ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

যেভাবে বাতিল হয়েছিল কোটা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ০৮ জুলাই ২০২৪

শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে নবম ও তদূর্ধ্ব থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) কোটা বাতিল করে সরকার। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ে কোটা বাতিলের সেই পরিপত্র বাতিল বলে জানা যাচ্ছে। তবে শুধু মুক্তিযোদ্ধা নাকি অন্যান্য কোটাও ফিরবে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে সেটি স্পষ্ট নয়।

এ প্রেক্ষাপটে ফের কোটা বাতিলের আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন তারা।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবরের আগে সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের সংরক্ষিত কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেওয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এ ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান ছিল।

যেভাবে বাতিল হয়েছিল কোটা

এই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের শুরু দিকে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে প্রথমে এ আন্দোলন শুরু হয়। পরে সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। ওই বছরের এপ্রিল মাসে আন্দোলন চরম আকার ধরে। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেছিলেন তারা।

২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এরপরের দিনও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটাব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবো।’

কিন্তু এরপর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য অনুযায়ী, কোটা নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ফের সোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। ওই অবস্থায় ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সময় অস্ট্রেলিয়া সফরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে ৭ মে পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু ৭ মের মধ্যে কোটার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনের ডাক দেয় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মারধরের শিকার হন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় আন্দোলনকারীদের। পরিষদের নেতাদের গ্রেফতারও করে পুলিশ।

পরে ১০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তখনকার সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের জানান, কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে এই কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে কোটার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

যেভাবে বাতিল হয়েছিল কোটা

পরে ওই বছরের ২ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব, সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব। পরে কমিটির মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়।

আরও পড়ুন:

সব ধরনের কোটা উঠিয়ে দিয়ে সুপারিশ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছেন বলে ১৩ আগস্ট সাংবাদিকদের জানান কোটা পর্যালোচনা কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।

পরে ৩ অক্টোবর পর্যালোচনা কমিটির দেওয়া বেতন কাঠামোর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি) পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

এরপর সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলন করেন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা।

মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চের পরিপত্রের কোটা পদ্ধতি নিম্নোক্তভাবে সংশোধন করেছে। নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।

এরপর ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি নন-ক্যাডার ৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বণ্টন পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। কোটা বাতিলের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের স্পষ্টীকরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) প্রস্তাব পাঠালে সেই প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এ প্রস্তাব অনুযায়ী নন-ক্যাডার ৮ম ও এর উপরের গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিল ঘোষণা করা হয়। কারণ পিএসসি ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড ছাড়াও ৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের কোনো কোনো পদে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে। পরিপত্রে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা ছিল না। তাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ‘৯ম গ্রেড’ এর স্থলে ‘৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেড’ উল্লেখ করে পরিপত্রটির সংশোধন করা হয়।

আরএমএম/এসএনআর/জেআইএম