ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আনসারদের কাজ-দাবি-আন্দোলন: একটি পর্যালোচনা

তৌহিদুজ্জামান তন্ময় | প্রকাশিত: ১২:৫১ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ আধাসামরিক বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬৩ লাখ, যার প্রায় অর্ধেকই নারী। আনসার সদস্যরা জাতীয় দুর্যোগ বা সংকট মুহূর্তে এবং সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে নিরাপত্তামূলক ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের পাশাপাশি রাস্তায় আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা। এতদিন পর কেন হঠাৎ সারাদেশ থেকে ঢাকায় জড়ো হয়ে আন্দোলন- সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন তারা। সবশেষ দাবি মানার পরও সচিবালয় ঘেরাও, হামলার পর আন্দোলনের তৃতীয় কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। হামলায় অংশ নিয়ে গ্রেফতার হয়ে কারা হেফাজতে অনেকে।

আনসার বাহিনী

আনসার বাহিনীতে দুই ধরনের আনসার থাকে- ১. সাধারণ আনসার, ২. অঙ্গীভূত আনসার।

সাধারণ আনসার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে থাকে। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকট মুহূর্তে তারা দায়িত্ব পালন করে। অঙ্গীভূত আনসার কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে সেখানে নিরাপত্তামূলক ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করে।

সারাদেশে অঙ্গীভূত সাধারণ আনসারের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার সদস্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বাকি ১৫ হাজার সদস্য ‘রেস্ট টাইমে’ থাকেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের নতুন চাহিদা পেলে কিংবা আগের কোনো প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত সদস্যদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ‘রেস্টে’ থাকা সদস্যদের পাঠানো হয়। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন দায়িত্বেও পাঠানো হয় ‘রেস্টে’ থাকা সদস্যদের।

আমাদের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু কোনোভাবেই আমরা একত্রিত হতে পারছিলাম না। আগে যতবারই দাবি-দাওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে ততবারই আমাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ আমরা আন্দোলনে যাইনি।–আনসার সদস্য

রেস্টে থাকার অর্থ হলো তার কাজ নেই। কোনো প্রতিষ্ঠানের নতুন চাহিদা পেলে কিংবা আগে দায়িত্বরতদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে রেস্টে থাকা আনসার সদস্যদের কাজের সুযোগ হয়।

আনসার আইনে বলা আছে- একজন আনসার সদস্য টানা তিন বছর কাজ করার পর তাকে ছয় মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়। এটাই ‘রেস্ট টাইম’ প্রথা। তারা ছয় মাস পর আবার কাজে যোগ দিতে পারবে। কিন্তু ওই সময়টা বেতন না হওয়ায় দুর্বিষহ দিন কাটাতে হয় তাদের।

আনসারদের কাজ-দাবি-আন্দোলন: একটি পর্যালোচনা

মূলত আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের প্রধান দুটি দাবি ছিল ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিল ও চাকরি জাতীয়করণ করা। এর মধ্যে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রোববার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘রেস্ট প্রথা’ বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া চাকরি জাতীয়করণসহ আনসার সদস্যদের অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

যেভাবে কাজ করেন আনসার সদস্যরা

সাধারণ আনসার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে থাকেন। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকট মুহূর্তে তারা দায়িত্ব পালন করে। অঙ্গীভূত আনসার কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে সেখানে নিরাপত্তামূলক ও আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করে। আনসার বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তবে প্রশিক্ষণ নিলেই যে চাকরি হবে, সে নিশ্চয়তা নেই। মূলত স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বাহিনীর পক্ষ থেকে একটা কার্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতে সেই কার্ডধারীদের কাজে পাঠানো হয়। তারা তখন দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করেন।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কেপিআই বা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় অঙ্গীভূত হয়ে সেসব স্থানের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালনের এ মেয়াদ হয় একটানা তিন বছর। চুক্তিতে দৈনিক মজুরি ৫৪০ টাকা। বাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জন্য রেশন দেওয়া হয়।

সাধারণ ও অঙ্গীভূত আনসারদের মধ্য থেকে ব্যাটালিয়ন আনসারে নিয়োগ হয়। ব্যাটালিয়ন আনসারদের জন্য রয়েছে আলাদা আইন। তাদের চাকরির নিয়োগ স্থায়ী হয়। যেখানে অন্য আনসারদের চাকরি অস্থায়ী।

