ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনায় থাকবে সচিবালয়ের নিরাপত্তা ইস্যু

ইসমাইল হোসাইন রাসেল | প্রকাশিত: ০৯:৩৮ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৪

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সপ্তাহ পার না হতেই নানান দাবিতে উত্তাল হতে শুরু করে রাজধানী ঢাকা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নানান দাবি দাওয়া নিয়ে সড়ক ও প্রশাসনিক জায়গাগুলোতে আন্দোলন করছেন ‘বঞ্চিত’ দাবি করা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের আওতার বাইরে নেই প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। ফলে ভেতরে ও বাইরে এমন আন্দোলনে অনেকটা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে সচিবালয়। বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) আলোচনা হবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে।

সরকারের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত নির্ধারণ হয়ে থাকে সচিবালয় থেকে। রাষ্ট্রের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) একটি সচিবালয়। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এ সচিবালয় থেকে মূলত দেশ পরিচালনা করা হয়। ফলে অন্য যে কোনো অফিস থেকে এখানে নিরাপত্তাও বেশি। সচিবালয়ে ঢুকতে গেলে প্রয়োজন হয় বিশেষ পাসের (অনুমতিপত্র)।

প্রতিদিন অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মানুষ আন্দোলন করছেন সচিবালয়ের সামনে। পুলিশের মাধ্যমে এদের মধ্য থেকে পাঁচজনের প্রতিনিধিদলকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হচ্ছে। এরপরও প্রতিদিনই নতুন করে কেউ না কেউ আসছেন।

বিগত কয়েকদিনের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশত্যাগ ও সরকার পতনের পর ‘পদবঞ্চিত’ অনেকেই সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন, অনেকে করছেন মানববন্ধন। এছাড়াও বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে সচিবালয়ের গেটের বাইরে প্রতিনিদিন অবস্থান নিচ্ছেন অনেকে। তবে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে গতকাল মঙ্গলবার। এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবিতে এদিন দুপুরে সচিবালয়ের সামনে আসেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সচিবালয়ের পূর্ব পাশের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন তারা। এরপর শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা ‘আমাদের দাবি মানতে হবে’, ‘দাবি মোদের একটাই, পরীক্ষা বাতিল’, ‘পরীক্ষা না বিকল্প?, বিকল্প বিকল্প’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তাদের দাবির মুখে পরীক্ষা বাতিল করে সরকার।

প্রশাসনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সচিবালয়ে এভাবে অনুপ্রবেশের ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। নিরাপত্তাহীনতা কথা জানিয়েছেন অনেকেই।

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) একটি অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল করার সিদ্ধান্ত দেন। এখনো সারাদেশে আমরা শান্তিশৃঙ্খলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারিনি। গতকাল প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্থান সচিবালয়ের ভেতরে যেভাবে আন্দোলন হয়েছে সেটি খুবই দুঃখজনক, আগে এমনটা কখনো হয়নি। আমার নিজের মনে হয়েছে যে এই পরিবেশ আমাদের আরও কিছুদিন সামলাতে হবে। এরমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর যে অবস্থা সেখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাবোধ করবে কি না, সেখানেও যদি দুইপক্ষ থাকে তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।’

গত ১৫ বছরে প্রশাসন একরকম দলীয়করণ এবং কুক্ষিগত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একধরনের দোদুল্যমান, অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এখন কিছুটা সময় লাগছে এগুলো সমাধান করতে। গণঅভ্যুত্থানের পরদিন থেকেই আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসন একেবারে সঠিক নিয়মে পরিচালনা শুরু করে- এমন দৃষ্টান্ত কোথাও নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ সময় সচিবালয়ে কর্মরত থাকলেও এমন চিত্র কখনো তিনি দেখেননি। তিনি বলেন, স্লোগান শুনে আমরা টের পাই শব্দটা খুব কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। পরে সিঁড়ির সামনে গিয়ে দেখি শত শত মানুষ সিঁড়ি দিয়ে উঠছে। এসময় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকে তড়িঘড়ি করে অন্য সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়ার চেষ্টাও করেন।

সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের অধিক সময়ের শাসনামলে পদোন্নতি বঞ্চিতরা সচিবালয়ে বিক্ষোভ, মানবন্ধন ও মিছিল করেন। নিজ নিজ দপ্তরের সামনেও অবস্থান নেন অনেকে। সচিবালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে দাবি সম্বলিত ব্যানার। জায়গায় জায়গায় জটলা করে হচ্ছে বৈঠক। তবে বিগত সরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তারা অনেকেই অফিস করছেন না।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন শত শত শিক্ষার্থী/ ছবি- জাগো নিউজ

মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন শত শত শিক্ষার্থী/ ছবি- জাগো নিউজ

মঙ্গলবারের ঘটনার পর সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দর্শনার্থী গেটের ভেতরে অন্যদিন প্রবেশ করে অপেক্ষা করার সুযোগ থাকলেও আজ গেটের বাইরে থেকে পাস দেখিয়ে ঢুকতে হয়। পাস ছাড়া দর্শনার্থী গেটের ভেতরেও যেতে পারেননি কেউ। এদিন সচিবালয়ের ভেতরে দর্শনার্থীদের তেমন আনাগোনা দেখা যায়নি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রতিদিন অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মানুষ আন্দোলন করছেন সচিবালয়ের সামনে। পুলিশের মাধ্যমে এদের মধ্য থেকে পাঁচজনের প্রতিনিধিদলকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হচ্ছে। এরপরও প্রতিদিনই নতুন করে কেউ না কেউ আসছেন। সচিবালয়ের মূল গেটসহ কয়েকটি গেট আটকে তারা অবস্থান নিচ্ছেন। এর ফলে চলাচল বিঘ্ন হওয়াসহ নানান সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সচিবালয়ের ভেতরেও নিয়মিত চলছে মিছিল-মিটিং। এ নিয়ে সচিবালয়ে কর্মরত অনেকের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবারের ঘটনার পর অনেকটাই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে সচিবালয়, এমনটাই দাবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দ্বিতীয় কেবিনেট বৈঠক হবে। এ বৈঠকে সচিবালয়ের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হবে। অভ্যুত্থানের পর একটা সরকার আসতেই কিন্তু তিনদিন সময় লেগেছে। তারপর এসেই কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। গত ১৫ বছরে প্রশাসন একরকম দলীয়করণ এবং কুক্ষিগত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একধরনের দোদুল্যমান, অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এখন কিছুটা সময় লাগছে এগুলো সমাধান করতে। গণঅভ্যুত্থানের পরদিন থেকেই আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসন একেবারে সঠিক নিয়মে পরিচালনা শুরু করে- এমন দৃষ্টান্ত কোথাও নেই। গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনাটা আমরা অবশ্যই বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আলোচনা করবো।

আইএইচআর/কেএসআর/জিকেএস