প্রতিদিন ৪০০০ জনের খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা
কেউ নগদ টাকা তুলছেন, কেউ রাখছেন হিসাব। কেউবা আবার ত্রাণ প্যাকেজিংয়ের কাজ করছেন, কেউ গোছাচ্ছেন বন্যার্ত মানুষকে দেওয়ার কাপড়। অনেকে মিলে সেই ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বন্যা উপদ্রুত এলাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া গাড়িতে। দিনরাত এভাবেই কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। এ চিত্র চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ সংগ্রহের।
প্রথম দুইদিন বন্যার্তদের শুকনো খাবার দেওয়া হলেও গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দেখা যায় রান্না করা খাবার দিতে। গত চারদিন ধরে প্রতিদিন ৪ হাজার মানুষকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে রান্না করা খাবার। পাশাপাশি সুপেয় পানি, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, স্যানিটারি ন্যাপকিন, শিশুখাদ্য এবং বিভিন্ন বয়সীদের কাপড় পৌঁছে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল মাহাথির জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা নগদ অর্থ পেয়েছি ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৮ টাকা। এছাড়া বিপুল পরিমাণ শুকনো খাবার, পানি, ওষুধসহ নানান ধরনের জিনিসপত্র ত্রাণ হিসেবে দিচ্ছে মানুষ। দিনভর ত্রাণ ও নগদ অর্থ সংগ্রহের পর রাতে প্যাকেজিংয়েও অংশ নেন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী। পরে ট্রাকে করে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে দুর্গত এলাকায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনের ত্রাণ প্রতিদিন রাতে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। সেখানে আমাদের ১১টি টিম কাজ করছে। তারা যেমন উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিচ্ছেন, পাশাপাশি সেখানে রান্না করে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বন্যার্তদের। প্রতিদিন খাবার পৌঁছানো হচ্ছে ৪ হাজার মানুষের কাছে। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী।’
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা শুরু হওয়ার পর গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণত্রাণ সংগ্রহের এই উদ্যোগের ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে ত্রাণ সংগ্রহ শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা।
- আরও পড়ুন
- বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১
- সাহসের সঙ্গে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তরুণরা
- ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন
তাদের সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হন। কেউ ব্যক্তিগত আবার কেউ দলগত ত্রাণ নিয়ে আসছেন। বুথে থাকা শিক্ষার্থীরা দাতার নাম ও পণ্যের বিবরণ লিখে রাখছেন খাতায়। পাশাপাশি অনেকে নগদ অর্থ দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সেই অনুদানের অঙ্কও শিক্ষার্থীরা খাতায় লিখে রাখছেন। ত্রাণের পণ্যগুলো ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে জড়ো করছেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর পরিশ্রমের পর রাতে ত্রাণের প্যাকেজিংয়েও অংশ নেন তারা।
প্যাকেজিংয়ে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন দিল আফরোজ দিয়া। জাগো নিউজকে দিয়া বলেন, ‘লড়াই করে অধিকার এনেছি, এখন কাজ করছি দেশ গড়ার জন্য। বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য একদম প্রান্তিক থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সবাই আসছেন। পাশাপশি পুনর্বাসনের জন্য কাপড় ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রী পাচ্ছি। আমি কাজ করছি কাপড় নিয়ে। এখানে শিশু, নারী ও পুরুষদের জন্য বিপুল পরিমাণ কাপড় পেয়েছি আমরা। সেগুলো আলাদা আলাদা করে প্যাকিং করে রাখছি, আমাদের আরেক দল তা পৌঁছে দিচ্ছে।’
ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে নগরীর কাজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অজয় দাসগুপ্ত। জাগো নিউজকে অজয় বলে, ‘দেশের কাজে এভাবে আমরাও অংশ নিতে পারবো তা ভাবিনি। তবে গত দুইদিন এই তৎপরতায় অংশ নিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি দল বোট ও সাম্পান নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়। এরপরই আমরা ত্রাণ সংগ্রহ শুরু করি। নগদ (সরাসরি) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মানুষ আমাদের হাতে তুলে দেন। এখন পর্যন্ত ১৩ ট্রাক ত্রাণ আমরা চট্টগ্রামের মিরসরাই-ফটিকছড়ি, ফেনীসহ বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়েছি।’
এএজেড/কেএসআর/জিকেএস