ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

১৬ বছরের কুবিচার দেখতে দেখতে আমরা সুবিচার ভুলে গেছি?

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমের একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টিকারী পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে যাচ্ছেন এবং এই অবদানের মহাকাব্য এখনও রচিত হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এই মন্তব্য করেন তিনি।

ড. জাহিদ হোসেন লেখেন, ‘দানব সরকারের পতন ঘটালেন, সরকার ও পুলিশ বিহীন সময়ে জনসেবা করলেন, জুডিসিয়াল প্রতিবিপ্লব ঠেকালেন, বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেন এবং গত রাতে আনসারদের একটি অংশের হিংস্রতাকে প্রতিহত করলেন। তারা আছেন, তারা থাকবেন। কারণ আন্দোলন এখনও পরিপূর্ণতা পায়নি। বৈষম্য নিরসনের যাত্রা কেবল শুরু। তারা পথভ্রষ্ট হবেন না, এটাই জাতির প্রার্থনা।’

কেউ কেউ ওদের আন্দোলনকে ভুল বুঝছেন এবং বুঝাচ্ছেন উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন লেখেন, ‘একজন সম্মানিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে টক শোতে বলতে শুনলাম, সরকারের দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা হাতে নিয়ে নেওয়া নাকি ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের আচরণের মতো লাগে। ওরাও তো রাস্তায় নেমে পড়ত সরকারি দলের আহ্বানে।’

‘এটা লিয়াকত আলী আর জুতার কালি এক করার মতো’ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি লেখেন, ‘এই শিক্ষার্থীরা কারো আহ্বানে না, বিবেকের তাড়নায় বেরিয়ে পড়ে। ওদের হেলমেট, পিস্তল বা রাম দা কিছুই লাগে না। ছাত্রলীগ বা দল কি সমাজসেবার জন্য তাদের জীবন রক্ত ঘামের বলি দিত? তারা কি অসহায় সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জুলুম করত না? নারী নির্যাতন করতো না? মানুষ মারতো না?’

আরও পড়ুন

‘যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী আর ছাত্রলীগের আচরণের মধ্যে গুণগত আকাশ আর পাতালের তফাত দেখতে পান না, তাদেরকে বিনয়ের সাথে প্রশ্ন: সমাজসেবার জন্য রাস্তায় নামা আর দুর্বৃত্তায়নের জন্য নামাকে এক করেন কীভাবে? আপনাদের বিবেক কি বিদ্রোহ করে না।’

জাহিদ হোসেন লেখেন, ‘ওদের ত্রুটি থাকতে পারে। তাই বলে তাদের অভিপ্রায় ও বিশাল আত্মত্যাগকে খাটো করে দেখাটাকি সুবিচারের সমাধি মনে হয় না? নাকি ১৬ বছরের কুবিচার দেখতে দেখতে আমরা সুবিচার ভুলে গেছি।’

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

চাকরি জাতীয়করণসহ কয়েকটি দাবিতে আনসার সদস্যরা কয়েক দিন ধরে ঢাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। রোববার (২৫ আগস্ট) তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচিবালয় ঘেরাও করে রাখেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান।

ঘেরাও করে রাখায় সচিবালয় থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারছিলেন না। দিনভর রাজধানীতে ছিল ব্যাপক যানজট।

রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই এক ধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা, তা থেকে বের হতে হবে।

আরও পড়ুন

সচিবালয়ে আনসার সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রাখেন। রাতে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

দুই পক্ষের সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্তত ৭০ জন আহত হন। এর মধ্যে পাঁচজন আনসার সদস্য।

এর আগে রোববার বিকেল ৪টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন আনসার সদস্যদের সাত প্রতিনিধি। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, আনসারদের মধ্যে বিশ্রামের যে প্রথা চালু আছে, সেটা থাকবে না। তারা নিয়মিত চাকরি করে যেতে পারবেন।

বিকেলেই আনসারদের দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় আনসার সদস্যদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু বিকেল পাঁচটার দিকে আনসার সদস্যরা কর্মকর্তাদের ভেতরে জিম্মি করে তাদের প্রধান দাবি চাকরি জাতীয়করণ করতে চাপ দেন।

এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৫৫ হাজার আনসার সদস্যের চাকরি জাতীয়করণ করতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে হবে। কত টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। এসব বিশ্লেষণ না করে প্রজ্ঞাপন জারি করা যায় না। সরকারের এসব যুক্তি না মেনে সচিবালয়ের চারপাশ ঘেরাও করে রাখেন আনসার সদস্যরা।

এমএমএআর/এএসএম