১৫ আগস্ট
ধানমন্ডি ৩২ সড়কে ৬ ঘণ্টা
সকাল ৭টা। সুনসান ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সড়ক। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ও তার প্রতিকৃতি ঘিরে কাঁটাতারের বেড়া। ভেতরে ফাঁকা। এলাকাজুড়ে নিস্তব্ধতা। কোথাও কেউ নেই। এদিকে, মূল সড়কে অবস্থান নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা।
ধানমন্ডি ২৭ থেকে প্রবেশমুখেই বাধার মুখে পড়েন এই প্রতিবেদক। পরিচয়পত্র দেখে ভেতরে ঢুকতেই দেখা মেলে গত দেড় দশকের পরিচিত চিত্রের বিপরীত কিছু। রাসেল স্কয়ার থেকে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর এবং প্রতিকৃতির দিকে প্রবেশ পথে কাঁটাতারের বেড়া। অপরদিকে, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা থেকেও জাদুঘর ও প্রতিকৃতির দিকে প্রবেশে কাঁটাতারের বেরিকেড। লেকপাড়ের ব্রিজটিতেও যাতায়াত বন্ধ।
শেখ হাসিনা তার বাপের প্রতি শোক জানাতে আসেননি। পালিয়ে গেছেন। ওরা আসে কী করতে? যারা কোটি কোটি টাকা কামাইছে, তারা পালাইছে। আর ৫০০, ১০০০ হাজার টাকার জন্য অন্যরা কেন এখানে আসছে? আসুক, কয়েকদিন পরে। এখন একটা পরিবর্তন হয়েছে, মানুষের ক্ষোভ আছে। এখনই কেন তাদের নামতে হবে?
স্বভাবত, ১৫ আগস্ট সকাল থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শোকের মিছিলের দেখা মিলত। আবাসিক এলাকার দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সিনিয়র নেতারা আসতেন। তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে চলে গেলে রাসেল স্কয়ার প্রবেশ পথটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হতো। রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ফুল দিতো। দিনজুড়ে পুলিশি পাহারায় শোকের কর্মসূচি থাকতো।
তবে, আজ নেই সেই চিরচেনা চাপ ও কোলাহল। পুরো এলাকা শান্ত। রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে ছাত্রজনতা। ভোরে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারো দেখাও মেলেনি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু লোক আসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। দু’একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশায় ফুল নিয়ে আসেন। কালো কোর্ট ও কালো পোশাকে ফুল নিয়ে এসে তারা পড়েন বেকায়দায়। ছাত্রদের জেরার মুখে পড়ে কেউ চড়-থাপ্পড় খেয়ে এলাকা ছাড়েন। কেউ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দিকে যেতে চাইলে মারমুখী ছাত্রদের রোষানলে পড়েন। কয়েকজনকে মারধর করতে দেখা গেছে। এমনকি কয়েকজনের পরনের পোশাকও ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। উৎসুক ছাত্রজনতার ভিড়ে কয়েকজন মারলেও বেশিরভাগকে ঠেকাতেও দেখা গেছে।
সামনে কাঁচা রক্তের গন্ধ ও শোক রেখে, ৫০ বছরের আগের শোক তো বেমানান। তারা যদি শোক পালনই করতো, তাহলে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু তারা তো তা করছে না। তারা চায়, ছাত্রজনতার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। সেটি তো আমরা হতে দিতে পারি না।
সকাল ৯টার পর থেকে পুরো এলাকা চলে যায় ছাত্রজনতার দখলে। যাতায়াতকারীদের সন্দেহ হলেই পরিচয়পত্র চেক করতে দেখা গেছে। পরিচয় দিতে অসম্মত হলে নাজেহাল হতে হয়েছে। অনেকে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে মারও খেয়েছেন।
ছাত্রদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ‘আমরা জেনেছি শোক পালনের নামে স্বৈরাচারী শক্তি আমাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে পরিকল্পনা করেছে। আমরা তাদের সেই অপচেষ্টা নস্যাৎ করতে গত রাতে এবং আজ সকাল থেকেই এখানে অবস্থান নিয়েছি। যে কোনো অপচেষ্টা রুখে দেবো।’
সকাল ১০টার পর সেখানে যুবদলের নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন ও তার অনুসারীদের দেখা গেছে। তবে, ফুটপাতে বসে থাকতে দেখা গেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের। স্কয়ার হাসপাতাল ও শমরিতা হাসপাতালের মাঝামাঝি এলাকায় বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাইফুল আলম নীরব ও বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল এবং তাদের অনুসারীদের নিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করতে দেখা গেছে।
আমরা কাউকে মারছি না। তবে, ছাত্ররা যাদের আটকাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হলে হয়তো চড়-থাপ্পড় দিচ্ছে। উত্তেজিত ছাত্রদের তো থামানো কঠিন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে এখন পালিয়েছেন যে দলের নেত্রী, সে দলের নেতারা কোন আক্কেলে এখানে আসেন। তাদের প্রয়োজন কী?
