কেউ অপতৎপরতা চালালে সেটা সামলাতে হবে: জামায়াত আমির
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে চলতি মাসের ৫ তারিখ একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। গতকাল (রোববার) একটা বাহিনীর কিছু লোক গায়ের জোরে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। তিনি এখন আশঙ্ককা মুক্ত। কেউ অপতৎপরতা চালালে সেটা সামলাতে হবে।
সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে আনসার সদস্যদের হামলায় আহত হাসনাত আব্দুল্লাহকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) হাসপাতাল পরিদর্শন করে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি হাসনাতের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া করেন। এসময় এই সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও আসেন।
শফিকুর রহমান বলেন, কয়েকদিন হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, এর মধ্যে সবাই দাবি-দাওয়া নিয়ে বের হয়েছে। তাদের সময় দিতে হবে, কারও উসকানিতে তারা পা দেবে না। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ দায়িত্বশীল বলে মনে করেন জামায়াত এই আমির।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সোমবার সচিবালয়ে যারা আনসারদের ছত্রছায়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। প্রচলিত আইনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচিবালয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারতো। আমাদের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। আনসারের ছদ্মবেশে যারা সচিবালয়ে অবস্থান নিয়েছিল, দাবি আদায়ের উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। এখনো শিক্ষার্থী-জনতা জাগ্রত আছে। এই অশুভ শক্তিদের কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হবে না।
শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আহতদের চিকিৎসা সেবায় অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছে। আহত ছাত্রদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তারা রাত-দিন পরিশ্রম করে চলেছেন।
গতকাল আনসার ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অনেক ছাত্র আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর, তারা কথা বলার অবস্থায় নেই।
তিনি বলেন, এর আগেও আন্দোলনের সময় যারা আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ চোখে আঘাত পেয়েছেন। এমনকি একজনের একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই।
আহতদের সুস্থ করতে হাসপাতালের কর্মী ও নার্সরা সারারাত জেগে কাজ করছেন। এটি একটি গণজাগরণের সময়, যেখানে দেশাত্মবোধের উদ্দীপনায় সবাই আহতদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন। তবে তাদের সামর্থ্যেরও একটা সীমা আছে। আন্দোলনে যারা চোখ বা পা হারিয়েছেন, তাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিতে হবে।
আমাদের অনেক বিদেশি সহযোগী এরই মধ্যে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। তারা বলেছেন, আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করবো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. জেনারেল আসাদুজ্জামান জানান, সচিবালয়ে আনসার ও শিক্ষার্থীর সংঘর্ষে আমাদের এখানে ৬০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্য পাঁচজনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রশাসনিক ব্লকে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এসময় তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেলে প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ৮০০ জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে হাসপাতালে ১০০ জন গুলিবিদ্ধ আহতসহ চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আই সি ইউ) ৯ জন রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আইসিইউতে যারা রয়েছেন তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি করা করবে। অনেক ওষুধ সরকারিভাবে সাপ্লাই হয় না। সেগুলোও আমরা তাদের দিয়ে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছি। ঢামেক হাসপাতালে আহতরা যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পায় সেজন্য তাদের ডেডিকেটেড আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে।
তিনি জানান, সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা হাসপাতালের ভিতরে অযথা ভিড় করবেন না এবং রোগীদের সঙ্গে একজন অ্যাটেনডেন্ট থাকবেন। কেন না আহতরা বিভিন্ন জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আপনারা সবাই সহযোগিতা করবেন।
কাজী আল আমিন/এমআইএইচএস/এমএস