অঙ্গীভূত সাধারণ আনসার সদস্যদের দাবি

চাকরি স্থায়ী করার দাবি নিয়েই রাজপথে নামেন সাধারণ ও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৩ দিন পর গত ২১ আগস্ট তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। ২৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনসার সদস্যরা এসে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা সড়ক আটকে দেন। বিক্ষুব্ধদের দাবি, দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে তারা আর কাজ করতে চান না। ‘রেস্টে’ না রেখে তাদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগসাজশে আনসারদের আন্দোলন বলে অভিযোগ তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিকে তারা ‘প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র’ মনে করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, গত ১৫ বছরে বিপুল সংখ্যক আনসার নিয়োগ হয়েছিল, যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক। তারা এখন নতুন সরকারকে বিপদে ফেলতে আন্দোলন করছে।

তাদের দাবি, দেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মুহূর্তে আনসার সদস্যদের আন্দোলন ‘অযৌক্তিক’।

আনসারদের কাজ-দাবি-আন্দোলন: একটি পর্যালোচনা

অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ আনসার সদস্যদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। সেই বৈষম্যের অবসানে এখন চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে তাদের আন্দোলন।

এতদিন পরে কেন আন্দোলন, যা বললেন আন্দোলনরতরা

আন্দোলনরত বেশ কয়েকজন আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলেন, চাকরি জাতীয়করণের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা যেন কেউ সচিবালয়ের গেট না ছাড়ি- এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। চাকরি জাতীয়করণের বিষয়ে লিখিত আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

তাহলে সচিবালয়ের বৈঠকে অংশ নেওয়া সমন্বয়কদের পক্ষে কি কেউ ছিল না? এমন প্রশ্নের জবাবে একজন আনসার সদস্য বলেন, অনেকেই ছিল। তবে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা লেগে গেছে দেখে আমার মতো অনেকেই তখন দলে দলে চলে গেছে।

সংঘর্ষ চলাকালে আনসার সদস্যদের মধ্যে যারা ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিলেন, তাদের অনেকেই ছিলেন ‘রেস্টে থাকা’ আনসার। যাদের চাকরি আছে, তারা চলে আসছে। যাদের চুক্তি শেষ হবে বা রেস্টে আছে, তারা ছিল বলে দাবি করেন সাধারণ আনসার সদস্যরা।

আনসার সদস্যরা দেশের বিমানবন্দরসহ কেপিআইভুক্ত স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। অথচ তারা সেসব স্থাপনা অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে আন্দোলনে এসেছেন। শৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে তারা যে কাজটি করেছেন তার জন্য আনসার বাহিনীর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।- আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ

রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন নিয়ে এক আনসার সদস্য বলেন, যখন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করেছে, তখন তো কারও সমস্যা হয়নি। আনসার সদস্যরা রাস্তায় নামলেই মানুষের এত সমস্যা হয় কেন?

এতদিন দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়া এবং হঠাৎ করে আন্দোলন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য বলেন, আমাদের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু কোনোভাবেই আমরা একত্রিত হতে পারছিলাম না। আগে যতবারই দাবি-দাওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে ততবারই আমাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ আমরা আন্দোলনে যাইনি।

তিনি বলেন, সরকার পতনের পর অনেক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে। তাদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস পায়। এজন্য আমরাও আন্দোলন শুরু করেছিলাম।

দাবি নিয়ে কমিটি, বাহিনীতে বড় রদবদল

চাকরি জাতীয়করণ চেয়ে আন্দোলনে নামা আনসারদের কিছু দাবি যৌক্তিক বলে স্বীকার করে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞিপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিকভাবে কিছু দাবি যৌক্তিক প্রতীয়মান হয়েছে।’ সাধারণ আনসার হিসেবে নতুন কোনো নিয়োগ আপাতত হবে না বলে সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তিন বছর চাকরির পর সাধারণ আনসারদের বিশ্রাম না দিয়ে চাকরি অব্যাহত রাখার বিষয়টিও পরীক্ষার আশ্বাস দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধদের দাবি-দাওয়া খতিয়ে দেখতে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা করে যৌক্তিক সুপারিশ করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। পরে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সেই সুপারিশ পরীক্ষা করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।

যে কারণে সচিবালয় ঘিরে সংঘর্ষ

২৫ আগস্ট দুপুরে আন্দোলনরত আনসাররা সচিবালয়ের বিভিন্ন ফটকে অবস্থান নেন। কয়েক হাজার আনসার সদস্যের অবস্থানের কারণে সচিবালয়ে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারছিল না। আনসার সদস্যরা কয়েকবার বিদ্যুৎ ভবনের পাশের গেট দিয়ে সচিবালয়ে ঢোকার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে যান।