সকাল থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের প্রবেশমুখের মূল সড়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা কলেজ ও নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র গলায় ঝুলানো শিক্ষার্থীদের দেখা মিলেছে। তারা সেখানে, সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা করছেন। মাঝে মধ্যে পথচারীদের পরিচয় জানতে চাইছেন, কারো মোবাইলও চেক করছেন। গাড়ি থেকে মোবাইলে ভিডিও করলে সেটিও আটকে চেক করছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের বেশি সন্দেহভাজনকে তারা পুলিশে দিয়েছেন।
শোক পালন করতে দিচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামনে কাঁচা রক্তের গন্ধ ও শোক রেখে, ৫০ বছরের আগের শোক তো বেমানান। তারা যদি শোক পালনই করতো, তাহলে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু তারা তো তা করছে না। তারা চায়, ছাত্রজনতার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। সেটি তো আমরা হতে দিতে পারি না।’
বেলা ১১টার দিকে ৫০ থেকে ৬০ জনের পুলিশের একটি টিমকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের মুখে সান্তোর রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ফুটপাতে অবস্থান নেওয়া থানা পর্যায়ের এক জামায়াত নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা আছে এখানে অবস্থানের। ছাত্রদের অর্জন যেন বেহাত না হয়, সেজন্য আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছি।’
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কাউকে মারছি না। তবে, ছাত্ররা যাদের আটকাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হলে হয়তো চড়-থাপ্পড় দিচ্ছে। উত্তেজিত ছাত্রদের তো থামানো কঠিন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে এখন পালিয়েছেন যে দলের নেত্রী, সে দলের নেতারা কোন আক্কেলে এখানে আসেন। তাদের প্রয়োজন কী?
পাশ থেকে এক পথচারী বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার বাপের প্রতি শোক জানাতে আসেননি। পালিয়ে গেছেন। ওরা আসে কী করতে? যারা কোটি কোটি টাকা কামাইছে, তারা পালাইছে। আর ৫০০, ১০০০ হাজার টাকার জন্য অন্যরা কেন এখানে আসছে? আসুক, কয়েকদিন পরে। এখন একটা পরিবর্তন হয়েছে, মানুষের ক্ষোভ আছে। এখনই কেন তাদের নামতে হবে?’
দুপুর ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাসেল স্কয়ারসহ ধানমন্ডির মূল সড়ক শিক্ষার্থীদের দখলে ছিল। ৩২ নম্বর সড়কে তখন নীরবতা চলছিল।
এসইউজে/এসএইচএস/জিকেএস
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ ‘গণঅভ্যুত্থানে আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না, রাষ্ট্র কি ঘুমিয়ে আছে?’
- ২ পর্তুগালে ইউএনএওসি গ্লোবাল ফোরামে অংশ নেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- ৩ এলডিসি দেশগুলোকে ২০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দে সমর্থন চাইলো বাংলাদেশ
- ৪ চট্টগ্রামে বিদেশি পিস্তলসহ ৩ কারবারি গ্রেফতার
- ৫ ৪ ঘণ্টা পর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু