ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘আয়নাঘর’ থেকে যেভাবে মুক্তি পেলেন আযমী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দীর্ঘ আট বছর পর কথিত 'আয়নাঘর' থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বন্দিশালা থেকে মুক্তির ঘটনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ‘দেশে যে বিপ্লব হয়েছে সেটি আমি জানতাম না। আগস্টের ৫ তারিখে রাত সাড়ে দশটার সময় এসে আমাকে বলা হলো আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বললাম, আমিতো ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাই যদি দুইটার দিকে আসেন তবে সুবিধা হয়। কয়েকদিন আগেই ডাক্তার দেখে গেছেন, রক্ত পরীক্ষা করলেন। এখন আবার কোথায় নিয়ে যাবেন। পরে আমাকে মুখোশ পরিয়ে আশপাশের আরেকটি রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।’

তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, আট বছর ধরে আপনাদের বলেছি আমার দাঁত ভেঙে গেছে, আমার কানের সমস্যা হচ্ছে। এতদিন আপনাদেরকে বলেছি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, আপনারা নিয়ে যাননা। আর এখন বলছেন হাসপাতালে যেতে হবে এটা কেমন কথা। পরে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, যাচ্ছে, তার শেষ নাই। আমি বললাম ঢাকা শহরের কোনো হাসপাতাল তো এতো দূরে না। আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? কেউ কোনো জবাব দিল না। রাস্তা ভাঙাচোরা। আমি জানতে চাইলাম, ঢাকা শহরের কোনো রাস্তা তো এতো ভাঙাচোরা না। আপনারা কি আমাকে কোনো গ্রামের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন নাকি? তারা কোনো জবাব দিল না। পরে আমাকে আরেকটি বন্দি শালায় নিয়ে গেলো। এখন আমি যেটা অনুমান করতে পারি, রাস্তায় ছাত্রজনতা যেভাবে গাড়ি চেক করছিলো এজন্য তারা আমাকে গ্রামের রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেছেন। পরে তারা বললেন, আপনি এখানে থাকেন। আমি বললাম, আপনারা না আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন এটা কোথায় নিয়ে আসলেন? বলা হলো, আপনাকে পরে জানানো হবে।’

ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘৬ আগস্ট আমাকে একজন জানালেন, আজ আমাকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। একজন বললেন আপনার কাপড়ের সাইজ বলেন। আমি বললাম, আমি তো গার্মেন্টসের কাপড় পরি না, সাইজ বলতে পারবো না। পরে একটা কাপড় নিয়ে আসা হলো। যেটা আপনারা দেখেছেন মুক্তির পরে প্যান্ট-শার্ট। ওটা পরে দেখলাম ঠিক আছে। বাইরে কি হচ্ছে সে খবরই তো নাই আমার কাছে। পরে সোয়া ৯ টার দিকে আমাকে নিয়ে তারা রওনা হলো। পরে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা সড়কের পাশে আমাকে নিয়ে তারা ছেড়ে দিলেন। বলা হলো গাড়ি আসবে গাড়িতে উঠে আপনি চলে যাবেন। তখন রাত পৌনে বারোটা বাজে।’

তিনি বলেন, ‘পরে তারা আমাকে টাকা দিলো। আমি জানতে চাইলাম ঢাকায় যাওয়ার ভাড়া কত? তারা বললেন ঠিক জানি না। জানতে চাইলাম এখানে কত টাকা আছে। তারা বললেন পাঁচ হাজার টাকা। আমি বললাম, আমি আপনাদের টাকার মুখাপেক্ষী নই। এখান থেকে ঢাকার ভাড়া যতটুকু ততটুকু টাকা দেন। তারা বললেন আপনি যা করেন করেন, দান করেন, কিছু টাকা আপনাকে নিতে হবে। তাদের সঙ্গে এক সেকেন্ড কথা বলার আমার রুচি ছিল না। এরপর তারা আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।’

আযমী বলেন, ‘আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলাম না। এরপর দেখলাম একটা গাড়ি আসছে। তখন আমি ঝাপিয়ে পড়ে বাসের মধ্যে উঠি। কিভাবে যে আমি ১০০ মিটারের মতো রাস্তায় দৌঁড়ে বাসে উঠেছি এখনো কল্পনা করতে পারি না। পরে বাসে উঠলাম। আমার স্ত্রী এবং চাচাতো ভাইয়ের ফোন নম্বর আমার মনে ছিল। একজনের থেকে ফোন নিয়ে তাদের ফোন করে বললাম। বাস আমাকে টেকনিক্যাল মোড়ে নামিয়ে দিলো। এরপর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে ৮ তারিখ ভোরে বাসায় পৌঁছালাম। ’

এনএস/এসআইটি/জেআইএম