ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

দুই ঈদে বাড়ি আসেনি, লাশ হয়ে ফিরলো মায়ের কাছে

আবু আজাদ | প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৪

‘আমার ছোট ছেলেটাই পরিবারটারে দেখে রাখছিল। মাত্র ১০ বছর বয়সে দৈনিক ৫০ টাকা মজুরিতে চায়ের দোকানে কাজ নিছিল। সেখান থেকে শহরে। টাকা বাঁচাইতে গত দুই ঈদে বাড়িতে আসে নাই। সেই ছেলে লাশ হয়ে ঘরে ফিরছে। এই দুঃখ আমি কেমনে ভুলমু।’

ছেলের শোকে মুমূর্ষু রহিমা বেগম শুধু এ কয়েকটি কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর তার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হচ্ছিল না। মোবাইল ফোনে কানে ভেসে আসছিল শুধুই কান্নার শব্দ।

সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত হন সন্দ্বীপের কিশোর সায়মন (১৪)। সে বহদ্দারহাটে জয় ট্রেডিং নামের একটি মুদি দোকানে কর্মরত ছিল। বুকের মানিককে হারিয়ে তার মা রহিমা বেগম এখন পাগলপ্রায়।

ঘটনার দিন কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, বুকে ও পিঠে দুদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় সায়মনের। শনিবার (২৭ জুলাই) রাত পর্যন্ত অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল সায়মনের মরদেহ। এর আগে তিনদিন খোঁজাখুঁজির পর ২১ জুলাই রাতে দোকানমালিক মিঠু চৌধুরী মর্গে গিয়ে সায়মনের মরদেহ শনাক্ত করেন।

ছেলে ঈদে বাড়ি যায়নি, তাই রহিমা বু (সায়মনের মা) এক সপ্তাহ আগে পিঠা নিয়ে ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন। মা-ছেলের সেটাই শেষ দেখা। গুলি কেড়ে নিলো বুকের ধন একমাত্র ছেলেকে। ছেলের শোকে মা-ও এখন বিছানায় পড়েছেন। নাওয়া-খাওয়া ছেড়েছেন।– সায়মনের খালু মোহাম্মদ সুমন

নিহত কিশোর সায়মনের খালু মোহাম্মদ সুমন জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক বছর আগে সায়মনের বাবা মারা যান। এরপর দুই সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে চলছিল তাদের (রহিমা বেগমের) সংসার। চার বছর আগে বহদ্দারহাটে একটি মুদি দোকানে সায়মনকে কাজে দিয়েছিলাম। সে প্রতি বৃহস্পতিবার আমার ঝাউতলার বাসায় তার খালার কাছে আসতো। ঘটনার দিনও তার আসার কথা ছিল, কিন্তু সে আর আসেনি।

‘ছেলে ঈদে বাড়ি যায়নি, তাই রহিমা বু (সায়মনের মা) এক সপ্তাহ আগে পিঠা নিয়ে ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন। মা-ছেলের সেটাই শেষ দেখা। গুলি কেড়ে নিলো বুকের ধন একমাত্র ছেলেকে। ছেলের শোকে মা-ও এখন বিছানায় পড়েছেন। নাওয়া-খাওয়া ছেড়েছেন। আমরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

নগরীর খতিবের হাট এলাকার একটি বাসায় একসঙ্গে থাকতো সায়মন ও তার সহকর্মী হাসান। কথা হলে ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরুর পর ওইদিন (১৮ জুলাই) দুপুর দুইটায় আমরা দোকান বন্ধ করে দিই। দুজনই বাসায় যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পথে সায়মনকে হারিয়ে ফেলি। সেদিন রাতে সে আর বাসায় ফেরেনি। আমি ভেবেছিলাম সে তার খালার বাসায় চলে গেছে। কিন্তু তিনদিন পর জানতে পারি সে আর নেই।

সংঘর্ষ শুরুর পর দুপুর দুইটায় আমরা দোকান বন্ধ করে দিই। দুজনেরই বাসায় যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পথে সায়মনকে হারিয়ে ফেলি। সেদিন রাতে সে আর বাসায় ফেরেনি। আমি ভেবেছিলাম সে তার খালার বাসায় চলে গেছে। কিন্তু তিনদিন পর জানতে পারি সে আর নেই।– সায়মনের সহকর্মী হাসান

জয় ট্রেডিংয়ের মালিক মিঠু চৌধুরী বলেন, ঘটনার একদিন পর ১৯ জুলাই সায়মন দোকানে না আসায় তার রুমমেট হাসানকে ফোন দেই। হাসান জানায় রাতে সে মেসে ফেরেনি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তার খালার বাসায় গেছে। কিন্তু ঘটনার পরদিন (শুক্রবার) বিকেলে সায়মনের খালা আমাকে ফোন দিয়ে সায়মন কেমন আছে জানতে চায়, তখনই আমি বিপদ আঁচ করতে পারি।

‘শুক্রবার থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্রতিটি ফ্লোরে খোঁজ করতে থাকি, কিন্তু কোথাও তার খোঁজ মেলেনি। শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ মনে হলো, লাশঘরে নেই তো! তখন কর্তব্যরত পুলিশের কাছে জানতে চাইলে, তারা অস্পষ্ট একটা মরদেহের ছবি আমাকে দেখায়। সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি ওটাই আমাদের সায়মন …।’

গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে বহদ্দারহাটে গুলিতে কিশোর সায়মনসহ আরও দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। তারা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র বড়ুয়া (২২) ও নগরীর সরকারি আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর আহমেদ (১৮)।

এএজেড/এমকেআর/জেআইএম