ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:২১ এএম, ১৫ আগস্ট ২০২৪

কিংবদন্তি কিলো ফ্লাইটের কমান্ডার, প্রাক্তন বিমানবাহিনী প্রধান, বীর উত্তম এয়ার ভাইস মার্শাল বীর সুলতান মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী পালন করেছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটের মসজিদে বাদ মাগরিব তার জীবনীর উপর আলোকপাত করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

বুধবার (১৪ আগস্ট) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আইএসপিআর জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ১৯৪৪ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমানে ফেনী) জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম নূরুল হুদা এবং মাতার নাম মরহুমা আনকুরেন্নেছা বেগম। তিনি আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬০ সালে পিএএফ পাবলিক স্কুল, সারগোদা, পাকিস্তান থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৬২ সালে পিএএফ একাডেমি, রিসালপুর, পাকিস্তান থেকে এফএসসি এবং ১৯৭৭ সালে এয়ার স্টাফ কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

তিনি ১৯৬০ সালের ১৯ আগস্ট তদানীন্তন পাকিস্তান বিমানবাহিনী একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ১৯৬২ সালের ১ জুলাই জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন চৌকস বৈমানিক। চাকরিকালীন কর্মকর্তা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন।

বীর উত্তম এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ১৯৭১ সালে দেশপ্রেমের অদম্য চেতনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অর্জন করেন লাল-সবুজের পতাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদের বীরত্বগাঁথা এ মহান ইতিহাসের এক অনুকরণীয় অধ্যায়।

তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অদম্য ইচ্ছায় পাকিস্তান বিমানবাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ২ নম্বর সেক্টরে (মতিনগর ও মেলাঘর) স্থলযুদ্ধে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। একজন বৈমানিক হওয়া সত্ত্বেও স্থলযুদ্ধে তিনি অদম্য সাহসের সঙ্গে রামগড় থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অসংখ্য দুঃসাহসিক অপারেশন পরিচালনা করেন। গেরিলা কমান্ডার হিসেবে তার পরিচালিত বড় একটি অভিযান হলো চট্টগ্রামের মদুনাঘাটে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ধ্বংস ও চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা। এই স্থলযুদ্ধ চলাকালে তিনি ডান হাঁটুতে শত্রুর বুলেটবিদ্ধ হয়েছিলেন।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ সুস্থ হয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে নবগঠিত কিলো ফ্লাইটের অধিনায়কত্ব গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন।

তিনি পাইলট ইন কমান্ড হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে অ্যালুয়েট-ওওও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেল ডিপো ধ্বংস করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম বিমান আক্রমণ অভিযানের সূচনা করেন। তার চৌকষ অধিনায়কত্বে কিলো ফ্লাইট স্বল্প সময়ের মধ্যে মোট ৫০টি দুঃসাহসিক বিমান অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে। তন্মধ্যে তিনি ২৫টি অভিযানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।

আকাশ হতে পরিচালিত এসব অভিযানসমূহ শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের মনোবল দুর্বল করে যা আমাদের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ যুগপৎভাবে স্থলযুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, নবগঠিত বিমানবাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান এবং আকাশযুদ্ধে অকুতোভয় আক্রমণ পরিচালনা করার মাধ্যমে দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।

পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন এবং অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ১৯৮১ সালের ২৩ জুলাই বিমান বাহিনী প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের ২৩ জুলাই বিমান বাহিনীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সরকার এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তার অনন্য সাধারণ ভূমিকা, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকরী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এবং পরবর্তীকালে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে দেশ গঠনে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৮-এ ভূষিত করে।

তিনি ৩৬ বছর ২২ দিন অবসর ভোগের পর ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট আনুমানিক রাত ৮টা ১০ মিনিটে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর ১৪ দিন। তিনি স্ত্রী, ১ কন্যা, ১ পুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি বলেও জানায় আইএসপিআর।

টিটি/এমএইচআর