিষ্ট ২ কোটি ৭২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৮ টাকার বিভিন্ন অংকের এএনজেড গ্রিন্ডলেজ এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ৮টি চেকে ফখরুল আনোয়ারের বড় ভাই ওই সময়ের সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের নামে পরিশোধ করেন।

আ’লীগের মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি, সরকারি জায়গায় উঠছে বাণিজ্যিক ভবন!

এরপর মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্র অনুযায়ী ২০০০ সালের ১৬ অক্টোবর সানমার হোটেলস লিমিটেড নামে লিজচুক্তি সম্পাদন করে গণপূর্ত বিভাগ-১ চট্টগ্রাম। লিজচুক্তি অনুযায়ী ওই জায়গা অন্যের কাছে বিক্রির কোনো সুযোগ না থাকায় মালিকানা হস্তান্তরের কৌশল হিসেবে সানমার হোটেলস লিমিটেডের নামীয় সব শেয়ার মাসুক হক এবং তার স্ত্রী মিসেস শাহেদা হকের নামে ট্রান্সফার করেন। এতে কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই দুই কোটি ৯২ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে নেন দুই ভাইসহ এমপি রফিকুল আনোয়ার।

ওই জায়গার মালিকানা দাবি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের
দুদকের ওই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মাসুক হক শাহীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এতে মাসুক হক বলেন, মেসার্স সানমার হোটেলস লিমিটেডের পুরো শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হয় ৪ কোটি ৬১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩৭ দশমিক ৩৮ টাকা। এর মধ্যে জমির সরকারি মূল্য ও লিজডিড সম্পাদনে রেজিস্ট্রি খরচসহ ১ কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার ৭৮৯ দশমিক ৩৮ টাকা এবং ২ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৮ টাকা সানমার হোটেলস লিমিটেডের মালিকদের পরিশোধ করা হয়। পরে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মাসুক হক ও তার স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করে নেওয়া হয়। এরপর মাসুক হক কোম্পানির সব শেয়ার একইভাবে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মাধ্যমে সিলভিয়া গ্রুপের মালিক মিজানুর রহমান ও মুজিবুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলভিয়া গ্রুপের মালিক দুই ভাই মিজানুর রহমান শাহিন এবং মুজিবুর রহমান মিলন সানমার হোটেলস লিমিটেডের মালিকানা নিয়ে গণপূর্তের সেই প্লট মর্টগেজ দিয়ে ওই স্থানে ১০ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ নেন।

আ’লীগের মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি, সরকারি জায়গায় উঠছে বাণিজ্যিক ভবন! লাল চিহ্নিত সানমার হোটেলস লিমিটেড, মিশকাত আর্কেড, সবুজ চিহ্নিত আখতারুজ্জামান সেন্টার, নীল চিহ্নিত সেন্ট মার্টিন হোটেল, বেগুনি চিহ্নিত হোটেল আগ্রাবাদ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আগ্রাবাদে সিলভিয়া গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সানমার হোটেল লিমিটেডকে অর্থায়ন করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা সুদাসলে ১৭৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে সিলভিয়া গ্রুপের দুই ভাই কানাডা ও সিঙ্গাপুরে পলাতক। অর্থঋণ আদালতে তাদের মামলায় সাজাও হয়েছে। এর পর পাওনা আদায়ে ২১/১ প্লটের ভবনটি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিক্রি হয়নি।

এ বিষয়ে ব্যাংকটির চট্টগ্রাম রিজিওনাল হেড মেসবা উদ্দীন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে কোনো প্রকার বক্তব্য না দেওয়ার জন্য ব্যাংকের হেড অফিস থেকে লিখিত নির্দেশনা রয়েছে। তাই কোনো মন্তব্য করবো না।’

অনুমতি ছাড়া ঋণ কিংবা প্লট হস্তান্তর বৈধ নয়
জায়গাটির মূল মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তরকে অবগত না করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার আইনগত ভিত্তি নেই বলে জানান আইনবিদরা। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, লিজ নেওয়া সেই জায়গায় তিন তারকা হোটেলের পরিবর্তে উঠেছে বাণিজ্যিক ভবন। ওই ভবনের দুই ফ্লোরের একাংশে মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা এবং রিজিওনাল অফিস রয়েছে। ভবনে সাঁটানো পুরোনো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘জমিসহ ভবনটি মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় দায়বদ্ধ। ভবনের নাম- মিশকাত আর্কেড। বন্ধকদাতা সানমার হোটেলস লিমিটেড।’

আ’লীগের মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি, সরকারি জায়গায় উঠছে বাণিজ্যিক ভবন!

গণপূর্ত ডিভিশন-১ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগ্রাবাদ কার পার্কিংয়ের জায়গাটিতে হোটেল করার জন্য লিজ বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনাটি ২০০০ সালের। আমি এই ডিভিশনে নতুন। ওই প্লটের নথি দেখে যা জেনেছি, তা হলো ২০০৭ সালে লিজডিডে কপিসহ আসল অনেক ডকুমেন্ট দুদক নিয়ে যায়।’

‘লিজডিড হওয়ার পর প্লট হস্তান্তর কিংবা ঋণ নেওয়ার বিষয়টি আমাদের অবগত করা হয়নি। তারপরও বিষয়টি নিয়ে যখন কথা উঠেছে, সেহেতু লিজের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কি না বা হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে কি না, তা সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘গণপূর্তের সরকারি জায়গায় হোটেল নির্মাণের কথা বলে লিজ নিয়ে শর্ত অনুযায়ী হোটেল নির্মাণ করা না হলে এমনিতেই লিজচুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। তাছাড়া জমির মালিকপক্ষকে আগে অবগত করা ছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াও আইনসিদ্ধ নয়। এক্ষেত্রে চুক্তি বাতিল করে ওই জমি গণপূর্ত অধিদপ্তর পুনরায় ফেরত নিতে পারবে।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/জেআইএম/এএসএম