ওই বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আনসার বাহিনীতে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের অন্যসব দাবি পর্যালোচনা করতে একটি কমিটিও হবে।’

আনসারদের কাজ-দাবি-আন্দোলন: একটি পর্যালোচনা

তবে বিক্ষোভরত আনসার সদস্যরা আশ্বাসে আশ্বস্ত না হয়ে এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির দাবি তুলে সচিবালয় অবরোধ করেন। এ অবস্থায় রাত পৌনে ৮টার দিকে সচিবালয়ে পাঁচজন উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আনসার বাহিনীর কয়েকজন প্রতিনিধিও সেখানে যোগ দেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তথ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব, ক্রীড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছিলেন। তবে সচিবালয়ে তখন আরও দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমও ছিলেন। তারা কোন এখতিয়ারে সেখানে ছিলেন, তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।

এর মধ্যে রাত ৯টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন- সবাই রাজুতে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য) আসেন। স্বৈরাচারী শক্তি আনসার হয়ে ফিরে আসতে চাচ্ছে। দাবি মানার পরও আমাদের সবাইকে সচিবালয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

এর পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে উপস্থিত হলে সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়েছিল। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহতও করে। একজন সাংবাদিকও তাদের পিটুনির শিকার হন। পরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেলে আনসার সদস্যরা পাল্টা হামলার শিকার হন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আনসার সদস্যদের সচিবালয় এলাকাছাড়া করেন শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাসদস্যরাও রাতে সেখানে উপস্থিত হন। রাত ১০টার পর সেখানে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হন। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহও রয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর সোমবার সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে থাকা আনসার সদস্যদের ওপর লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

তিন মামলায় আসামি ১০ হাজার আনসার

সচিবালয়ে ভাঙচুর, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও সেনাসদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় সাধারণ আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তিন থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়সহ ১০ হাজার আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৬৯ জন আনসার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আইএসপিআরের বক্তব্য

আনুমানিক ১০ হাজার আনসার সদস্য একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় ঘেরাও করে অন্তর্বর্তী সরকারের সাতজন উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রেখেছিল। দাবি মানার পরও উত্তেজিত আনসার সদস্যরা সচিবালয় এলাকা না ছেড়ে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখে।

উত্তেজিত আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং সচিবালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর টহল দলকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়ছিল। উত্তেজিত আনসাররা নিবৃত্ত না হলে আকাশের দিকে ২৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।

যা বলছেন আনসার কর্মকর্তারা

আনসার বাহিনীর সহকারী পরিচালক (ভিডিপি প্রশিক্ষণ) ও জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতি. দায়িত্ব) মো. রুবেল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অঙ্গীভূত সাধারণ আনসারের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার সদস্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাদের দাবি মেনে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসে প্রতিবেদন দেবে। এরপর সাধারণ আনসারদের সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হবে।’

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, বিশৃঙ্খল আন্দোলনকারীরা অঙ্গীভূত আনসার, যাদের সঙ্গে ব্যাটালিয়ন আনসারের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ। চাকরি জাতীয়করণসহ আনসার সদস্যদের অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে।’

আনসারদের কাজ-দাবি-আন্দোলন: একটি পর্যালোচনা

আন্দোলনে অংশ নেওয়া আনসার সদ্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আনসার সদস্যরা দেশের বিমানবন্দরসহ কেপিআইভুক্ত স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। অথচ তারা সেসব স্থাপনা অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে আন্দোলনে এসেছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করার সুযোগ নেই। ফলে শৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে তারা যে কাজটি করেছে তার জন্য আনসার বাহিনীর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে আনসারদের দাবি যৌক্তিক ছিল উল্লেখ করে আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য কমিটিও গঠন করেছিলাম। কিন্তু তারা সব কিছুর বাইরে গিয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।’

আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয় পাকিস্তান আমলে ১৯৪৮ সালে। এই বাহিনী ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল। একাত্তরে প্রায় ৪০ হাজার রাইফেল নিয়ে আনসার সদস্যরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়।

১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও ১৯৮০ সালে শহর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতার পর গঠিত গ্রাম প্রতিরক্ষা দল ও শহর প্রতিরক্ষা দল পরে আনসার বাহিনীতে একীভূত হয়। নাম হয় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। ১৯৯৫ সালে প্রণীত আনসার বাহিনী আইন এবং ব্যাটালিয়ন আনসার আইন দ্বারা এ বাহিনী পরিচালিত হয়। আইন দুটি হয়েছিল ১৯৯৪ সালে আনসার বিদ্রোহের পর।

টিটি/এএসএ/এএসএম