ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই: সুজন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:২১ পিএম, ০১ আগস্ট ২০২৪

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বৈধতা নেই এমন দাবি করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার যে অন্যায় করছে তাদের নৈতিক অন্যান্য অধিকার আর নেই। এই সরকারের আর কোনো অধিকার নেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অচলাবন্থা নিরসনের দাবিতে’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সুজন সম্পাদক বলেন, আমার মনে হয় আমরা সেই দিকে যাবো। আমাদের পরিস্থিতি যেভাবে জটিল হচ্ছে, যদি এটার শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান না হয়, যদি একটা যৌক্তিক সমাধান না হয়, দেশটাকে কারাগারে যে পরিণত করা হয়েছে, খুন-খারাপি হয়েছে এগুলোর বিচার যদি না হয়, তাহলে আমরা সেদিকেই যাবো। ক্রমান্বয়ে আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।

কোন দিকে যাচ্ছে? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই সরকারের তো লেজিটিমেসি (বৈধতা) নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। শুধু তাই নয়, তারা যে অন্যায় করছে তাদের নৈতিক অন্যান্য অধিকার আর নেই। এখন আস্তে আস্তে আমরা সবাই যখন সোচ্চার হবো, আমরা সেদিকেই যাবো।

সেদিকটা কী? সাংবাদিকরা এমন পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আলটিমেটলি এই সরকারের আর কোনো অধিকার নেই তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার। আমরা চাই একটা শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা যৌক্তিক সমাধান এবং এসব অন্যায়ের সবগুলোর বিচার যেন হয়। আমরা চাই একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান আসুক।

এ সময় সুজন সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, এটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। পুলিশি গ্রেফতার দিয়ে না, আইন-আদালত দিয়ে না, এটা ছাত্রলীগ দিয়ে না। রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার তাৎপর্য আমাদের থাকতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যা, সো পলিটিক্যালি এটাকে মোকাবেলা করতে হবে, পলিটিক্যালি সলভ করতে হবে।

আপনারা কী ধরনের সরকার চান? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সকল বিচার হবে, সকল অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটবে এবং আমরা সুন্দর একটা গণতান্ত্রিক আন্তনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাপূর্ণ সেই ধরনের একটা সরকার চাই। গণতান্ত্রিক, জবাবদিহীমূলক সরকার চাই। আমরা কারও পক্ষেও নেই, কারও বিপক্ষেও নেই।

এর আগে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০০৮ সালে তরুণদের ভোটেই আওয়ামী লীগ ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করেছিল। এখন এই তরুণরাই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে চলে গেছে। সরকারি দলের কর্মী না হলে সরকারি বা বেসরকারি চাকরি পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এমনকি ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এ সরকার জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় না আসায় তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এ কারণে তারা বল প্রয়োগ করছে।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, কোটা বৈষম্য দূরীকরণের এ আন্দোলন এখন আর শুধুমাত্র ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীর শিক্ষিকা পুত্রবধূ, সিলেটের শ্রমিক লীগের নেতার সন্তান এ আন্দোলন যুক্ত হয়েছে। এটাকে যদি আমরা গণঅভ্যুত্থান না বলি, তাহলে গণঅভ্যুত্থান কাকে বলবো? এ আন্দোলন রুখতে সরকার হেলিকপ্টার পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। ঘরের মধ্যে থাকা শিশুকে, নারীকে হত্যা করেছে। যার ফলে এ সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে।

তিনি বলেন, এরশাদের সময়ও একসঙ্গে এত মানুষ হত্যা হয়নি। আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বলতাম, তার হাতে ছাত্রের রক্ত। এখন আওয়ামী লীগের হাতেও ছাত্রদের রক্ত। ছাত্রদের কোনো আন্দোলন কখনো বৃথা যায়নি। এ আন্দোলনও বৃথা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বুধবার সাবেক ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে তীর্যক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। কারণ, তিনি মতবিনিময় সভা ডেকে কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে সংবাদ সম্মেলন করেন। যিনি নিজ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংলাপে বসে ডিজঅনেস্টি করেন, তিনি বিরোধী পক্ষের সঙ্গে কিভাবে সংলাপ করবেন!

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়টি আদালতের কাজ নয়। এটি নির্বাহী বিভাগের কাজ। আইনমন্ত্রী জোর করে এটাকে আদালতে নিয়ে গেছেন এবং কালক্ষেপণ করেছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি দিয়ে না, আমরা একটা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই এবং এই নতুন শিক্ষার্থী, নতুন ছাত্র আন্দোলন দিয়ে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের যে সত্যিকারের চেতনা- একটা বৈষম্যবিরোধী, একটা গণতান্ত্রিক, একটা মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ধর্ম নিরোপেক্ষ রাষ্ট্র নির্মাণের যে সনদ আমরা লিখেছিলাম, সেটি আমরা আবারও আমাদের বুকের রক্ত দিয়ে লিখতে চাই।

সুজন সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কোটা বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে সৃষ্ট আন্দোলনের মাধ্যমে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনে সরকারের আন্তরিকতা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, এ আন্দোলনে যে পরিমাণ মানুষ মারা গেছেন, তাকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই। এবার যদি আমরা বিচার না পাই, তাহলে এ দেশ থেকে বিচার শব্দটাই উঠে যাবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকার, শান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখলাম নিরাপত্তার নামে আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে আটকে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা যদি দিতেই হয়, তাহলে বাসায় রেখে নিরাপত্তা দেওয়া হোক। আপনি নিরাপদ বোধ করবেন আপনার মা-বাবার কাছে।

সংবাদ সম্মেলনে অচলাবস্থা নিরসনে ১০টি উপায় তুলে ধরে সুজন। সুজনের পক্ষে এসব উপায় তুলে ধরেন সংগঠনটির সদস্য দিলীপ কুমার সরকার। এর মধ্যে রয়েছে:

>>নিহতদের নাম পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত তালিকা প্রকাশ করা।

>>নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তও হওয়া।

>>ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার, নতুন করে মামলা না দেওয়া এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া।

>>সহিংসতায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা এবং প্রয়োজনের নিরীখে পরিবারের কোনো সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করা। আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

>>শিক্ষার ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাদন-সহ জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কারফিউ তুলে নিয়ে এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে বাকস্বাধীনতা-সহ জনগণের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।

>>পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সিট বাণিজ্য বন্ধ করে যথাযথ নিয়মে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ করা, অছাত্রদের হলে অবস্থান নিষিদ্ধ করা এবং কমনরুম কালচার, র্যাগিং কালচার ইত্যাদি বন্ধ করা। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলের অঙ্গীকার করা। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে সারাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা।

>>গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং স্বাধীন ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা।

>>আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো থেকে বিরত থাকা।

>>গণতান্ত্রিক অধিকারসহ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।

>>রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং সংবিধানকে প্রকৃত অর্থেই অসাম্প্রদায়িক চরিত্রে ফিরিয়ে আনা।

এমএএস/এসএইচএস/জেআইএম