আবেদ আলীর অভ্যাসই ‘অপকর্মে জড়ানো’
বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরই মধ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির দুজন উপ-পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। প্রশ্নফাঁসের ঘটনা সামনে আসার পর থেকে আলোচনায় তার অঢেল সম্পদ, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়।
পিএসসি সূত্র বলছে, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পিএসিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ‘সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার’ পদে লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। সে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
সে সময় আবেদ আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে পিএসসি। তদন্ত শেষে তাকে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেয় কমিটি। সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার’ পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে ২২ এপ্রিল। ওই পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীকে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন। তখন হাতেনাতে ধরা হয় তাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তদন্তে সৈয়দ আবেদ আলীর বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন অনিয়মে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। অপরাধ বিবেচনায় তাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা যেতে পারে। পাশাপাশি আবেদ আলী বিরুদ্ধে বহু বেআইনি কর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত কমিটি মনে করছে, তিনি অভ্যাসগতভাবে অপকর্মে জড়িত।’
চাকরির যোগদানপত্রেও ‘ভুল ঠিকানা’
সৈয়দ আবেদ আলী চাকরিতে যোগদানের সময়ও প্রতারণার আশ্রয় নেন। তিনি নিজের স্থায়ী ঠিকানা গোপন করে ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করেন। স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে তিনি চাকরির যোগদানপত্রে উল্লেখ করেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শ্রীফলতলা গ্রাম। তার বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নেমে এ প্রতারণা ধরেন কমিটির সদস্যরা।
আরও পড়ুন
- গাড়িচালক আবেদের অঢেল সম্পদ, দামি গাড়িতে চড়েন ছেলে
- প্রশ্নফাঁসের সব টাকা খরচ করেছেন আল্লাহর রাস্তায়, দাবি আবেদ আলীর
তার বিরুদ্ধে হওয়া বিভাগীয় মামলার অভিযোগনামা ও বিবরণী স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়। তবে তা ফেরত আসে। সাময়িক বরখাস্তের আদেশটিও ফেরত আসে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে পিএসসিকে জানানো হয়, আবেদ আলীর দেওয়া ঠিকানা সঠিক নয়। এ নামে তার বংশের কেউ সিরাজগঞ্জে নেই। অর্থাৎ, সৈয়দ আবেদ আলী চাকরি নেওয়ার সময় ভুয়া স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করেন। এ ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে আরেকটি বিভাগীয় মামলা হয়। তবে এক মামলায় তিনি স্থায়ী বরখাস্ত হওয়ায় পরের মামলাটির তদন্ত আর এগোয়নি।
পিএসসির কোন চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন আবেদ?
আবেদ আলী ১৯৯৭ সালে চাকরিতে যোগ দিলেও শুরুতেই তিনি পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন না। ২০১২ সালের শেষদিকে তিনি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। সে সময় পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী।
এরপর ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও সাবেক ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ইকরাম আহমেদ। তিনি ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তার সময়েই চাকরি থেকে বরখাস্ত হন গাড়িচালক আবেদ আলী।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আবেদ আলী আমার গাড়িচালক ছিলেন না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারবো না।’
আরেক সাবেক চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘তার (আবেদ আলী) ব্যাপারে আমি বলতে পারবো না। তিনি তো অপকর্মে জড়ানোয় অনেক আগেই বরখাস্ত হয়েছেন। কার মেয়াদকালে আবেদ আলী চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হয়েছিলেন, সেটাও আমার জানা নেই।’
এএএইচ/কেএসআর/এএসএম