সই জাল করে রাস্তা খনন, ঢাকা ওয়াসার মালামাল জব্দ
সই জাল করে রাস্তা খনন করায় ঢাকা ওয়াসার মালামাল জব্দ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সোমবার (৮ জুলাই) ঢাকা ওয়াসার এসব মালামাল জব্দ করা হয়। জব্দ করা মালামালের মধ্যে ২টি জেনারেটর, ১টি ড্রিল মেশিন, ২টি অ্যালুমিনিয়াম বোল, ২টি সাবল, ১টি কোদাল, ১টি এলইডি লাইট ও ৫টি হেলমেট রয়েছে।
সোমবার (৮ জুলাই) ডিএসসিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুমতি না নিয়ে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সই জাল করে রাজধানীর লালবাগের শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ সংলগ্ন রাস্তা খনন করছিল ঢাকা ওয়াসা। বিষয়টি নজরে এলে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খনন করা এলাকায় যান। সেখানে খননকাজে নিয়োজিত লোকজনের কাছে রাস্তা খননের অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তারা অনুমতিপত্রও দেখান! পরে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে খননকাজের অনুমতি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি অনুমতিপত্র দেখতে চান। তখনই বেরিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটির জালিয়াতি!
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দেখেন যে, তার সই জাল করে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভুয়া অনুমতিপত্র দেখিয়ে সেখানে রাস্তা খনন করছিলেন। ততক্ষণে অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে সটকে পড়ে খননকাজে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার কর্মী ও তদারকিতে থাকা লোকজন। পরবর্তীতে এই খননকাজে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
জানা গেছে, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের আওতাধীন লালবাগ খেলার মাঠ (শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ) সংলগ্ন পানির মেইন লাইনে ইলেকট্রনিক প্রেসার রিডিউসিং ভালভ (ই-পিআরডি) স্থাপন কাজের জন্য রাস্তা খননের অনুমতি চায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। করপোরেশনের ওয়ান স্টপ সেল থেকে এই খননকাজের অনুমতি দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল তারিখে করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীরের সই করা একটি অনুমতিপত্র ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাকিম হোসেন বরাবর প্রেরণ করা হয়।
অনুমতিপত্রে ২৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল তারিখের উল্লিখিত রাস্তা খনন করতে হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খননের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল তারিখে ২৩ মে পর্যন্ত খননকাজের মেয়াদবৃদ্ধির জন্য ঢাকা ওয়াসা আবেদন করে যা ৩০ এপ্রিল তারিখে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রাপ্ত হয়।
পরে ঈদুল আজহা ও করপোরেশন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়াদি অবগতপূর্বক এসময় রাস্তা খনন করলে জনভোগান্তির কথা জানিয়ে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও অনুমতি ছাড়া রাস্তা খননের জন্য ঢাকা ওয়াসা থেকে ২ বার উদ্যোগ নেওয়া হলে আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী ২০ মে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খনন করা যাবে না মর্মে পত্র দেয়।
এমতাবস্থায় সোমবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে খবর আসে যে ওয়াসা সেখানে রাস্তা খনন করছে।
জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ৪.৬০ মিটার দৈর্ঘ্য, ২.৭০ মিটার প্রস্থ অর্থাৎ ১২.৪২ বর্গমিটার সড়ক খননের অনুমতি চাওয়া হয় এবং ২১ এপ্রিল তারিখে খননের অনুমতি দেওয়া পত্রে ওয়াসা চাহিত ১২.৪২ বর্গমিটার সড়ক খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোমবার ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তার সই জাল করে এবং অনুমতি না নিয়ে উল্লিখিত সড়কের ২টি স্থানে ১৩.২৯ বর্গমিটার ও ২.৪ বর্গমিটার সড়ক খনন করে। অর্থাৎ অনুমতি চাওয়া হয়েছিল ১টি স্থানে কিন্তু খনন করেছে ২টি স্থানে। এছাড়াও চাহিত অনুমতির বর্গমিটারের সাথে খননকৃত অংশেরও ফারাক রয়েছে।
এ বিষয়ে অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল বলেন, ঢাকা ওয়াসা অনুমতি না নিয়ে লালবাগের শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ সংলগ্ন সড়ক খনন করছিল। এ বিষয়ে অবগত হলে আমাদের কর্মকর্তারা সেখানে যান। আমি তখন নগর ভবনে দাপ্তরিক বৈঠকে ছিলাম। এসময় সেখানে থাকা ঢাকা ওয়াসার লোকজন আমাদের কর্মকর্তাদের আমার স্বাক্ষরিত সড়ক খননের একটি অনুমতিপত্র দেখান। এ বিষয়ে সন্দেহ হলে তারা অনুমতিপত্রটি আমাকে পাঠান। সেটি দেখেই আমি নিশ্চিত হই যে, আমার সই জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের লোকজন সেখান থেকে সরে যায়। এরপর খননকাজে ব্যবহৃত সেসব মালামাল আমরা জব্দ করি। আর যেহেতু আমার সই জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে সেহেতু এ বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে মামলা করা হবে।
এমএমএ/এমআইএইচএস/এএসএম