ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ডিএসসিসি-ডিএনসিসি

আত্মগোপনে ঢাকার দুই সিটি মেয়র-কাউন্সিলররা, ব্যাহত নাগরিক সেবা

মুসা আহমেদ | প্রকাশিত: ০৭:১৬ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২৪

• ৩ আগস্ট গোপনে দেশ ছাড়েন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তাপস
• ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে মেয়র আতিক
• দুই সিটির শতাধিক কাউন্সিলরও আত্মগোপনে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গোপনে দেশ ছাড়েন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর থেকে আত্মগোপনে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। কার্যত অভিভাবক শূন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। নাগরিক সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বাড়ছে ভোগান্তি।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে গেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওয়ামী লীগ সমর্থিত শতাধিক কাউন্সিলর। ফলে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ বিতরণসহ অন্য সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে সক্রিয় বিএনপি ও অন্য দল সমর্থিত কাউন্সিররা।

মেয়র তাপস দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকমতো অফিস করছেন না। ফলে দক্ষিণ সিটি এখন কার্যত অচল।- ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদ ১২৯টি। এর মধ্যে ডিএসসিসিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদ ৭৫টি, ডিএনসিসিতে ৫৪টি। এই পদগুলোর মধ্যে ডিএসসিসিতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর ৬৭ জন, ডিএনসিসিতে ৫১ জন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর অধিকাংশ আওয়ামী লীগসমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দাপ্তরিক কার্যালয়ে হামলা, বাসাবাড়ি ভাঙচুর, বাসা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। ৫ আগস্ট থেকে সোমবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত অধিকাংশ কাউন্সিলর কার্যালয় বন্ধ।

ডিএসসিসি

গত ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে দেশ ছাড়েন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ওইদিন তিনি বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এসময় আলাদা আরেকটি ফ্লাইটে তার পরিবারের সদস্যরা লন্ডনে যান।

আরও পড়ুন

ডিএসসিসির সচিব দপ্তর সূত্র জানায়, মেয়র তাপস দেশ ছাড়ার আগে কাউকে কিছু জানাননি। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারে কোনো চিঠিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়নি। অথচ ওইদিন তিনি পরিবার নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে দেশ ছাড়েন। পরে মেয়র তাপস প্লেনের ভেতর দাঁড়িয়ে আছেন, এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনার দুদিন পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। তখন আত্মগোপনে চলে যান ডিএসসিসির আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররাও। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত মেয়র শেখ তাপস দেশে ফেরেননি। আর কাউন্সিলররাও তাদের কার্যালয়ে যাননি। মোবাইল বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলাও সম্ভব হয়নি। তবে বিএনপিসহ অন্য দলের যেসব কাউন্সিলর ঢাকায় আছেন তারা নিজ নিজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

ডেমরার ডগাইর, বামৈল এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আলাপকালে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেয়র তাপস দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকমতো অফিস করছেন না। ফলে দক্ষিণ সিটি এখন কার্যত অচল।’

তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে অনেক এলাকায় সড়কে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ৫ আগস্টের পর প্রায়ই ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন তা ঠিক করছে না। ফলে ওয়ার্ডের লোকজন আতঙ্কে আছেন।’

সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান। মেয়র মোবাইল ফোনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। শিগগির তিনি নগর ভবনে যাবেন।- ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন

মেয়র-কাউন্সিলরা আত্মগোপনে থাকলে সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম কীভাবে চলছে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ করা যায়নি ডিএসসিসির প্যানেল মেয়র ও সচিবের সঙ্গেও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে ওই দুই কর্মকর্তাও ঠিকমতো অফিস করেন না। প্যানেল মেয়রও আত্মগোপনে আছেন। ফলে ডিএসসিসির সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।’

ডিএনসিসি

ডিএনসিসির সচিব দপ্তর সূত্র জানায়, ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম সবশেষ গত ৪ আগস্ট নগর ভবনে অফিস করেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তিনি আর নগর ভবনে যাননি। অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে করপোরেশনের কাজকর্ম চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। রোববার (১১ আগস্ট) তার দপ্তরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

একইভাবে ডিএনসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজুর রহমান, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাসির, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমানকে তাদের কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি।

সোমবার দুপুর ১২টায় বনানীতে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে ওয়ারিশ সনদ আনতে যান গুলশান-৪১ নম্বর রোডের বাসিন্দা হাসান হাবিব। কিন্তু কার্যালয় তালা দেখে তিনি ফিরে যান। এসময় আলাপকালে হাসান হাবিব জানান, ‘ব্যাংক লোনের জন্য তার ওয়ারিশ সনদ জরুরি। গত এক সপ্তাহ ধরে কাউন্সিলর কার্যালয়ে তালা লাগানো। কাউন্সিলরের ফোন নম্বরও বন্ধ। এখন কী করবো, বুঝতে পারছি না।’

ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা জানান, ডিএনসিসির মোট ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড আছে। এর মধ্যে ৫১ জন কাউন্সিলরই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তারাও আত্মগোপনে চলে যান। আর বিএনপির রাজনীতি করেন দুজন কাউন্সিলর। এর বাইরে জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন একজন কাউন্সিলর।

মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকা ডিএনসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টু জাপার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক কাউন্সিলর পালিয়ে আছেন বলে শুনেছি। তবে আমার ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ বিতরণসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। আমার কাজে কেউ কোনো বাধা দেয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান। মেয়র মোবাইল ফোনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। শিগগির তিনি নগর ভবনে যাবেন।’

এমএমএ/এএসএ/এএসএম